কাশ্মীরের রক্ষা করেন মা ক্ষীর ভবানী, স্বয়ং বজরংবলী করেছিলেন এই দেবী মূর্তির স্থাপনা

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ভারতে এরকম অনেক মন্দির আছে, যেগুলো চমৎকার আর আস্থার জন্য বিখ্যাত। এই মন্দিরগুলির সাথে সম্পর্কিত প্রাচীন গল্পগুলিও আকর্ষণীয় এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে জড়িত, আজ আপনাকে কাশ্মীরের (Kashmir) ক্ষীর ভবানী (Kheer Bhawani) মন্দিরের গৌরব সম্পর্কে বলি যেখানে মা দুর্গা ক্ষীর ভবানীর নামে বিরাজমান আছেন। এর সাথে সাথে আপনাদের এও জানাবো যে, কীভাবে অনিষ্ট থেকে মা দুর্গা এখানকার মানুষদের সঙ্কেত দেন।

Kheer Bhawani 1

কাশ্মীরের গান্দরবলে মা ক্ষীর ভবানির প্রাচীন মন্দির অবস্থিত। এই মন্দির কাশ্মীর পণ্ডিতদের আস্থার সবথেকে বড় প্রতীক। এই মন্দিরের সাথে শুধু ওনাদের আস্থা জড়িত না, ওনাদের পরম্পরাও জড়িত আছে। ক্ষীর ভবানি, মা রাখা মাতা, রাগ্যনা দেবী, আরাধনা দেবীর মতো অনেক নামেই এই মা পরিচিত। কিন্তু যেই একটি নামের সাথে গোটা কাশ্মীরের পরিচিতি জড়িয়ে, সেটি হল দেবী ক্ষীর ভবানি।

Kheer Bhawani 1880

ক্ষীর ভবানি মন্দির শ্রীনগর থেকে প্রা ২৭ কিমি দূরে মুল্লা গ্রামে অবস্থিত। এই মন্দিরের চারিদিক উঁচু ও সরু গাছ বিশেষ ও নদীর ধারা দিয়ে ঘেরা। আর এটিই মন্দিরের অপ্রুপ সৌন্দর্য বয়ান করে। এখানে প্রচুর পরিমাণে ভক্তদের সমাগম হয়। এমন কথাও প্রচলিত আছে যে, এই মন্দিরে এসে মায়ের দর্শন করলে ভক্তদের সমস্ত মনস্কামনা পূর্ণ হয়।

Kheer Bhawani Temple in Srinagar Akshey25 wikipedia

এই মন্দিরের সাথে বহু পৌরাণিক বিশ্বাস যুক্ত রয়েছে। এখানে আসা ভক্তরা, খালি পায়ে হেঁটে এসে মায়ের দর্শন করেন। পুরুষ ভক্তরা মন্দিরের পাশেই নদীতে স্নান করেন। ভক্তরা মন্দিরের জলকুণ্ডে ক্ষীর উৎসর্গ করেন। এরপর সেই ক্ষীর গুলোকেই প্রসাদ রুপে ভক্তদের হাতে দেওয়া হয়। মা ক্ষীর ভবানীকে স্থানীয়রা কাশ্মীরের দেবী নামেও ডাকেন।

kheer bhawani copy

শোনা যায় যে, ক্ষীর ভবানী মন্দিরের চীনে বয়ে যাওয়া জলের রঙ উপত্যকার কল্যাণের সঙ্কেত দেয়। যদি এর জল কালো হয়ে যায়, তাহলে উপত্যকার মানুষের জন্য সেটিকে অশুভ মানা হয়। কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে মন্দিরের জলকুণ্ডের জল কালো হয়ে যায়। তখনই সবাই সজাগ হয়ে যান।

ক্ষীর ভবানি মন্দিরে প্রতি বছর ঐতিহ্যবাহী মেলার আয়োজন হয়। এখানে অনুষ্ঠিত মেলাটি পারম্পরিক শ্রদ্ধা ও আনন্দের প্রতীক। একে বলা হয় খীর ভবানী মেলা যেখানে দর্শনার্থীরা ধর্মীয় মন্ত্র জপ করার মাঝে মন্দিরে যান এবং দেবীর দর্শন করেন।

শোনা যায় যে, ক্ষীর ভবানী মন্দিরের স্থাপনা কাশ্মীরে রাম ভক্ত হনুমান জি করেছিলেন। মন্দির স্থাপনার একটি পোরাণিক কথাও প্রচলিত আছে। জনপ্রিয় বিশ্বাস অনুসারে, রামায়ণ আমলে রাবণ ছিলেন মায়ের সর্বোচ্চ ভক্ত। তিনি তাঁর জপ ও তপস্যা দ্বারা দেবীকে সন্তুষ্ট করেছিলেন। কিন্তু ধীরে ধীরে রাবণের অভিমান বাড়তে থাকে এবং সে দুষ্ট হয়ে যায়।

যখন রাবণ মা সীতার অপহরণ করেছিলেন, তখন দেবী ক্ষোভে ফেটে পড়েন আর নিজের স্থান ছেড়ে দেন। এরপর পবন পুত্র হনুমানকে নিজের মূর্তিকে লঙ্কা থেকে অনেক দূরে নিয়ে যেতে বলেন তিনি। তখন দেবীর আজ্ঞা পালন করে হনুমান মায়ের মূর্তি এখানে স্থাপনা করেন।

১৯১২ সালে মহারাজা প্রতাপ সিং দ্বারা হিন্দু দেবীদের মন্দিরের পুননির্মাণ মহারাজা হরি সিং করিয়েছিলেন। সেই বছরেরও ১০ ই জুন জ্যৈষ্ঠ অষ্টমীতে ক্ষীর ভবানীর মেলার আয়োজন হয়েছিল, তখনও প্রচুর ভক্ত মায়ের আশীর্বাদ নিতে আর ওনার দর্শন করতে সেখানে গিয়েছিলেন।


Koushik Dutta

সম্পর্কিত খবর