বাংলাহান্ট ডেস্ক: ডোকলাম নিয়ে চিনের সঙ্গে ভারতের বিবাদের মাঝে ভূটানের (Bhutan) বক্তব্য নিয়ে চর্চা চলছে। তারা কি ক্রমেই চিনের দিকে ঝুঁকে পড়ছে? সম্প্রতি একটি বেলজিয়ান সংবাদপত্রকে দেওয়া প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিংয়ের বক্তব্যে চিন্তা বেড়েছে ভারতের। আনুষ্ঠানিক ভাবে এ বিষয়ে কোনওন প্রতিক্রিয়া দেয়নি ভারত। কিন্তু কূটনীতিকদের দাবি, চিনের চাপ সহ্য করতে পারছে না ভূটান। এই উত্তপ্ত আবহের মধ্যে চলুন জেনে নেওয়া যাক ভূটান সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য।
ভূটান এমন এক দেশ যেখানে নাগরিকদের বাড়ি দেয় সরকার। একইসঙ্গে গ্যারান্টিও দেওয়া হয় যে সেখানে কেউ অভুক্ত থাকবে না। এইও দেশে কোনও ভিক্ষুক বা গৃহহীনের দেখা মেলে না। এখানে প্রত্যেকেরই নিজস্ব বাড়ি আছে। সাধারণত এখানকার মানুষ সুখী জীবনযাপন করে। এখানে নাগরিকরা বিনামূল্যে চিকিৎসা করাতে পারেন। ওষুধের খরচ বহন করে সরকার। দীর্ঘদিন ধরে ভূটানে ইন্টারনেট ও টিভি পরিষেবা নিষিদ্ধ ছিল।
তাঁদের মতে, ইন্টারনেট ও টিভির মাধ্যমে দেশে বিদেশী সংস্কৃতি প্রবেশ করবে এবং স্থানীয়দের জীবনে ভুল প্রভাব ফেলবে। ভূটান হল বিশ্বের সবচেয়ে শেষ দেশ যারা টেলিভিশন ব্যবহার করা শুরু করেছিল। অভ্যন্তরীণ শান্তি রক্ষার জন্য ২০০৮ সালে গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস কমিটি গঠন করে তারা। এখানে জনসংখ্যা শুমারি প্রশ্নাবলীতে একটি জায়গায় আপনি বলতে পারবেন আপনি জীবনে সন্তুষ্ট কি না। এখানে একটি সুখী মন্ত্রক রয়েছে।
ভূটানে কেউ গৃহহীন অবস্থায় থাকেন না। কেউ কোনও কারণে বাড়ি হারালে তাঁকে রাজার কাছে যেতে হয়। রাজা তাঁকে এক টুকরো জমি দেন যেখানে তিনি বাড়ি তৈরি করতে পারেন। একইসঙ্গে সবজি লাগাতে পারেন। ভূটানিরা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে। এখানে পুরুষরা ভারী, হাঁটু পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের পোশাক পরেন। মহিলারা পরেন লম্বা পোশাক। একজন ব্যক্তির মর্যাদা ও সামাজিক অবস্থান নির্ধারণ করা হয় তাঁর বাম কাঁধের উপর দোপাট্টার রঙ দেখে। সাধারণ মানুষ পরেন সাদা স্কার্ফ এবং অভিজাত ব্যক্তিরা পরেন হলুদ বস্ত্র।
ভূটান দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্ন দেশ ছিল। ১৯৭০ সালে প্রথমবারের জন্য একজন বিদেশী পর্যটককে এখানে আসতে দেওয়া হয়েছিল। এখনও এখানে বিদেশী প্রভাবের উপর কড়া নজর রাখা হয়। তবে এখন অনেক পরিবর্তন হয়েছে ভূটানে। রাজধানী থিম্পুতে স্মার্টফোন এবং কারাওকে বার সাধারণ ব্যাপার। এখানে জনসংখ্যার মধ্যে যুব সমাজ বেশি। তাই তাঁরা এখন সোশ্যাল মিডিয়াকে গ্রহণ করেছে। একইসঙ্গে ফ্যাশন এবং রাজনীতি নিয়েও খোলামেলা আলোচনা হয়।
পরিবেশের দিক দিয়ে শীর্ষে রয়েছে ভূটান। ১৯৯৯ সাল থেকেই এখানে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিষিদ্ধ। তামাক প্রায় সম্পূর্ণ অবৈধ। আইন অনুসারে, দেশের ৬০ শতাংশ জায়গাকে বনভূমি হতে হবে। দেশটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অকল্পনীয় সুন্দর হওয়া সত্ত্বেও এখানে ইচ্ছাকৃতভাবে পর্যটনকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ২০১৫ সালে ভুটান একটি বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিল যখন মানুষ মাত্র এক ঘন্টায় ৫০ হাজার গাছ রোপণ করেছিলেন। ভূটান প্রধানত বিদ্যুৎ রফতানি করে। ভারতকে জলবিদ্যুৎ বিক্রি করে তারা। এছাড়াও কাঠ, সিমেন্ট, কৃষিপণ্য এবং হস্তশিল্পও রফতানি করে তারা।
ভূটানের সেনাবাহিনী থাকলেও কোনও নৌবাহিনী নেই। তাদের কোনও বিমানবাহিনীও নেই। ভারতই ওই এলাকায় তাদের দেখভাল করে। এই দেশের অধিকাংশ মানুষ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। এখানে নিরামিষ ভোজন সাধারণ ব্যাপার। এখানে প্রধান খাবার ভাত। কিন্তু ওই উচ্চতায় সাধারণ চালের উৎপাদন সম্ভব নয়। তাই এখানে লাল চাল খাওয়া হয়। ভূটানে নারীদের সম্মান দেওয়া হয়। উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে তাঁরা বঞ্চিত নন। এখানে সমস্ত সম্পত্তি পান বাড়ির বড় মেয়ে। ছেলেদের দেওয়া হয় না।
ভূটানে কোনও বিদেশীকে বিয়ে করা নিষিদ্ধ। ভারত ও ভূটানের মধ্যে এমন অনেক দম্পতি রয়েছেন যাঁরা প্রেম করে বিয়ে করেছেন। তবে তাঁদের ভূটানে থাকার অধিকার নেই। যদিও এখানকার রাজার ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়। রাজা জিগমে খেসার নামগেল ওয়াংচুক দেশে পরিবর্তন এনেছেন। রানী জেটসুন পেমা অত্যন্ত জনপ্রিয় সেখানে। দেশে রাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রের মিশ্র রূপ রয়েছে। ভূটানের প্রথম সাধারণ নির্বাচন হয়েছিল ২০০৮ সালে। এতে মাত্র দুটি দল অংশ নেয় এবং রাজতন্ত্রের অন্তর্গত ভুটান পিস অ্যান্ড প্রসপারটি পার্টি (ডিপিটি) জয়লাভ করে। কিন্তু ২০১৩ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনে বিরোধী দল পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি) জিতেছিল। ২০১৮সালের নির্বাচনে ড্রুক ন্যামরুপ সোগপা পার্টি জিতেছিল, যারা এখনও সেখানে ক্ষমতায় রয়েছে।