বাংলা হান্ট ডেস্কঃ কসবায় ভুয়ো টিকাকরণ কেন্দ্রে (Kasba Fake Vaccination Camp) মূল পাণ্ডা হিসেবে নাম উঠে এসেছে দেবাঞ্জন দেব-এর (Debanjan Deb)। তদন্তে নেমে তদন্তকারীদেরও তাঁর কীর্তিতে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গিয়েছে। কে এই দেবাঞ্জন? কেনই বা সে নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়ে টিকাকরণ কেন্দ্র চালাচ্ছিল? সেই কারণ নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। তৃণমূলের (All India Trinamool Congress) সাংসদ মিমি চক্রবর্তী (Mimi Chakraborty) যদি ওই কেন্দ্রে গিয়ে টিকা না নিতেন, তাহলে কি এই কাণ্ড ধরা পড়ত? তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।
কিছুদিন আগে এক ব্যক্তির ভুয়ো পরিচয়পত্র উদ্ধার হয়েছিল। সেই মর্মে নিউ টাউন মার্কেট থানায় ১৫ জুন একটি অভিযোগও দায়ের করা হয়েছিল। পুলিশ তখনও জানত না যে, করোনায় টিকাকরণ কেন্দ্রের নামে ভুয়ো ক্যাম্প চালাচ্ছে দেবাঞ্জন। তদন্তে জানা গিয়েছে যে, দেবাঞ্জন মাদুরদহের বাসিন্দা। জেনেটিক্সে এমএসসি। ২৮ বছর বয়সী দেবাঞ্জন নীল বাতি লাগানো গাড়িতে ঘুরত ভুয়ো IAS পরিচয় দিয়ে। এমনকি সে একজন প্রাক্তন BSF জওয়ানকে তাঁর দেহরক্ষী হিসেবে নিযুক্ত করেও রেখেছিল।
দেবাঞ্জন নিজের অফিসে ১০ থেকে ১২ জন কর্মী নিযুক্ত করে রেখেছিল। তাঁদের ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে বেতনও দিত। কিন্তু সে এত টাকা পেত কোথায়? সেই নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। পুলিশ তাঁর আয়ের উৎস খুঁজতে তৎপর হয়েছে। ডিভিশনাল কমিশনার রশিদ মুনির খান জানান, ‘দেবাঞ্জনের বাবা ওকে IAS হতে বলেছিল, এরপর সে বাইরে চলে যায়। বাইরে থেকে একদিন ঘুরে এসে বলে আমি IAS হয়ে গিয়েছি। এরপর থেকেই বাড়ির বাইরে ভুয়ো নেম প্লেট লাগিয়ে নীল বাতি লাগানো গাড়িতে ঘুরত সে।” পুলিশ আধিকারিক জানান, চার বছর ধরে এই কাজ চলছে।
ভুয়ো টিকাকাণ্ডের মূল পাণ্ডা দেবাঞ্জনের বাবা মনোরঞ্জন দেব আবার আবগারি দফতরের প্রাক্তন ডেপুটি কালেকটর। ১৪ বছর ধরে মাদুরদহের ২১৮ নম্বর হোসেনপুরের বাড়িতে দেবাঞ্জন বাবা আর বোনকে নিয়ে বসবাস করত। কিন্তু তাঁর ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর তাঁর বাড়িতে আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তবে এই কাজ একা দেবাঞ্জনের না সেটা প্রতিবেশীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছে পুলিশ। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, মনোরঞ্জনবাবু তাঁদের কাছে একাধিক মিথা কথা বলেছেন। তিনি কখনও বলেছেন যে দেবাঞ্জন কান থেকে পুরস্কার জিতেছেন, আবার কখনও দাবি করেছেন তাঁর ছেলে রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত। মনোরঞ্জনবাবু নিজের ছেলে আবার শিশু চরিত্রে অভিনয় করেছিল, সেই গল্পও শুনিয়েছেন।
এক প্রতিবেশী জানান, ‘বড়বড় আমলারা যেমন ভাবে চলাফেরা করেন, দেবাঞ্জনও তেমন ভাবেই চলাফেরা করত। সারাদিন নীলবাতির গাড়িতে ঘুরে বেড়াত, আর রাতে দেহরক্ষীরা এসে তাঁকে বাড়ির ভিতর ঢুকিয়ে দিয়ে যেত।” এক প্রতিবেশী জানান, আমাদের সন্দেহ হত ঠিকই, কিন্তু কোনও সময় কিছু বলতে পারিনি। কারণ আমাদের কাছে কোনও প্রমাণই ছিল না। আর ওঁর বাবা যে মিথ্যা কথা বলত, সেটা শুনেই বোঝা যেত।