বাংলাহান্ট ডেস্ক: গুজরাটের আমরেলি জেলার কৃষক পরিবারের ছেলে কুলদীপ সোরঠিয়া সাফল্যের (Success Story) আজ এক অনুপ্রেরণার নাম। ছোটবেলায় চরম আর্থিক অনটন, ১৫-১৭ লক্ষ টাকার ঋণ আর হতাশার দিনগুলো পেরিয়ে আজ তিনি দাঁড়িয়ে আছেন ৭৪ কোটি টাকার সাফল্যের চূড়ায়। তাঁর গড়ে তোলা সোলার স্টার্টআপ ‘কেস্কোয়ার এনার্জি’ (KESQUARE Energy) বর্তমানে দেশের অন্যতম সফল রিনিউয়েবল শক্তি সংস্থা। ২০১৭ সালে মাত্র ১৫,০০০ টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু হয়েছিল এই পথচলা। আজ সেই সংস্থা ২০৩০ সালের মধ্যে ১,০০০ কোটি টাকার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে।
কুলদীপের অসাধারণ সফলতার কাহিনি (Success Story)
কুলদীপের জীবনযাত্রা শুরু হয়েছিল গুজরাটের এক ছোট্ট গ্রামে, এক কৃষক পরিবারের সন্তান হিসেবে। বিদেশে পড়াশোনার স্বপ্ন ছিল তাঁর। কিন্তু ২০১৭ সালে কানাডায় মাস্টার্স কোর্সের জন্য নেওয়া এডুকেশন লোন বাতিল হয়ে যায় কারণ পরিবার কোনও ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেয়নি। এই ঘটনা তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। হতাশ না হয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নেন নিজের উদ্যোগে কিছু করার। ক্রেডিট কার্ড বিক্রির চাকরি ছেড়ে দেন এবং মাত্র ১৫,০০০ টাকায় ১৫০ বর্গফুটের ঘর ভাড়া নিয়ে শুরু করেন নিজের স্টার্টআপ—কেস্কোয়ার এনার্জি (Success Story)।
আরও পড়ুন:ঐতিহাসিক পদক্ষেপ ISRO-র! ভারতের বিজ্ঞানী এবং গবেষকদের জন্য নেওয়া হল বড় সিদ্ধান্ত
প্রথম দিকে তিনি একাই সব সামলাতেন—বিক্রয়, হিসাব, লজিস্টিক্স থেকে শুরু করে গ্রাহক পরিষেবা পর্যন্ত। দিনে ১৫-১৭ ঘণ্টা পরিশ্রম করতেন। দেড় বছরের মধ্যে তাঁর পরিশ্রমের ফল মিলতে শুরু করে। তাঁর ভাই কলপেশ সোরঠিয়া ছিলেন তাঁর সবচেয়ে বড় সহযোদ্ধা। তাঁরা বুঝেছিলেন, ভারতের বিদ্যুৎ সমস্যা, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে, সঠিক উদ্যোগে অনেকটাই সমাধান করা সম্ভব (Success Story)।
কেস্কোয়ার এনার্জি মূলত দুটি ক্ষেত্র নিয়ে কাজ করে। প্রথমত, B2C সেগমেন্টে গ্রাহকদের জন্য ঘরোয়া রুফটপ সোলার প্রজেক্ট ইনস্টল করে—যেখানে ‘পিএম সূর্য ঘর বিনামূল্যে বিদ্যুৎ প্রকল্প’-এর আওতায় পুরো প্রক্রিয়াটি সহজ করে দেয় সংস্থা। গ্রাহকদের জটিল সরকারি প্রক্রিয়া থেকে মুক্তি দেয় এবং শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ইনস্টলেশনের দায়িত্ব নেয়। দ্বিতীয়ত, B2B সেগমেন্টে, তারা ৭০-৮০ রকম সোলার পণ্য যেমন প্যানেল, ইনভার্টার, কেবল ইত্যাদি ২৩টি রাজ্যের ১,৫০০-রও বেশি ক্লায়েন্টকে সরবরাহ করে (Success Story)।
মাত্র সাত বছরে এই কোম্পানির বার্ষিক আয় ২৫ লক্ষ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৪ কোটি টাকায়। বাজারে নিজেদের আলাদা করে তুলেছে দুটি কারণে—গ্রাহককেন্দ্রিক পরিষেবা এবং তাদের “৫ বছরের জিরো লস গ্যারান্টি স্কিম”। এই স্কিম অনুযায়ী, গ্রাহকের সোলার সিস্টেম যদি ৪৮ ঘণ্টার বেশি বন্ধ থাকে, কোম্পানি উৎপাদন ক্ষতির পূরণ করে দেয়। ফলে গ্রাহকদের মধ্যে তাঁদের প্রতি আস্থা গড়ে উঠেছে (Success Story)।
আরও পড়ুন:বিপদ আঁচ করেই আগেভাগে সংকেত পাঠাবে AI নির্ভর সিস্টেম! গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে ৭৭ কোটি খরচ করছে রেল
বর্তমানে কেস্কোয়ার এনার্জি দেশের মধ্যে পিএম সূর্য ঘর প্রকল্পের অধীনে স্বীকৃত ২৫টি বিক্রেতার মধ্যে একটি। কোনও বাহ্যিক ফান্ডিং ছাড়াই সম্পূর্ণ বুটস্ট্র্যাপ মডেলে এগোচ্ছে এই সংস্থা। কুলদীপ এখন কোম্পানিকে আরও বিস্তৃত করতে চান—আগামী কয়েক বছরে কর্মী সংখ্যা দ্বিগুণ করা, আটটি নতুন ফুলফিলমেন্ট সেন্টার তৈরি করা এবং পরিষেবা আরও দ্রুততর করা তাঁর লক্ষ্য (Success Story)।
তাঁর কথায়, “আমাদের উদ্দেশ্য শুধু বিদ্যুৎ দেওয়া নয়, বরং সোলার এনার্জির মাধ্যমে গ্রামীণ ভারতকে আত্মনির্ভর করা।” এক সময় যিনি বিদেশে পড়তে যেতে পারেননি, আজ তিনি নিজ দেশে শক্তি বিপ্লবের পথিকৃৎ। কুলদীপ সোরঠিয়ার গল্প প্রমাণ করে, সীমাবদ্ধতা নয়, স্বপ্নই আসল শক্তি (Success Story)।