বাংলা হান্ট ডেস্ক: করোনা মহামারী মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করেছে। চাকরি হারানোর পাশাপাশি যারা ব্যবসা করতেন তাঁদের ব্যবসাও স্থবির হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি এই সম্পর্কিত এমন একটি ঘটনা সামনে এসেছে যা শুনে চমকে গিয়েছেন সকলে।
মহামারীর ফলে ব্যবসা বিপর্যস্ত হয়ে যাওয়ায় রয়সন জোসেফ নামে এক বাস ব্যবসায়ী তাঁর বিলাসবহুল বাসগুলিকে নামমাত্র দামে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জানা গিয়েছে যে, রয়সনের মোট ২০ টি বিলাসবহুল বাস ছিল। যার মধ্যে ১০ টি বাস এখন প্রতি কেজি মাত্র ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অবিশ্বাস্য মনে হলেও ঠিক এইরকমই এক ঘটনা ঘটেছে কোচিতে।
এই প্রসঙ্গে রয়সন জোসেফ জানিয়েছেন যে, তীব্র আর্থিক অনটনে জীবন যাপন করা তাঁর জন্য কঠিন হয়ে পড়ছে। করোনা মহামারীর আগে বিভিন্ন আকারের মোট কুড়িটি বাস ছিল তাঁর। এখন দুই বছর পর আর মাত্র ১০ টি বাস রয়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী দিনেও একইভাবে বাকি বাসগুলো বিক্রি করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
কিন্তু, হঠাৎ করে এই দামে কেন তিনি বাসগুলিকে বিক্রি করছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে জোসেফ জানিয়েছেন যে, “বিষয়টি সত্যিই কঠিন হয়ে উঠেছে। আমার ও আমার পরিবারের অবস্থা খুবই খারাপ। আমার সমস্ত বাসে ৪৪,০০০ টাকার ট্যাক্স এবং প্রায় ৮৮,০০০ টাকার বীমা দিতে হয়।”
পাশাপাশি, তিনি আরও জানান যে, “গত সপ্তাহের রবিবার একটি লকডাউন ছিল। কিন্তু, নিয়মে উল্লেখ আছে যে, প্রি-বুক করা ভ্রমণগুলি করা সম্ভব। তাও, পুলিশ আমাকে কোভালাম যাওয়ার সময়ে ২,০০০ টাকা জরিমানা দিতে বলেছিল। অকারণে আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে। আমাদের কাগজপত্র ঠিক থাকলেও কোনো কথা শোনা হচ্ছেনা।”
একটি সাক্ষাৎকারে, কন্ট্রাক্টর ক্যারেজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (CCOA) চেয়ারম্যান বিনু জন জানিয়েছেন, “বাস বিক্রির ঘটনা কিন্তু প্রথমবার ঘটছেনা। বরং, এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। ট্যুরিস্ট বাসগুলোর ওজন প্রায় ৮ থেকে ৯ টন। এমতাবস্থায় স্ক্র্যাপ বিক্রি করে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা পান বাস মালিকরা।” তিনি আরও জানান লোন না নিয়ে বাস মালিকরা এমনভাবে বাস বিক্রি করেন। বাসগুলির স্ক্র্যাপ বিক্রি করে, মালিকরা ঋণে নেওয়া বাসের ইএমআই পরিশোধ করেন।
এছাড়াও, জন জানিয়েছেন, “আমিও আমার তিনটি বাস এভাবে বিক্রি করেছি এবং আরও দু’টি বাস বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা এটা করছি শুধুমাত্র আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য। এই সময় বিপাকে পড়েছেন সব বাস অপারেটররা। ২০২০ সালে, CCOA-এর সদস্য সংখ্যা ছিল ৩,৫০০। কিন্তু তারপর কেউ তাদের সদস্যপদ পুনর্নবীকরণ করেনি।”
জন বলেছেন, “এমন পরিস্থিতিতে সরকারের ইএমআই পরিশোধের নিয়ম পরিবর্তন করা উচিত। গত দুই মাসে, মাসিক কিস্তি পরিশোধ না করার কারণে CCOA-র সদস্যদের ২,০০০-এরও বেশি বাস বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। আমাদের ট্যাক্স হিসাবে প্রতি মাসে কমপক্ষে ১৫,০০০ টাকা দিতে হয়। যার মানে আমাদের প্রতিদিন ৫০০ টাকা উপার্জন করতে হবে। কোভিড ১৯-এর কারণে সপ্তাহান্তে কারফিউ এবং ভ্রমণ বাতিলের কারণে সারাদিন বাস চলে না, এবং আমাদের কর্মীদের টাকাও দিতে হয়। সুতরাং, শেষ পর্যন্ত, আমাদের কাছে কিছু দেওয়ার মতো টাকা থাকেনা।”