বাংলাহান্ট ডেস্কঃ হিন্দু দেবদেবীদের মধ্যে এক প্রধান দেবতা হলেন মহাদেব (Mahadev) শিব (shiva)। হিন্দু মহিলারা শিবের মতো বর পাওয়ার আশায় বাবার মাথায় জল ঢালেন। বাবার আশির্বাদে তাঁদের সাফল্য প্রাপ্তি হয়। এই শিবলিঙ্গে দুধ ঢালার পিছনে কিন্তু যথেষ্ট বৈজ্ঞানিক এবং পৌরাণিক ব্যাখ্যা রয়েছে।
বৈজ্ঞানিকরা মনে করেন, বর্ষাকালে ঘাস খাওয়ার সময় গোরু ঘাসের সাথে বিভিন্ন রকমের ব্যাক্টেরিয়া খেয়ে ফেলে। যার ফলে দুধে বিষক্রিয়া থাকার সম্ভাবনা থাকতে পারে। তাই বর্ষাকালের দুধ পান না করে শিবলিঙ্গে ঢালা হয়। শিব যেহেতু সমুদ্র মন্থনের সময় উৎপন্ন গরল নিজের কণ্ঠে পান করে ছিলেন, সেই জন্যই এমনটা করা হয়। আবার আয়ুর্বেদরা বলেন, বর্ষাকালের দুধে বিষের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই মানুষের শরীরকে সুস্থ রাখতে, অসুস্থ হওয়ার থেকে বাঁচার জন্য দুধ না খেয়ে শিবলিঙ্গে ঢালা হয়।
তবে শিবলিঙ্গে দুধ ঢালার পিছনে যেমন অনেক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে, তেমনি অনেক পৌরাণিক ব্যাখ্যাও আছে। পৌরাণিক কালে দেবতা ও অসুরেরা মন্দার পর্বতের সাহায্যে সমুদ্র মন্থন করেন। এই সময় সমুদ্র থেকে উঠে আসে প্রচুর ধনরত্ন। কিন্তু তার সাথে প্রচুর পরিমাণে গরলও উঠে আসে, যা পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকর ছিল।
কোন দেবতা যখন সেই গরলের ভাগ নিতে নারাজ ছিলেন, সেই সময় মহাদেব তাঁর কণ্ঠে সমস্ত বিষ ধারণ করে নেন। এবং পরিবেশকে বিষের প্রকোপ থেকে রক্ষা করেন। এই ঘটনার পর তাঁর সারা শরীরের তাপমাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছিল। মহাদেবকে বিষের জ্বালা থেকে বাঁচাতে দেবী তারা প্রকট হয়ে শিবকে স্তন্য পান করান। সেই কারণেই এখনও শিবের বিষের জ্বালা কমাতে তাঁকে দুধ দিয়ে স্নান করানো হয়।
তবে আধ্যাত্মিকরা বলেন, মন্দির গর্ভে রাখা শিবলিঙ্গ পরিবেশ থেকে বিভিন্ন রকম নেগেটিভ এনার্জি গ্রহণ করে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় থাকে। পরিবেশ থেকে নেগেটিভ এনার্জি গ্রহণের পর শিবলিঙ্গের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে, দুধ ও ডাবের জল দিয়ে সেই উষ্ণতা প্রশমিত করা হয়। পরে এই জল চরনামৃত হিসাবে পান করা হয়।
শিবরাত্রিতে মহিলারা শিবপূজা এবং শিবের মাথায় জল ঢালেন। কথিত আছে শিবের মতো ভালো বর পাওয়ার জন্য মেয়েরা এই ব্রত রাখেন। কিন্তু কেন শিবপূজা এবং শিবের মাথায় দুধ ঢালা হয়, সে বিষয়ে অনেকেই অবগত নন। প্রাচীন পন্থা অবলম্বন করে সকলেই শিবরাত্রিতে শিবের মাথায় জল ঢালেন।