বাংলা হান্ট ডেস্ক : পৃথিবীবাসী চিরকালই নিরবিচ্ছিন্ন খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর বাইরে বাসযোগ্য গ্রহ খুঁজে পাওয়ার। এই নিয়ে পৃথিবীবাসীর খোঁজার ও কৌতূহলের অন্ত নেই। যবে থেকে বিজ্ঞানের জন্ম হয়েছে তবে থেকে আজ পর্যন্ত এই গবেষণা বিরামহীন। এই নিরবিচ্ছিন্ন কৌতুহলই সুখবর নিয়ে আসলো। সাম্প্রতিক গবেষণায় ইঙ্গিত, পৃথিবীর মতোই সম্ভাবনাময় বাসযোগ্য অপর একটি গ্রহে জলের অস্তিত্ব আছে। ফলে সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব সম্পর্কে আরও নিশ্চিত হচ্ছেন গবেষকরা। ‘নেচার অ্যাস্ট্রোনমি’ নামের একটি জার্নালে প্রকাশিত তথ্য এমনই সুসংবাদ দিল।
গ্রহটি পৃথিবী থেকে অন্তত আটগুন বড়ো। গ্রহটির নাম কে টু-এইটিন বি (K2-18B)। ১১০ আলোকবর্ষ দূরে এর অবস্থান। মনে করা হচ্ছে, পৃথিবীর জন্ম যে শক্তিশালী মহাজাগতিক বিস্ফোরণ থেকে , তার চেয়েও বেশি শক্তিশালী বিস্ফোরণে তৈরি হয়েছিল এই গ্রহটি। নিকটবর্তী নক্ষত্র থেকে এর দূরত্ব এমনই, যেখানকার তাপমাত্রা হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনের রাসায়নিক বিক্রিয়াজাত জল তরল অবস্থায় থাকার পক্ষে সহায়ক। নাসার শক্তিশালী হাবল টেলিস্কোপ ২০১৬ সাল থেকে এই গ্রহের দিকে নজর রেখেছিল । স্পেকট্রোমিটারের মাধ্যমে গ্রহ থেকে আগত আলোকরশ্মি গত দু বছর ধরে বিশ্লেষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারপরই তাঁরা বুঝতে পেরেছেন, কে টু-এইটিন বি’র তাপমাত্রা এবং পরিবেশ প্রাণের অস্তিত্ব বজায়ের জন্য অনেকটাই অনুকূল। গ্রহের পাথুরে জমিতে জলের ধারা বয়ে গিয়েছে।
জিওভান্না তিনেত্তি যিনি এই গবেষণার অন্যতম সদস্য,এবং লন্ডনের কলেজের জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক , তিনিবলছেন, ‘আমাদের সৌরজগতের বাইরে এই গ্রহটির মধ্যেই বাসযোগ্য হয়ে ওঠার সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা দেখছি। ওখানে সমুদ্র আছে কি না, সে বিষয়ে এখনও আমরা নিশ্চিত নই। তবে জলের অস্তিত্ব পেয়েছি।’
জানা গিয়েছে, গ্রহটিতে হাইড্রোজেনের পাশাপাশি হিলিয়াম গ্যাসের অস্তিত্ব আছে। তবে নাইট্রোজেন ও মিথেন আছে কি না, তা এখনও অজানা। এই চারটি গ্যাসের অস্তিত্ব থাকলে, তা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সমকক্ষ হবে। দুই মেরু প্রদেশ বাদ দিলে ০.২ শতাংশ থেকে ৪ শতাংশ পর্যন্ত বাষ্প রয়েছে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে। আর কে টু-এইটিন বি’তে বাষ্পের পরিমাণ ০.১ থেকে প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। স্পেস টেলিস্কোপে ধরা পড়েছে এই বাষ্পীভূত জলের অস্তিত্ব। যার পরিমাণ পৃথিবীর চেয়ে বেশিই। এটি সম্ভবত প্রবল শক্তিশালী বিস্ফোরণ থেকে গ্রহটির উৎপত্তির ফলে হয়েছে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানী মহল।
সৌরজগতের বাইরে এমন ৪০০০ গ্রহ রয়েছে, কিন্তু তাদের আবহাওয়া সম্পর্কে এখনও কিছু জানতে পারেননি মহাকাশ গবেষকরা। পরবর্তীকালে আরো উন্নত প্রযুক্তি র সাহায্য নেওয়া হবে। যা থেকে হয়ত ওই গ্রহগুলির গঠন এবং আবহাওয়া সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য মিলবে। তবে এই মুহূর্তে কে টু-এইটিন যে পৃথিবীর সমকক্ষ হওয়ার আলো দেখাচ্ছে, তা নিয়ে প্রায় সংশয়হীন বিজ্ঞানীরা।