বাংলা হান্ট ডেস্ক: স্পেসএক্স (SpaceX) এবং টেসলার (Tesla)-র সিইও ইলন মাস্ককে চেনেন না এমন মানুষ কার্যত খুঁজে পাওয়াই মুশিকল। বর্তমানে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী আপাতত তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ গিয়ে পৌঁছেছে ২০৫ বিলিয়ন ডলারে। মূলত, ইলন মাস্ক খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সাফল্যের শিখরে পৌঁছে গিয়েছেন। যদিও, তাঁর জীবনসংগ্রাম খুব একটা সহজ ছিলনা। বরং, একাধিক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে মাস্ককে। এমতাবস্থায়, বর্তমান প্রতিবেদনে আজ আমরা ইলন মাস্কের জীবনের এমন কিছু ঘটনা আপনাদের সামনে তুলে ধরব যা এখনও অজানা অনেকেরই কাছে।
একনজরে ইলন মাস্ক: বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ শিল্পপতি এবং বিনিয়োগকারী ইলন মাস্কের জীবনবৃত্তান্ত আপনাকে মুগ্ধ করবেই। তবে, বর্তমানে সফল হলেও জীবনে একাধিকবার ব্যর্থতার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাঁকে। মূলত, দীর্ঘ লড়াইয়ের মাধ্যমে তিনি তাঁর স্বপ্নকে সত্যি করে তুলেছেন।
বেশিরভাগ সম্পত্তি বিনিয়োগ এবং স্টক মার্কেট থেকে অর্জিত: মূলত, ইলন মাস্ক তাঁর এই বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন বিনিয়োগ এবং শেয়ার বাজারের মাধ্যমে। ই-ক্যাশ (পে-প্যাল), বৈদ্যুতিক গাড়ি (টেসলা), রকেট প্রযুক্তি (স্পেসএক্স), এবং শক্তি পরিষেবা (সোলারসিটি)-র মাধ্যমেই তিনি সফলতার শীর্ষে পৌঁছে যান।
ইলন মাস্কের শৈশব: জেনে অবাক হবেন যে, এই বিজনেস টাইকুনকে তাঁর ছোটবেলায় এক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়। মূলত, তাঁকে সিঁড়ি থেকে নিচে ফেলে দেওয়া হয়েছিল এবং পরে তাঁকে এত মারধর করা হয়েছিল যে মাস্ককে হাসপাতালে পর্যন্ত ভর্তি হতে হয়। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনায় তিনি অত্যন্ত আঘাত পান। পাশাপাশি, এখনও শ্বাস নিতে কষ্ট হয় মাস্কের।
চাকরির আবেদন করলেও নির্বাচিত হননি: বর্তমানে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধনী ব্যক্তি মাস্ক একটা সময়ে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি সংস্থা নেটস্কেপে চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন। তবে কম্পিউটার সায়েন্সের কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকায় তিনি কোনো সুযোগ পাননি। উল্লেখ্য যে, মাস্ক হোয়ার্টন স্কুল থেকে অর্থনীতি ও পদার্থবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
হানিমুনের সময় সিইও পদ থেকে অপসারিত হন: এলন মাস্ক X.com নামে একটি অনলাইন পেমেন্ট কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন, যেটি পরে পেপ্যাল (Paypal) হয়ে ওঠে। ২০০০ সালের এপ্রিল মাসে মাস্ককে কোম্পানির সিইও করা হয়। কিন্তু, কিছু সময় পরেই তৎকালীন সিটিওর সঙ্গে তাঁর কোনো একটি ক্ষেত্রে বিরোধ তৈরি হয়। এমতাবস্থায়, এই মতপার্থক্যের জেরে শেষ পর্যন্ত মাস্ক যখন হানিমুনে গিয়েছিলেন তখন তাঁকে পেপ্যালের সিইও পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়।
খুব কাছ থেকে দেখেছেন মৃত্যুকে: মূলত, মাস্ক তাঁর জন্মভূমি দক্ষিণ আফ্রিকায় ছুটিতে থাকার সময়, কার্যত মৃত্যুকে অত্যন্ত কাছ থেকে উপলব্ধি করেছিলেন। ওই সময় তিনি সেরিব্রাল ম্যালেরিয়ায় ভুগছিলেন। উল্লেখ্য যে, প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ার একটি জটিল রোগ। যার চিকিৎসা করালেও মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে যথেষ্ট। এমতাবস্থায়, এই রোগ থেকে সেরে উঠতে মাস্কের সময় লাগে প্রায় ছ’মাস।
আরও পড়ুন: বড় খবর! এবার বিপুল টাকা ভাড়া দিয়ে Tesla-র জন্য ভারতে অফিস খুলছেন মাস্ক, প্রতিমাসে হবে এত খরচ
পুত্র অসুস্থ হয়ে মারা যায়: ইলন মাস্কের দীর্ঘদিনের বান্ধবী তথা প্রথম স্ত্রী জাস্টিন উইলসন ২০০২ সালের মে মাসে তাঁদের প্রথম পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। তাঁরা সেই সন্তানের নাম দেন নেভাদা আলেকজান্ডার। কিন্তু মাত্র আড়াই মাসের মধ্যেই মারা যায় ওই শিশু। মূলত, সাডেন ইনফ্যান্ট ডেথ সিনড্রোমে (SIDS) মৃত্যু ঘটে ওই সন্তানের।
আরও পড়ুন: চীনকে ঝটকা দিতেই, এবার ভারতের হাতে পায়ে পড়লো এলন মাস্ক, নরম করলো সুর
স্পেসএক্স সঙ্কট: ২০০২ সালের জুন মাসে ইলন মাস্ক স্পেসএক্স প্রতিষ্ঠা করেন। যেটির উদ্দেশ্য ছিল মহাকাশে পরিবহণ খরচ কমানো এবং মঙ্গল গ্রহের বসতি স্থাপনের স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করা। মূলত, ইলন মাস্ক পেপ্যাল বিক্রির মাধ্যমে প্রাপ্ত প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করেছিলেন স্পেসএক্সে। এদিকে, কোম্পানির প্রথম তিনটি লঞ্চ ব্যর্থ হয়। যা বিনিয়োগকারীদের উদ্বিগ্ন করে তোলে। এমতাবস্থায়, সংস্থাটি কার্যত সঙ্কটে পড়ে যায়।
টেসলা বন্ধের উপক্রম: ইলন মাস্ক ২০০৩ সালে সাশ্রয়ী বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির লক্ষ্যে টেসলা মোটরস প্রতিষ্ঠা করেন। কোম্পানির প্রথম বৈদ্যুতিক গাড়ি ছিল রোডস্টার। যেটি উচ্চ-কার্যক্ষমতাসম্পন্ন হলেও লাভজনক গাড়ি হিসেবে বিবেচিত হয়নি। যার ফলে, লঞ্চ বিলম্বিত হয় এবং কোম্পানিটিকে গুরুতর আর্থিক সমস্যারও সম্মুখীন হতে হয়। এমনকি, সংস্থাটি বন্ধের উপক্রমও তৈরি হয়েছিল।