বাংলা হান্ট ডেস্ক: ভারতের প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান বর্তমানে ঋণের বোঝায় জর্জরিত। শুধু তাই নয়, তারা প্রতিনিয়ত IMF তথা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করে আসছে। যদিও, এবার ভারতের আরেক প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের (Bangladesh) আর্থিক অবস্থাও অত্যন্ত শোচনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। এমনকি, বাংলাদেশও ঋণের ফাঁদে জড়িয়ে পড়ছে। সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে প্রকাশ করা হয়েছে যে, মাত্র ৫ বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ কীভাবে ঋণের জালে ডুবে গেছে। এই ঋণের পাহাড় কমানো এখন বাংলাদেশের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সঙ্কটের সম্মুখীন বাংলাদেশ (Bangladesh):
উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের ন্যাশনাল বোর্ড অফ রেভিনিউর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুর রহমান খান গত সোমবার জানিয়েছেন যে, বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই এক ধরণের ঋণের ফাঁদে পড়ে গেছে। গত ১ দশক ধরে, একাধিক গবেষক এবং অর্থনীতিবিদ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে বাংলাদেশ ‘ঋণের জালে’ জর্জরিত হচ্ছে। বিশ্বব্যাঙ্ক এই সপ্তাহে তাদের আন্তর্জাতিক ঋণ রিপোর্ট ২০২৫ প্রকাশ করেছে। ওই রিপোর্টে অনুসারে, গত ৫ বছরে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশ কত ঋণের মধ্যে রয়েছে: জানিয়ে রাখি যে, বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণ ৪২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বব্যাঙ্কের তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ১০৪.৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে। যা ২০২০ সালে ছিল ৭৩.৫৫ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে, ২০২৪ সালে পাকিস্তানের বৈদেশিক ঋণ ইতিমধ্যেই ১৩০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। রিপোর্ট অনুসারে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ এত বেশি ছিল যে সেটি তার রফতানি আয়ের ১৯২ শতাংশের সমান ছিল। এমতাবস্থায়, বিশ্বব্যাঙ্ক বাংলাদেশকে সেই দেশগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছে যেখানে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কোটি কোটি টাকার ঋণের বোঝা: বাংলাদেশের অর্থ মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ মাসের শেষে বাংলাদেশের মোট বকেয়া ঋণ ছিল ১৯৯৯.২৮ বিলিয়ন টাকা। যা প্রায় ১.৪৭ লক্ষ কোটি টাকার সমান। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৪১,৯৯২ কোটি টাকা। যা প্রায় ৬,০০০ কোটি টাকার সমান। আসলে, বাংলাদেশ ক্রমবর্ধমানভাবে দীর্ঘমেয়াদী বৈদেশিক ঋণের ওপর জোর দিচ্ছে।
আরও পড়ুন: বাদ ১,০০৫ জনের নাম! IPL-এর নিলামে আচমকাই কমল খেলোয়াড়দের সংখ্যা, মিলল বড় আপডেট
পাকিস্তানের পরিস্থিতি: এমতাবস্থায়, আমরা যদি পাকিস্তানের পরিসংখ্যানের দিকে তাকাই সেক্ষেত্রে
বিশ্বব্যাঙ্কের আন্তর্জাতিক ঋণ রিপোর্ট ২০২৫ অনুসারে, ২০২৪ সালে পাকিস্তানের মোট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ প্রায় ১৩০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে পাকিস্তানের রফতানি আয়ের ৪০ শতাংশ ঋণ পরিশোধে ব্যয় হচ্ছে। রিপোর্ট অনুসারে, পাকিস্তান তার ঋণের ৪৯ শতাংশ বহুপাক্ষিক প্রতিষ্ঠান (বিশ্বব্যাঙ্ক, এডিবি) থেকে নিয়েছে। বিশ্বব্যাঙ্ক থেকে ১৮ শতাংশ, এডিবি থেকে ১৬ শতাংশ, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে ১৫ শতাংশ এবং দ্বিপাক্ষিক দেশগুলি থেকে ৪৩ শতাংশ ঋণ নিয়েছে পাকিস্তান। যার মধ্যে রয়েছে চিন (২৩ শতাংশ) এবং সৌদি আরব (৫ শতাংশ)। এদিকে, ৮ শতাংশ ঋণ এসেছে বেসরকারি ঋণদাতাদের কাছ থেকে। ১৯৪৭ সাল থেকে, আমেরিকা পাকিস্তানকে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলারের সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান করেছে।
আরও পড়ুন: ভারতের এই বিশেষ বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার চেষ্টা পাকিস্তানের! কী পরিকল্পনা পড়শি দেশের?
বাংলাদেশ IMF থেকে কত টাকা ঋণ নিয়েছে: উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান উভয়ই IMF থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ঋণ নিয়েছে। গত ১৫ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে IMF-এর একটি রিপোর্ট অনুসারে, পাকিস্তান ৮.৯৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছে। যেখানে বাংলাদেশ ৩.৯৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছে। জানিয়ে রাখি যে, গত সোমবার পাকিস্তানের জন্য একটি নতুন ঋণ পর্যালোচনা অনুমোদন করেছে IMF। যেটি পাকিস্তানকে প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলার প্রদান করবে। বোর্ড ৭ বিলিয়ন ডলারের এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি থেকে ১ বিলিয়ন ডলার এবং পাকিস্তানের জন্য রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাস্টেনিবিলিটি ফেসিলিটির অধীনে ২০০ মিলিয়ন ডলার জারির অনুমোদন দিয়েছে। এই ২ টি কর্মসূচির আওতায় এখনও পর্যন্ত পাকিস্তান মোট প্রায় ৩.৩ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে।












