বাংলা হান্ট ডেস্কঃ গোটা দেশজুড়ে চলছে লকডাউন। ব্যতিক্রম নয় পশ্চিমবঙ্গও।কোভিডের শৃঙ্খল ভাঙতে আজই আরেকবার ১৫ দিনের জন্য লকডাউন বৃদ্ধির ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লকডাউনে কাজও কিছুটা হয়েছে। দেশ এবং রাজ্যে অনেকটাই কমেছে করোনার সংক্রমণ। কিন্তু গত বছরের মতো এ বছরও লকডাউন কেড়ে নিয়েছে অনেকের পেটের ভাত। বিপুল কর্মী ছাঁটাইয়ের জেরে গত বছর কাজ হারিয়েছিলেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। অনেকেরই এখনো কাজে ফেরা হয়নি। শুধু যে বড় চাকরি তাই নয়, অবস্থা আরো করুণ দিন আনি দিন খাই মানুষগুলির ক্ষেত্রে। কেউ গান গাইতেন স্টেজ শোতে, কেউবা করতেন অর্কেস্ট্রায় সঞ্চালনার কাজ। কিন্তু গত বছর থেকেই বন্ধ এই সমস্ত অনুষ্ঠান। কখন তাই কাজহীন হয়ে পড়েছেন এ ধরনের পেশার সঙ্গে যুক্ত সমস্ত মানুষরাই।
তাদেরই একজন জলপাইগুড়ির শুভঙ্কর চক্রবর্তী। ময়নাগুড়ির এই শুভঙ্কর চক্রবর্তীর পেট চলত বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করে। কিন্তু গত বছর লকডাউন এরপর থেকেই বন্ধ হয়ে যায় সেই কাজ। পেটে টান পড়েছে, কিন্তু শিল্পীসত্ত্বা সে তো থেমে থাকে না। মাইক পেলেই তার অভ্যাস গান বাধা। পেটের টানকে উপেক্ষা করে সেই কাজই করে চলেছেন শুভঙ্কর চক্রবর্তী। ইতিমধ্যেই ময়নাগুড়ির ফিনিক্স ফাউন্ডেশনের সাথে যুক্ত হয়েছেন তিনি। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের হয়ে নিজেই লিখছেন প্রচারের গান। বিষয় কখনো করোনা সচেতনতা, কখনো বা ফ্রন্ট লাইনে দাঁড়িয়ে লড়াই করা পুলিশ কিম্বা ডাক্তারদের দুর্দশার কাহিনী।
লকডাউনের জেরে বউ ছেলেকে পাঠিয়ে দিতে হয়েছে বাপের বাড়ি। রোজকার একেবারেই বন্ধ। শুভঙ্কর বাবু বলেন, লকডাউন নিয়ে সচেতনতার জন্য গান বাঁধি। ভালো লাগে। কিন্তু যখন পরিবারের কথা ভাবি মনটা খারাপ হয়ে যায়। ময়নাগুড়ির আনন্দ পাড়ার বাসিন্দা শুভঙ্কর চক্রবর্তী জানেন না কীভাবে চলবে আগামী দিন। লকডাউনে মানুষকে সচেতন করতে গান ভাবছেন তিনি। কিন্তু নিজের পেটে জুটছে না ভাত। এমতাবস্থায় ভরসা শুধু বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের একটু-আধটু সাহায্য। সংবাদমাধ্যমকে ইন্টারভিউতে তিনি বলেন, “কাজ নেই । রোজগার বন্ধ । কয়েকদিনের জন্য বৌ-ছেলেমেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু এইভাবে তো আর চলবে না। আমাকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের থেকে সাহায্য করেছে। সেই দিয়েই চলছে। কেউ যদি সাহায্য করত খুব ভালো হত।”
এগিয়ে আসবেন সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। লকডাউনে মধ্যবিত্তের একটি বড় সংখ্যা চলে গিয়েছে দারিদ্র্যসীমার নিচে। শুধুমাত্র আশ্বাসেই থেকে গিয়েছে সরকারি সাহায্য। এমতাবস্থায় কিভাবে চলবে দিন, দিশেহারা শুভঙ্করের মত আরো অনেকেই।