বাংলা হান্ট ডেস্ক: স্বাধীনতার পর দেশের শ্রম আইনে (Labour Code) সবচেয়ে বড় পরিবর্তন কার্যকর করল কেন্দ্র। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রক ঘোষণা করেছে যে ২১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে নতুন চারটি শ্রম কোড— কোড অন ওয়েজ ২০১৯, দ্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশনস কোড ২০২০, কোড অন সোশ্যাল সিকিউরিটি ২০২০ এবং ওকুপেশনাল সেফটি, হেলথ অ্যান্ড ওয়ার্কিং কন্ডিশন কোড ২০২০। বহু দশক ধরে চলা পুরনো শ্রম আইনগুলিকে আধুনিক ও কর্মীবান্ধব করে তোলার উদ্দেশ্যেই এই পদক্ষেপ। নতুন শ্রম আইনে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মহিলাদের নিরাপত্তা, সমতা এবং কর্মক্ষেত্রে অধিক অধিকার সুনিশ্চিত করায়।
নতুন শ্রম আইনে (Labour Code) মহিলা কর্মীদের বিশেষ সুযোগ সুবিধা কেন্দ্রের তরফে:
নতুন শ্রম কোড (Labour Code) কার্যকর হওয়ার ফলে এবার থেকে প্রথমবারের মতো সব ক্ষেত্রেই মহিলারা নাইট শিফটে কাজ করতে পারবেন। খনি, কারখানা, উৎপাদন, বস্ত্রশিল্প, গুদামজাতকরণ, পরিবহন বা লজিস্টিক— কোনও ক্ষেত্রেই মহিলাদের রাতের কাজের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকছে না। তবে তাঁদের লিখিত সম্মতি নিতে হবে এবং কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত আলো, সিসিটিভি নজরদারি, নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা, জরুরি পরিস্থিতির জন্য হেল্পলাইন ব্যবস্থা এবং ওভারটাইম করলে দ্বিগুণ বেতন দেওয়ার বিধান।
আরও পড়ুন: ইউটিউবে এয়ারশো দেখছিলেন বাবা! আচমকাই ভেঙে পড়ে তেজস, উইং কমান্ডার নমংশের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ পরিবার
সমতা নিশ্চিত করতে নতুন শ্রম কোডে (Labour Code) পুরুষ ও মহিলা কর্মীদের সমান বেতন প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে একই কাজের জন্য মহিলা কর্মীরা অপেক্ষাকৃত কম পারিশ্রমিক পেতেন। এবার লিঙ্গের ভিত্তিতে কোনও বৈষম্য চলবে না বলে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন অফিসে যে গ্রিভেন্স রিড্রেসাল কমিটি থাকে, সেখানে বাধ্যতামূলকভাবে মহিলাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
মহিলা কর্মীদের বদলে যাওয়া সামাজিক কাঠামোর কথা মাথায় রেখে নতুন শ্রম কোডে (Labour Code) পরিবার সংজ্ঞার বিস্তার করা হয়েছে। এখন থেকে মহিলা কর্মীরা তাঁদের শ্বশুর এবং শাশুড়িকেও পরিবারের সদস্য হিসেবে উল্লেখ করতে পারবেন এবং তাঁদের জন্যও কর্মস্থল-সংক্রান্ত সুবিধা, কভারেজ ও সহায়তা প্রযোজ্য হবে। বিশেষ করে চাষ, বিড়ি উৎপাদন, টেক্সটাইল, মিডিয়া এবং অডিয়ো-ভিজ্যুয়াল প্রোডাক্টশন— এসব খাতে মহিলাদের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় তাঁদের বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা করা হয়েছে।

আরও পড়ুন:তিন জেলাশাসকের বিরুদ্ধে সরাসরি নালিশ! শুভেন্দুর অভিযোগে নড়েচড়ে বসল কমিশন
৪০ বছরের ঊর্ধ্বে সব মহিলা-পুরুষ কর্মীদের জন্য বছরে একবার বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশও অন্তর্ভুক্ত হয়েছে নতুন কোডে। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি কমবে, কর্মীদের নিরাপত্তা ও কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে, নতুন শ্রম কোড কর্মীদের অধিকার রক্ষা, সমান সুযোগ তৈরি এবং কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা উন্নত করার ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায় লিখল বলে মনে করছে শ্রম মন্ত্রক। এই সংস্কারের ফলে বিশেষত মহিলা কর্মীরা কর্মস্থলে আরও বেশি স্বাধীনতা, সম্মান এবং নিরাপত্তা পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।












