‘মেড ইন ইন্ডিয়া’-র চাপে ধাক্কা বাংলাদেশের বাজারে, মাথায় চিন্তার ভাঁজ ইউনূস সরকারের

Published on:

Published on:

বাংলাহান্ট ডেস্ক: বাংলাদেশের (Bangladesh) এক সময়ের দ্রুত বিকাশমান বস্ত্র শিল্প এখন প্রবল চাপে। দেশের অভ্যন্তরে তৈরি সুতোর বিক্রি গত দুই বছরে কমেছে অন্তত ৩০ শতাংশ। এর ফলে একের পর এক টেক্সটাইল মিল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কর্মহীন হয়ে পড়ছেন হাজার হাজার শ্রমিক। শীর্ষ স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলির তথ্য বলছে, বাংলাদেশের বস্ত্রবয়ন শিল্প এখন এমন এক সংকটে পৌঁছেছে, যা শুধু অর্থনীতির নয়, সামাজিক স্থিতির উপরও প্রভাব ফেলছে।

বাংলাদেশের বাজারে ধাক্কা (Bangladesh)

মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে ভারতীয় সুতোর আগ্রাসী দখল। ২০২৪ সালে ভারত থেকে বাংলাদেশে (Bangladesh) সুতো আমদানির পরিমাণ বেড়েছে ৪১ শতাংশ। স্থানীয় উৎপাদকরা বলছেন, তারা এত কম দামে সুতো বিক্রি করতে পারছেন না। অনেক মিল বাধ্য হয়ে সামান্য লাভ বা কখনও ক্ষতি নিয়েই বিক্রি করছে, যাতে বাজারে টিকে থাকা যায়। কিন্তু দীর্ঘদিন এই পরিস্থিতি বজায় রাখা সম্ভব নয়।

আরও পড়ুন:৪০ বছরের মাওযুদ্ধের অবসান, আত্মসমর্পণ কিষেনজির ভাই ভূপতির, জানেন মাথার দাম কত ছিল তাঁর ?

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের (Bangladesh) সুতোর বাজারে ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের মূল কারণ হল কম দাম ও উন্নত প্রযুক্তি। বর্তমানে বাংলাদেশে স্থানীয় ৩০ কাউন্ট সুতোর দাম কেজি প্রতি ২.৯৫ থেকে ৩.০৫ ডলার। অন্যদিকে ভারত থেকে আমদানি করা একই মানের সুতো কেজি প্রতি মাত্র ২.৬৮ থেকে ২.৭২ ডলারে পাওয়া যাচ্ছে। অর্থাৎ, ভারতীয় সুতো কিনলে প্রতি কেজিতে প্রায় ০.৩ ডলার সাশ্রয় হচ্ছে।

এই পার্থক্য ছোট মনে হলেও, যখন একটি মিল বছরে প্রায় ২,২৫০ কেজি বা তারও বেশি সুতো ব্যবহার করে, তখন বছরে প্রায় ৬৭৫ ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮২ হাজার টাকার মতো সাশ্রয় হয়। ফলে, স্বাভাবিক ভাবেই বাংলাদেশের মিলমালিকেরা ভারতীয় সুতো আমদানি করতেই আগ্রহী হচ্ছেন। তবে, এতে স্থানীয় উৎপাদন ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশের বহু সুতো উৎপাদক প্রতিষ্ঠান উৎপাদন কমাতে বাধ্য হয়েছে, কেউ কেউ আবার পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে কারখানা। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের (Bangladesh) ব্যাংকগুলিও এখন টেক্সটাইল সেক্টরে নতুন ঋণ দিতে দ্বিধা প্রকাশ করছে। তারা আশঙ্কা করছে, শিল্পটি হয়তো নিকট ভবিষ্যতে বড় ধসের মুখে পড়তে পারে।

Made in India pressure hits Bangladesh market.

আরও পড়ুন: মাত্র ৯ ঘন্টায় হাওড়া থেকে দিল্লি! ১৬০ কিমি গতি এবার বন্দে ভারতের, ছুটবে না ‘উড়বে’ ট্রেন

অন্যদিকে, ভারতীয় সুতো শুধু সস্তা নয়, মানের দিক থেকেও এগিয়ে। উন্নত যন্ত্রপাতি, বহুমুখী ফাইবার, এবং আধুনিক প্রযুক্তির কারণে ভারতীয় সুতো এখন আন্তর্জাতিক বাজারেও প্রতিযোগিতামূলক। ফলে, বাংলাদেশের (Bangladesh) স্থানীয় প্রস্তুতকারীরা প্রযুক্তিগতভাবে পিছিয়ে পড়ায় প্রতিযোগিতা করা আরও কঠিন হয়ে পড়ছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশের বস্ত্র শিল্প দীর্ঘদিন ধরে রফতানির উপর নির্ভরশীল। সেই খাতের মূল ভিত্তি হল স্থানীয়ভাবে তৈরি সুতো ও কাপড়। এই সেক্টর দুর্বল হয়ে পড়লে, রফতানি বাজারেও প্রভাব পড়বে।

বর্তমানে বাংলাদেশ (Bangladesh) সরকার ও অর্থনীতিবিদরা চিন্তিত যে, এই প্রবণতা যদি আরও কয়েক বছর চলতে থাকে, তাহলে দেশের টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি এক ভয়াবহ সংকটে পড়বে। ইউনূস সরকারের জন্যও এটি বড় চাপের কারণ হয়ে উঠেছে। দেশের অর্থনীতির একটি বড় স্তম্ভ যদি এইভাবে টলে যায়, তাহলে কর্মসংস্থান, রফতানি আয়, ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতি—সব কিছুই ঝুঁকির মুখে পড়বে।