বাংলাহান্ট ডেস্কঃ মহারাষ্ট্র (Maharashtra) ম্যান ৪৫ বছর বয়সী জন পেরেইরা, যিনি ভাসাই-ইস্টে অর্থ স্থানান্তরের ব্যবসা চালাচ্ছেন, তিনি এখন পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছে গভবান রূপে এসে দাঁড়িয়েছেন। মুম্বই থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শিল্প নগরী ভাসাইয়ে, করোনা ভাইরাসের (COVID-19) মোকাবেলায় দেশব্যাপী লকডাউনের পর থেকেই প্রচুর পরিযায়ী শ্রমিক আটকা পড়েছে। খাদ্য ও জলের মতো প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অভাব দেখা দিয়েছে তাঁদের কাছে। তারা সকলেই দিন আনে দিন খায় শ্রমিক। তাই তাঁদের কাছে বর্তমানে কাজ না থাকায়, প্রাবসে তারা বিপদে পড়েছে।
যাদের অর্থের প্রয়োজন, তারা ওই ব্যক্তির কাছ থেকে ব্যাংক পরিষেবা নিতে পারেন। পেরেইরা জানান, ‘এই সকল শ্রমিকদের মধ্যে ৯৯ শতাংশ এখানে কলের মিস্ত্রি এবং বিদ্যুৎ মিস্ত্রি। তারা আধার কার্ড ব্যবহার করে ব্যাংকে টাকা জমিয়েছে। কিন্তু এই সংকটের মধ্যে তারা ATM কার্ড না থাকায় কিভাবে টাকা তুলবে তা বুঝতে পারছে না’। সাধারণ সময়ে তারা গ্রামে গিয়ে টাকা তুলে তাঁদের পরিবারের লোকদের দিয়ে আসতে পারে। কিন্তু এই সমস্যার মধ্যে তাঁদের নগদ টাকার সমস্যা দেখা দেয়। সেই কারণে তাঁদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসে পেরেইরা।
বর্তমানে শুধুমাত্র আধার কার্ডের সহাওতায় পেরেইরা তাঁদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে দিয়ে সাহায্য করছেন। আধার সক্ষম পেমেন্ট সিস্টেমের (এপিএস) সহায়তায় পেরেরা তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে নগদ তুলতে তাদের সহায়তা করছেন। সরকারী-অনুমোদিত সুবিধা হল একজন ব্যক্তি তাদের জন ধন বা এমজিএনআরইগা অ্যাকাউন্টে লিঙ্কিত আধার কার্ড ব্যবহার করে সরাসরি টাকা তুলতে পারে, বা তাঁর বায়োমেট্রিক্স স্ক্যান করেও টাকা তুলতে পারে। তবে লকডাউনের সময় এই পরিষেবা সরবরাহ করার জন্য পেরেইরা পুরোপুরি তার কমিশন ছেড়ে দিয়েছিলেন।
লকডাউন শুরু হওয়ার আগে পেরেইরা তাঁর এই পরিষেবা চালানোর জন্য অনুমতি নিয়েছিল। যা বর্তমানে ভাসাইয়ের পুরো অঞ্চলে অর্থ ট্রান্সফার ইউনিটের দোকানগুলোর মধ্যে সক্রিয় রয়েছে। পেরেইরা জানায়, এই কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁর পরিবারের তরফ থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থার কথা ভেবে, তাঁকে বাঁধা দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি এই সংকটের সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তাঁর কাজ চালিয়ে যান। প্রতিদিন তিনি নিজের দোকানটি সকালে সাড়ে চার ঘন্টা এবং সন্ধ্যায় ৫ ঘন্টা খোলা রাখেন। এই সময়ের মধ্যে প্রতিদিন প্রায় ১০-১৫ জন পরিযায়ী শ্রমিকের সাহায্য করতেন। এই সময়ে তিনি তাঁর অন্যান্য কাজ অর্থাৎ ভ্রমণের টিকিট বুকিং, মোবাইল রিচার্জ এবং গাড়ির ব্যাটারি বিক্রি বন্ধ রেখেছে। এই প্রতিটি লেনদেনের জন্য তিনি ব্যাংক থেকে যে ৪.৫০ টাকা করে কমিশন পেতেন, তা থেকেই তাঁর দোকানের ভাড়া, বিদ্যুতের বিল এবং কর্মীর টাকা সঞ্চয় হয়ে যেত।
কখনও জরুরি প্রয়োজনে পেরেইরা তাঁর নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা দিতেও দ্বিধা করেন না। এবং প্রতি মুহূর্তে তাঁকে ব্যাংকে দৌড়াতে হচ্ছে এই পরিষেবা চালিয়ে যাওয়া জন্য। তিনি জানান, ‘এই লোকদের এখন আমার সহায়তার প্রয়োজন। আমি এই সংকটের মধ্য দিয়ে অতিরিক্ত কোনও লাভ অর্জনের লক্ষ্য রাখছি না। আমি দরিদ্রদের সহায়তার জন্য আমার নিরাপত্তার ঝুঁকি নিয়ে আমার ব্যবসাকে উন্মুক্ত রাখছি’। জন পেরেইরা এই ব্যক্তিগত সময়ে নিজের ব্যক্তিগত সুরক্ষা এবং স্বাচ্ছন্দ্যের চেয়ে সমবেদনা তুলে ধরে নিরপেক্ষতার নজির স্থাপন করেছেন। তাঁর সমর্থন অনেক মানুষকে আরও বেশিদিন বেঁচে থাকতে সহায়তা করছে।