বাংলা হান্ট ডেস্কঃ সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্যের দ্বারা ক্রমাগত খবরের শিরোনামে উঠে এসেছেন তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress) সাংসদ মহুয়া মৈত্র (Mahua Moitra)। একইসঙ্গে, সম্প্রতি দলীয় কর্মিসভা থেকে মহুয়াদেবীকে ধমকের সুরে বিশেষ বার্তা পৌঁছে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। ফলে সব মিলিয়ে যখন মমতা বনাম মহুয়া দ্বৈরথে উত্তপ্ত রাজনীতি, সেই মুহূর্তে এ প্রসঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ করলেন করিমপুরের (Karimpur) তৃণমূল বিধায়ক বিমলেন্দু সিংহ রায় (Bimalendu Sinha Roy)।
সাম্প্রতিক সময়ে মা কালী প্রসঙ্গে বিতর্কিত মন্তব্য হোক কিংবা সংসদে ‘ব্যাগ’ বিতর্ক, ক্রমাগত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন মহুয়া মৈত্র। এর মাঝেই আবার কৃষ্ণনগরের সাংসদ হওয়া সত্ত্বেও করিমপুরের একাধিক রাজনৈতিক ইস্যুতে তৃণমূল নেত্রী নাক গলিয়ে চলেছেন বলে অভিযোগ সামনে আসতে থাকে। সম্প্রতি দলীয় কর্মিসভা থেকে মহুয়া মৈত্রকে ধমকের সুরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “করিমপুর আবু তাহের দেখে নেবেন। তুমি তোমার কৃষ্ণনগর সামলাও।”
তবে বিতর্ক এখানেই থেমে থাকে নি, পরবর্তীতে একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট করে করিমপুর বিধানসভা কেন্দ্রে নিজ কাজের খতিয়ান তুলে ধরার পাশাপাশি একাধিক বিষয়ে মন্তব্য প্রকাশ করেন মহুয়াদেবী। আর সেই সকল ইস্যুতেই এবার মুখ খুললেন বিমলেন্দু সিংহ রায়। তাঁর দাবি, “তৃণমূল সাংসদের সাম্প্রতিক পোস্ট অন্য বার্তা দিয়ে চলেছে।”
করিমপুরের তৃণমূল বিধায়ক বলেন, “এই বিষয়ে আমি খুব বেশি মন্তব্য করব না। তবে একটা কথা বলি, সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট করে যেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্যেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন মহুয়া মৈত্র। ওনার উন্নয়ন প্রসঙ্গে গোটা করিমপুরবাসী জানে। তবে আমার মনে হয়, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে চ্যালেঞ্জ না নিলেই পারতেন উনি।”
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে মহুয়া মৈত্র লেখেন, “আপনারা সকলেই জানেন যে ২০১৬ সালে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের আশীর্বাদ ধন্য হয়ে ও করিমপুরের জনগণের ভালোবাসায় আমি করিমপুর বিধানসভার বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হই। ২০১৬ থেকে ২০১৯ এই তিন বছরে সরকারের যে সর্বব্যাপী উন্নয়ন তা করিমপুরে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছি- এই সময় প্রায় ১৪৯ কোটি টাকার উন্নয়নের কাজ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের থেকে বরাদ্দ করাই।রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ,পানীয় জল, স্থায়ী বাস স্ট্যান্ড এর মতো পরিকাঠামো উন্নয়নমূলক প্রকল্প থেকে শুরু করে লালন মঞ্চ,সদ্ভাবমন্ডপ এর মতো সংস্কৃতি ও বিনোদনের ক্ষেত্র নির্মাণের মতো প্রকল্প থেকে শুরু করে করিমপুর আই.টি.আই , করিমপুর পান্নাদেবী কলেজের মানোন্নয়ন এর মতো শিক্ষা মূলক প্রকল্প থেকে শুরু করে নানা ক্ষেত্রে সরকারের উন্নয়নের মানচিত্রে করিমপুরকে সামিল করার চেষ্টা করেছি এবং আপনারা তা চাক্ষুষও করেছেন।”
একইসঙ্গে উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরে তিনি বলেন, “২০১৯ সালে আমি কৃষ্ণনগর লোকসভার সাংসদ নির্বাচিত হওয়া থেকে আজ অবধি আমার লোকসভার অন্তর্গত বিভিন্ন বিধানসভায় সরকারের উন্নয়ন পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি করিমপুর বিধানসভার মানুষের ভালোবাসায় আবদ্ধ হয়ে এই বিধানসভাতেও সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ করার চেষ্টা করে গেছি। কোভিড পরিস্থিতিতে করিমপুর হাসপাতালে অক্সিজেন প্লান্ট নির্মাণ থেকে শুরু করে , প্রত্যেক গ্রাম পঞ্চায়েত অঞ্চলে Oxygen Concentrator, করিমপুর আনন্দপল্লী শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি নির্মাণ থেকে শুরু করে জিম, কমিউনিটি টয়লেট সহ নানা প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অর্থানুকূল্যে ও মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর আশীর্বাদে রূপায়ণের কাজ শুরু করেছি।”
শেষে তৃণমূল নেত্রী লেখেন, “করিমপুরের একজন সাধারণ ভোটার হিসেবে বা আপনাদের পূর্বতন বিধায়ক হিসেবে প্রত্যেক করিমপুর বাসীর সঙ্গে আমার নাড়ির টান ছিল,আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু আজ নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলের সর্বোচ্চ নেত্রীর কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বিধানসভাগুলিতে আরো বেশি সময় দেওয়ার নির্দেশের কারণে আমাকে ওই অঞ্চলে গুলোতে আরো বেশি সময় দিতে হবে। তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ আগামীদিনে উন্নয়ন মূলক প্রকল্প সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে প্রয়োজনে মাননীয় সাংসদ জনাব আবু তাহের খান সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। আমি করিমপুরের ভোটার ও অধিবাসী হিসেবে আমার করিমপুরের বাসস্থানেই থাকবো।”