‘মুসলিমদের আঘাত করার জন্য…’! ‘চ্যাংদোলা’ ইস্যুতে মমতা গর্জে উঠতেই, পাল্টা ‘গিরগিটি’ বললেন শুভেন্দু

Published On:

বাংলা হান্ট ডেস্কঃ সংখ্যালঘু মুসলিম বিধায়কদের ‘চ্যাংদোলা’ করে রাস্তায় ফেলে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তারপর থেকেই এই ‘চ্যাংদোলা’ ইস্যুতে উত্তাল বিধানসভা। তৃণমূলের সাফ কথা ধর্মের ভিত্তিতে এমন হুঁশিয়ারি দেওয়া যায় না। তারপরেই এদিন পাল্টা কাগজ কাগজ উড়িয়ে প্রতিবাদ জানান বিজেপি বিধায়করা। এদিন বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) উপস্থিতিতেই বিজেপি ও তৃণমূলের বিধায়কদের মধ্যে তুমুল বচসা শুরু হয়ে যায়। মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণের মধ্যেই চিৎকার শুরু করেন বিজেপি বিধায়করা।

‘চ্যাংদোলা’ ইস্যুতে মমতা (Mamata Banerjee) গর্জে উঠতেই, পাল্টা ‘গিরগিটি’ বললেন শুভেন্দু

ঘটনার সূত্রপাত হয়, সংখ্যালঘু মুসলিম বিধায়কদের নিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর (Suvendu Adhikari) করা বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে। মঙ্গলবার বিধানসভার বাইরে থেকেই বিরাট হুঁশিয়ারি দিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন,’আগামী বিধানসভা ভোটে বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় (Biman Banerjee), মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) হারাব। আর ওদের দলের যে সব মুসলিম বিধায়ক জিতে আসবে তাদের চ্যাংদোলা করে ১০ মাস পরে এই রাস্তায় ফেলব!’

জানা যাচ্ছে, আজ মমতা (Mamata Banerjee) যখন বিধানসভায় ঢোকেন তার মিনিট কয়েক আগেই গোলাম রব্বানিরা শুভেন্দুর মন্তব্যের প্রতিবাদে সরব হন। সংখ্যালঘু বিধায়কদের নিয়ে শুভেন্দুর করা বিতর্কিত মন্তব্যের বিরোধিতা করে তাঁরা নিন্দা প্রস্তাব আনেন। আর তাতেই ফুঁসে ওঠেন বিজেপি বিধায়করা। উঠে দাড়িয়ে প্রতিবাদে সরব হন তাঁরা। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের মাঝেই স্লোগানের সাথেই তীব্র চিৎকার চেঁচামমেচি শুরু হয়ে যায় বিধানসভায়। শেষ পর্যন্ত অবস্থা এমন হয়  যে একসময় বর্ক্তৃতা থামিয়ে দিতে হয় মুখ্যমন্ত্রীকে।

বিধানসভা শান্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন স্পিকার। এদিন মমতা (Mamata Banerjee) নিজেও একাধিকবার সবাইকে চুপ করতে বলেন। কিন্তু ততক্ষণে কার্যত উত্তাল হয়ে উঠে বিধানসভার অন্দরমহল। বিজেপি বিধায়কদের চিৎকারের মাঝেই পাল্টা আক্রমণ শানিয়ে মমতার সপাট জবাব, ‘আপনারা ধর্মীয় কার্ড খেলেন। সবথেকে বড় ধর্ম মানবিকতা। ধর্মের নামে জালিয়াতি করবেন না। আমি একজন হিন্দু। এটা আপনাদের কাছ থেকে সার্টিফিকেট নিতে হবে?’ এখানেই না শেষ নয়! এরপর তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাকে অবমাননা করবেন না। ভাগ করার চেষ্টা করবেন না বাংলা কে। আপনারা কেন মুসলমান দের টিকিট দেন না? আমি তো ৭৯ পার্সেন্ট হিন্দুদের টিকিট দিই। মহিলাদের টিকিট দিই। আসলে কাক এখন ময়ূর হওয়ার চেষ্টা করছে।’ রাজ্যের সংঘ্যালঘুদের উদ্দেশ্যে তৃণমূল সুপ্রিমো এদিন বললেন, ‘রোজার মাসকে বেছে নিয়েছে মুসলমানদের আঘাত করার জন্য। সংখ্যালঘুরা নিশ্চিন্তে থাকুন। সর্ব ধর্ম সমন্বয় জিন্দাবাদ।’

আরও পড়ুন: যাদবপুরে রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে বিরাট নির্দেশ হাইকোর্টের! তোলপাড় রাজ্য

পাল্টা জবাবে তৃণমূলকে একহাত নিলেন  বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। বিধানসভায় দাঁড়িয়ে এদিন তিনি জানতে চান, ‘ফিরহাদ হাকিম, সিদ্দিকুল্লা, হুমায়ূন কবির প্রতিদিন হিন্দুদের আক্রমণ করে চলেছেন। তাদের বেলা কী হবে?’ অন্যদিকে এদিন বিধানসভার বাইরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে  শুভেন্দু অধিকারী এদিন নাম নিয়ে বললেন, ‘আমরা বিধানসভা ভাঙচুর করব? আমরা কি মমতা ব্যানার্জী নাকি? আমরা আশীষ ব্যানার্জী? আমরা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক নাকি? বিধানসভা হেরিটেজ। পাবলিক প্রপার্টি। মমতা ব্যানার্জী (Mamata Banerjee) ধ্বংস করে। রতন টাটা ওই জন্য বলেছিলেন, আমি ব্যাড এম ছাড়লাম, গুড এম-এর কাছে যাচ্ছি।’

trinamool congress

আজ বিধানসভায় নাম না নিয়েই মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘তৃণমূলকে ঘেঁটে দিয়ে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ করছিল। এবার আবার অন্য দলে যাওয়ার রিকোয়েস্ট এল বলে।’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্য প্রসঙ্গে শুভেন্দু এদিন রীতিমতো ফুঁসে উঠে বললেন, ‘ও যেরকম নিজে গিরগিটি একটা! ওকে রাজীব গান্ধী যুবনেত্রী করে পরিচিতি দিয়েছিল। রাজীব গান্ধীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। আটানব্বই সালে কংগ্রেস তাঁকে ঘাড় ধাক্কা দিয়েছিল, তারপর রাস্তায় ঘুরছিল। অটলজি তাঁকে শেল্টার দিয়েছিল। বেইমান! গোটা পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক বেইমানের নাম হচ্ছে মমতা ব্যানার্জী। যে রাজীব গান্ধী আর অটল বিহারী বাজপেয়ীর সঙ্গে বেইমানি করেছে।’

Anita Dutta

অনিতা দত্ত, বাংলা হান্টের কনটেন্ট রাইটার। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর। বিগত ৪ বছরের বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত।

X