বাংলা হান্ট ডেস্কঃ সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের সময় জোর করে জমি নেওয়ার বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) নেতৃত্বে আন্দোলন ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছিল। সেই আন্দোলনের প্রভাবেই পরে কেন্দ্রীয় সরকার জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন নীতিতে বড়সড় বদল এনেছিল। প্রশ্ন উঠেছিল, এত জমি-সংকটে ভোগা বাংলায় কী আদৌ বড় শিল্প প্রকল্পের জন্য জমি নেওয়া সম্ভব? দেউচা-পাচামি সেই জবাব দিল বাস্তবে।
দেউচা-পাচামি দেশের সবচেয়ে বড় কয়লা খনি প্রকল্প। ৩,৩০০ একরেরও বেশি এলাকা জুড়ে এই ব্লক। ইতিমধ্যেই প্রায় কোনও জবরদস্তি ছাড়াই ৬০০ একর জমি অধিগ্রহণ করে ফেলেছে রাজ্য সরকার। প্রায় ১,৫০০ জনকে দেওয়া হয়েছে সরকারি চাকরি, পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে পরিবারভিত্তিক পরিকল্পনায়।
কীভাবে হল এই কাজ?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) নীতি স্পষ্ট, শিল্প হবে, কিন্তু মানুষের পাশে নিয়ে। সেই নীতিতেই কাজ করেছে WBPDCL (পশ্চিমবঙ্গ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন)। সিঙ্গুরের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার আগে গ্রামসভা ডাকা হয়েছে, স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা হয়েছে। পরিবারের মহিলাদের সঙ্গেও আলাদা করে আলোচনা করেছে দফতর।
চাহিদা অনুযায়ী কেউ পেয়েছেন নগদ ক্ষতিপূরণ, কেউ পেয়েছেন নতুন ঘর বা দোকান। পরিবারপিছু চাকরি দেওয়ার কথাও রাখা হয়েছে। ৪০টিরও বেশি আদিবাসী গ্রামে তৈরি হয়েছে স্বনির্ভর গোষ্ঠী। এমনকি প্রকল্প এলাকার গাছও (মহুয়া, শাল, অর্জুন ইত্যাদি) বাইরে সরিয়ে এনে রক্ষা করা হয়েছে।
এখন পর্যন্ত অগ্রগতি কী?
জমি অধিগ্রহণ: ৫৮৯.৪৬ একর জমি অধিগ্রহণ শেষ। জমিপিছু ৩৯ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।
চাকরি: জুনিয়র পুলিশ কনস্টেবল পদে ৮৭৭ জন এবং গ্রুপ ডি পদে ৬০৫ জন সরকারি চাকরি পেয়েছেন। এর মধ্যে ৫০০ জন তফসিলি জাতি ও ৭০০ জন তফসিলি উপজাতিভুক্ত।
পুনর্বাসন: ভূমি হারানো পরিবারগুলির জন্য ৭০০ স্কোয়ার ফুটের মডেল বাড়ি গড়ার কাজ শুরু হয়েছে। থাকবে পানীয় জল, বিদ্যুৎ, রাস্তা, মন্দির-মসজিদ-কবরস্থান।
পাথর খনন: ৩২৬ একরের মধ্যে ১২ একরে বেসল্ট পাথর খনন শুরু হয়েছে। এই খননের আয় থেকে রাজ্য ৭১.৫% রাজস্ব পাবে, যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ রাজস্ব ভাগ।
বিশ্বমানের খনন: এখানে কয়লার স্তর অনেক গভীরে (৩০০ মিটার নিচে), ওপরে ২০০ মিটার পাথর। তাই আন্ডারগ্রাউন্ড মাইনিংই একমাত্র উপায়। সেই পরিকল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে।
এই ব্লকে প্রায় ১২০০ মিলিয়ন মেট্রিক টন G9 গ্রেড কয়লা রয়েছে, বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এটি আদর্শ। ইতিমধ্যেই ৬টি আন্তর্জাতিক সংস্থা, যার মধ্যে একটি পোল্যান্ডের, বিডিং-এ অংশ নিয়েছে। আগস্ট-সেপ্টেম্বরে চূড়ান্ত সংস্থা বাছাই করা হবে।
আরও পড়ুনঃ ভোটার লিস্টে রোহিঙ্গা ঢোকানোর ছক? মুখ্য নির্বাচন কমিশনকে চিঠি শুভেন্দুর, নিশানায় মমতা
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে CIL (কোল ইন্ডিয়া) এই ব্লক নিয়ে কিছু করতে পারেনি। পরবর্তী সময়ে কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে দায়িত্ব দেয়। তারপর থেকেই প্রকল্পটি দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে। এখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) বীরভূম সফরের আছেন। মনে করা হচ্ছে, তিনি নিজে দেউচা পাচামি প্রকল্প নিয়ে রিভিউ মিটিং করবেন।