বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ওড়িশায় ল্যান্ড ফল হলেও ইয়াসের তাণ্ডবের এই মুহূর্তে রীতিমতো ক্ষতিগ্রস্থ পশ্চিমবঙ্গ। গৃহহীন হয়ে পড়েছেন বহু মানুষ। প্রচন্ড ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সমুদ্র এবং নদী উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতেও। বিশেষত সুন্দরবন তো বটেই উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার একাধিক অঞ্চলে ছবিটা রীতিমত মর্মান্তিক। কাকদ্বীপ, গোসাবা, নামখানা, ফ্রেজারগঞ্জ প্রভৃতি এলাকায় যেভাবে লন্ডভন্ড করেছে ইয়াস তা রীতিমতো আশঙ্কাজনক। ফের একবার বাঁধ ভেঙেছে বিদ্যাধরীর। গতকাল সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই জানিয়েছিলেন, ১২৪ টি বাঁধ ভেঙে গিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এক কোটিরও বেশি মানুষ। ১৫ লক্ষ মানুষকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হলেও বহু মানুষ হয়ে পড়েছেন গৃহহীন।
শুধু ২৪ পরগনা নয় দুই মেদিনীপুরেও যথেষ্ট ক্ষতি করেছে ইয়াস। রূপনারায়ণের জলে রীতিমতো প্লাবিত হয়েছে তমলুক। জায়গায় জায়গায় ভেঙে পড়েছে গাছ। এই ক্ষয়ক্ষতি আলোচনা করতেই আজ প্রেস কনফারেন্সে ফের একবার সরব হলেন মমতা। আজ বৈঠকে সরাসরি তার রোষের মুখে পড়তে হলো সেচ দপ্তরকে। তিনি বলেন গত বছর আমফানে হত বিদ্যাধরীর বাঁধ ভেঙে গিয়েছিল। কেমন সারাই করা হলো যে কংক্রিটের বাঁধ এক বছরের মধ্যেই আবার ভেঙে গেল? এবার অবশ্য শুধু কথা শুনেই থেমে থাকেননি মমতা অর্থ দপ্তরকে এ বিষয়ে তদন্ত করারও নির্দেশ দেন তিনি।
সেচ দপ্তরের সচিব নবীন প্রকাশকে আজ বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ”বিদ্যাধরী বাঁধ আজকেও ভেঙেছে। দিঘায় তোমরা যা করেছিলে, তার সবটাই ভেঙে গিয়েছে। হয়েছে তো দু-আড়াই বছর! জলের স্রোত ছিল তবে সবটাই কীভাবে ভাঙল? তোমরা নজরদারি করো? প্রতি বছরই বলছো, তিনটে ব্রিজ কমপ্লিট হচ্ছে। তোমার কংক্রিটের ওই ব্রিজ ভেঙে গেল কী করে? এটা তদন্ত হবে। অর্থ দফতর তদন্ত করবে।”সঙ্গে তিনি আরো বলেন আমপানের সময়ও তো টাকা দেওয়া হয়েছিল। কত টাকা দেওয়া হয়েছিল তার হিসেবও এদিন চান তিনি। এর সাথেই তিনি প্রশ্ন করেন টাকাটা কি তাহলে জলেই চলে যাচ্ছে?
সেচ দপ্তরের কাজ নিয়ে যে মুখ্যমন্ত্রী রীতিমতো ক্ষুব্ধ, তা জানাতে এদিন একটুও দ্বিধা করেননি তিনি। সাথে সাথে অর্থমন্ত্রককেও আজ তার রোষের মুখে পড়তে হয়। তিনি বলেন, “আমি অর্থ দফতরকে বলব। আমপানে কোন কোন জায়গা সারানো হয়েছে, তার কত শতাংশ ভাঙল,তা খতিয়ে দেখতে হবে। একদম সেচ দফতরকে টাকা দেবে না।” গতবছর আমফানের সময়ে ৫কোটি ম্যানগ্রোভ চারা লাগানোর কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল গত বছর আমফানে। কিন্তু কাজ তেমনভাবে হয়নি।
ICT
ইতিমধ্যেই এ নিয়ে মুখ খুলেছেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। তার মতে সরকার ম্যানগ্রোভ অরণ্য নষ্ট করে মাছের ভেড়ি তৈরি করছে। আর তার ফলেই বছর বছর এই বিপর্যয়। মমতা এদিন কথা বলতে চান বনদপ্তরের প্রতিনিধির সাথে। যদিও তিনি উপস্থিত ছিলেন না, তবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ”আমি গাছের কথা বলেছি। ম্যানগ্রোভ বলল ৫ কোটি পুঁতবে। কোথায় পুঁতবে? গতবার বড় বড় ভাষণ দিল। ৫ কোটি ম্যানগ্রোভ পোঁতার কাজ ছিল।”
সব মিলিয়ে মুখ্যমন্ত্রী রোষের কারণটা বেশ স্পষ্ট। গত বছর বিরোধীরা দাবি তুলেছিল, ত্রানের জন্য পাওয়া কেন্দ্র সরকারের টাকা নয়ছয় করেছে রাজ্য। আমফান দুর্নীতি প্রসঙ্গেও গতবছর বারবার সরব হয়েছিল তারা। তাই এবার শুরু থেকেই, দুর্নীতি প্রসঙ্গে কিছুটা রাশ টানতে চাইলেন মুখ্যমন্ত্রী অন্তত এমনটাই মনে করছেন অনেকে।