বাংলা হান্ট ডেস্কঃ দার্জিলিং পাহাড়ে ফের উত্তপ্ত রাজনীতি। গোর্খা সমস্যাকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় সরকারের হঠাৎ সিদ্ধান্তে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। শনিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে লেখা এক বিস্ফোরক চিঠিতে মমতা অভিযোগ করেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে কোনওরকম পরামর্শ না করেই কেন্দ্র একতরফাভাবে গোর্খা সমস্যায় মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করেছে।
১৬ অক্টোবর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস ও প্রাক্তন বিএসএফ প্রধান পঙ্কজ কুমার সিংহকে দার্জিলিং, তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চলের রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে আলোচনার দায়িত্ব দেয়। কেন্দ্রের দাবি, গোর্খা জনজাতির দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক দাবি ও সংবেদনশীলতা মেটাতেই এই পদক্ষেপ।
“ফেডারেল কাঠামোর পরিপন্থী কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত”, বার্তা মমতার (Mamata Banerjee)
চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী (Mamata Banerjee) স্পষ্ট জানান, “গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) আওতাধীন এই অঞ্চলের শান্তি, শাসন ও প্রশাসনিক স্থিতিশীলতার সঙ্গে যুক্ত বিষয়ে রাজ্য সরকারকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া ফেডারেল কাঠামোর পরিপন্থী।”
তিনি মনে করিয়ে দেন যে, ২০১১ সালের ১৮ জুলাই দার্জিলিংয়ে কেন্দ্র, রাজ্য ও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার মধ্যে ত্রিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমেই গঠিত হয়েছিল জিটিএ। সেই চুক্তিতে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিজে। মমতার (Mamata Banerjee) দাবি, “সেই সময় থেকে রাজ্য সরকারের প্রচেষ্টায় পাহাড়ে শান্তি ফিরেছে, স্থিতিশীলতা এসেছে।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) আশঙ্কা, কেন্দ্রের একতরফা এই সিদ্ধান্ত পাহাড়ের শান্তি ও সম্প্রীতিকে বিপন্ন করতে পারে। তিনি লেখেন, “গের্খা সম্প্রদায় বা জিটিএ সংক্রান্ত যে কোনও উদ্যোগ রাজ্য সরকারের পূর্ণ পরামর্শে নেওয়াই বাঞ্ছনীয়।” চিঠির শেষে মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন, “রাজ্যের সঙ্গে কোনও পরামর্শ ছাড়াই জারি করা এই নিয়োগপত্র পুনর্বিবেচনা করে বাতিল করুন। এটাই ফেডারেল কাঠামো ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার প্রকৃত চেতনা।”
কিন্তু কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিজেপি ও স্থানীয় দলগুলি। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা (জিএমএম) এবং গোর্খা ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট (জিএনএলএফ) দাবি করেছে যে, এই আলোচনাই পাহাড়ের স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের পথ খুলবে। তবে তৃণমূল কংগ্রেস বলছে, এটি আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে কেন্দ্রের রাজনৈতিক কৌশল। দলীয় সূত্রের মন্তব্য, “গোর্খা ইস্যু নিয়ে কেন্দ্র পাহাড়ের ভোটারদের তুষ্ট করার চেষ্টা করছে, কিন্তু এতে স্থায়ী সমাধান নয়, বরং বিভাজন বাড়বে।”
আরও পড়ুনঃ মা কালীর কৃপা চান? কালীপুজোর রাতে মেনে চলুন এই ৬টি নিয়ম
উল্লেখ্য, ১৯৮০-এর দশক থেকে পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবি দার্জিলিং পাহাড়ের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। ২০১৭ সালের আন্দোলনে ১০০ দিনের দীর্ঘ বনধ ও ১১ জনের মৃত্যু কাঁপিয়ে দিয়েছিল পাহাড়। মমতা সরকারের বক্তব্য, সেই অগ্নিগর্ভ অতীতের প্রেক্ষিতে “অবিবেচনাপ্রসূত কোনও সিদ্ধান্ত” ফের সেই ক্ষতকে জাগিয়ে তুলতে পারে।