বাংলা হান্ট ডেস্কঃ SIR ইস্যুতে ফের কেন্দ্রকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। কোচবিহারে দলীয় সভা থেকে তিনি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলেন। একই দিনে সংসদেও এই ইস্যুতে সরব হয় তৃণমূল। এর মধ্যেই রাজ্যজুড়ে ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে বড়সড় পরিসংখ্যান সামনে আনল নির্বাচন কমিশন।
কোচবিহারের সভা থেকে মমতার (Mamata Banerjee) বার্তা
কোচবিহারের রাসমেলা ময়দানে জনসভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বলেন, “সামনে SIR, পিছনে NRC-এর চক্রান্ত চলছে। আমি বাংলাকে বিভক্ত হতে দেব না।” তিনি জানান, SIR করতে আপত্তি নেই, তবে তাড়াহুড়ো করে নয়। তাঁর কথায়, “দু’বছর সময় নাও। আমরা SIR-এর অনুমতি না দিলে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করত ওরা।” ডবল ইঞ্জিন সরকারকে আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, উত্তরপ্রদেশ ও অসমে ডিটেনশন ক্যাম্প চালু হয়েছে। ওড়িশা থেকে রাজস্থান পর্যন্ত বাঙালিদের উপর অত্যাচার চলছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
মমতার (Mamata Banerjee) দাবি, “এক কোটি মানুষের নাম বাদ দেওয়ার চক্রান্ত হচ্ছে। যারা বেঁচে আছেন, তাদের মৃত দেখানো হচ্ছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের ভোটের নাম তুলতে বলা হচ্ছে।”তিনি জানান, সমস্যা মেটাতে প্রতি গ্রাম পঞ্চায়েতে ‘May I Help You’ ক্যাম্প হবে। সভা থেকে তাঁর কড়া মন্তব্য, “এত খিদে! আর কত খাবে। বাংলা মাথা নত করতে জানে না।”
সংসদে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আক্রমণ
SIR ইস্যুতে সংসদেও সরব হন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “SIR এখন ভোট মুছে ফেলার হাতিয়ার হয়ে গেছে।” তাঁর অভিযোগ, কখনও পাঁচ লক্ষ, কখনও ছয় লক্ষ ভোটার বাদ যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে, আর বিজেপি তা উদযাপন করছে। তিনি আরও বলেন, নাগরিকত্ব ঠিক করার অধিকার নির্বাচন কমিশনের নেই। বিহারের প্রসঙ্গ তুলে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন অনুপ্রবেশকারীদের সরাতে SIR করা হয়েছে, কিন্তু একজনও অনুপ্রবেশকারী ধরা পড়েনি। তিনি বলেন, “রোহিঙ্গারা যদি ঢুকে থাকে, তাহলে সেটা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর প্রধানমন্ত্রীর ব্যর্থতা।” বাঙালি বিদ্বেষের প্রসঙ্গ তুলে কল্যাণ বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার কথা বলেন। পাশাপাশি প্রশ্ন তোলেন, প্রধানমন্ত্রী ‘বঙ্কিম দা’ বললেও তিনি কি কখনও সর্দার প্যাটেলকে ‘দাদা’ বলে ডেকেছেন?
উল্লেখ্য, রাজ্যজুড়ে চলছে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন। নির্ভুল তালিকা তৈরির জন্য নির্বাচন কমিশন পাঁচটি ডিভিশনে পাঁচ জন সিনিয়র আইএএস আধিকারিককে বিশেষ রোল অবজার্ভার করেছে।
- প্রেসিডেন্সি ডিভিশনে: প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের জয়েন্ট সেক্রেটারি কুমার রবি কান্ত সিংহ
- বর্ধমান ডিভিশনে: তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের কৃষ্ণকুমার নিরালা
- জলপাইগুড়ি ডিভিশনে: গ্রামীণ উন্নয়ন দফতরের পঙ্কজ যাদব
- মালদা ডিভিশনে: অর্থ মন্ত্রকের অলোক তিওয়ারি
- মেদিনীপুর ডিভিশনে: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নিরাজ কুমার বানসোর
এক কোটির বেশি ভোটারকে ডাকা হতে পারে
কমিশনের অনুমান, রাজ্যজুড়ে এক কোটিরও বেশি ভোটারকে শুনানি ও নথি যাচাইয়ের জন্য ডাকা হতে পারে।
২০০২ সালের ভোটার তালিকার সঙ্গে যোগসূত্র প্রমাণ করতে না পারলে ব্যাখ্যা দিতে হবে এবং প্রয়োজনীয় নথি জমা দিতে হবে। এক আধিকারিক জানান, “সামান্য ভুল হলেই অযোগ্য নাম তালিকায় ঢুকে পড়তে পারে। তাই পুরো প্রক্রিয়া খুব কড়া নজরে রাখা হচ্ছে।”

আরও পড়ুনঃ ‘চাই না নয়, পাই না’, মুসলিম ভোট নিয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করলেন শুভেন্দু
৫৬ লক্ষের বেশি ভোটার ‘আনকালেক্টেবল’
চিফ ইলেকটোরাল অফিসারের দপ্তর জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ৫৬.৩৭ লক্ষ ভোটারকে ‘আনকালেক্টেবল’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। রাজ্যে মোট ৭.৬৬ কোটি গণনা ফর্ম বিতরণ করা হয়েছে। খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে—
- ২৩.৯৮ লক্ষ মৃত ভোটার
- ১০.৯৫ লক্ষ ঠিকানা না-মেলা ভোটার
- ১৯.৬৫ লক্ষ অন্যত্র চলে যাওয়া ভোটার
- ১.৩২ লক্ষ ডুপ্লিকেট এন্ট্রি
- ৪৭,৮৩২টি নাম অন্যান্য কারণে
এই পুরো প্রক্রিয়াকে বড় চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করছে নির্বাচন কমিশন।












