বাংলা হান্ট ডেস্ক: প্রায় শেষ লগ্নে পৌঁছে গিয়েছে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন (Loksabha Election 2024)। আর একদিন পরেই শুরু হয়ে যাবে পঞ্চম দফার নির্বাচন। আর সময় যত এগিয়ে আসছে ততই যেন আরও ঝাঁঝালো হয়ে উঠছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) আক্রমণ। আগামী দিনে ষষ্ঠ দফায় নির্বাচন রয়েছে পুরুলিয়া,ঝাড়গ্রাম সহ জঙ্গলমহলে (JangalMahal)।
আর তার আগেই শুক্রবার লোকসভা ভোটের প্রচারে ঝাড়গ্রামে গোপীবল্লভপুর এর জনসভায় হাজির হয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই সবাইকে চমকে দিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমোর মন্তব্যে আচমকাই উঠে আসে ছত্রধর মাহাতোর (Chatradhar Mahato) নাম। এতদিন ছাত্রধর প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেলেও নির্বাচন পর্বের আগেই এদিনের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী নিজের মুখেই স্বীকার করলেন ছত্রধরের হাত ধরেই একসময় জঙ্গলমহলে ঢুকেছিলেন তিনি।
একসময় এই ছত্রধর মাহাতোই তৃণমূল কংগ্রেসকে জঙ্গলমহলে লড়াই-সংগ্রাম করতে সাহায্য করেছিল। এদিন সেই পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়েই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি ভুলিনি সেই দিনের কথা। আমি প্রথম জঙ্গলমহলে যার হাত ধরে ঢুকি তার নাম ছত্রধর মাহাতো’। সেইসাথে বাং আমলে ছত্রধর মাহাতোর তৃণমূল করার কথা জানিয়ে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ছত্রধর তখন তৃণমূল কংগ্রেস করত। তখন ছত্রধর ব্লকের সভাপতি ছিল। ২০০৮ সালের কথা বলছি।’
সেইসাথে এদিন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী জানান, বাম আমলে তারাই ছত্রধর মাহাতোকে জেল থেকে ছাড়িয়ে এনেছিলেন। কিন্তু তার ঠিক পরদিনই ঝাড়খণ্ডে বিজেপি একটি কেস দিয়ে আবার গ্রেফতার করে নিয়েছিল ছত্রধরকে। প্রসঙ্গত এই মাওবাদী ঘনিষ্ঠ ছত্রধর মাহাতোর সাথেই মমতার যোগসাজেশের অভিযোগ উঠেছিল।
আরও পড়ুন: ‘মমতার দাম কত?’, অভিজিৎ’কে সরাসরি জানিয়ে দিলেন অভিষেক, এক ছবিতেই তোলপাড় রাজ্য
আর এদিন সেই ছত্রধরকে নিয়ে করা মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পর সেই জল্পনাই আরও জোরালো হল বলে দাবি করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। ইতিপূর্বে বহুবার বামেদের মুখে বারবার শোনা গিয়েছে মাওবাদী-তৃণমূল যোগসাজশের অভিযোগ। সেকথা মনে করিয়ে দিয়েই এদিন সিপিএমের তরফে ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক প্রদীপকুমার সরকার সুর ছড়িয়ে বলেছেন, ‘আমরা যখন বার বার বলেছি, তখন অনেকে বিশ্বাস করেননি। এত দিন পর মুখ্যমন্ত্রী বলার পরে বিষয়টি প্রমাণ হয়ে গেল।’
একই সুরে সিপিএমের প্রবীণ নেতা ডহরেশ্বর সেন বলেছেন, ‘কিষেনজিও বার বার বলতেন, আমার বোন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পশ্চিবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী দেখতে চাই।’ যদিও সেই অভিযোগ খারিজ করে তৃণমূল নেত্রীর মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে তৃণমূলের সহ-সভাপতি প্রসূন ষড়ঙ্গী বলেছেন, ‘ছত্রধর প্রতিষ্ঠান-বিরোধী আন্দোলনে মুখ্য জায়গা নিয়েছিলেন। আর সরকার বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই দু’জনেরই লক্ষ্য ছিল, সরকার বদলানো।’
তবে একাংশের দাবি এই নির্বাচনের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর মুখে ছত্রধর মাহাতোর কথা উঠে আসার পিছনেও রয়েছে বিশেষ কারণ। আসলে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বহু বার দাবি করেছেন, তাঁর হাত ধরেই নাকি জঙ্গলমহলে তৃণমূলের উত্থান হয়েছিল। তাই সেই দাবিকে খণ্ডন করার জন্যই নাকি মমতা এ দিন ছত্রধরের হাত ধরে জঙ্গলমহল ঢোকার কথা জানিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।