‘কোভিডকালে লুকিয়ে বহু চাকরি! মানিকের আমলে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াই দুর্নীতিতে মোড়া’, দাবি চাকরিপ্রার্থীদের

বাংলাহান্ট ডেস্ক : আকণ্ঠ দুর্নীতি! না কোনও মেধা তালিকা না কোনও নম্বর বিভাজন। কেউ চাকরি পেয়েছেন কি না, তা জানতে চাইলে পথ একটাই প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের ওয়েবসাইটে গিয়ে নিজের রোল নম্বর খুঁজে দেখা। মানিক ভট্টাচার্য (Manik Bhattacharya) ইডি (ED) -র হাতে গ্রেফতার হওয়ার পরই নিজেদের দীর্ঘদিনের সমস্ত ক্ষোভ উগরে দিলেন চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁদের একাংশের দাবি, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতির আমলে সম্পূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়াটাই ছিল বিতর্কিত। আপাদমস্তক দুর্নীতিতে ডোবা।

চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, ২০১২ এবং ২০১৪ সালের টেট-এর নিয়োগ প্রক্রিয়ার পুরোটাই এমন অবৈধ ভাবে হয়েছে। আর এসবই হয়েছে মানিক ভট্টাচার্যের নির্দেশে। নিয়োগে স্বচ্ছতার দাবি তুলে মানিকের কাছে দাবিও জানাতে যান তাঁরা। কিন্তু পর্ষদের অফিসে তাঁদের ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। এক চাকরিপ্রার্থী সঙ্গীতা কোলে বলেন, ‘২০১৪ সালে প্রথম দফায় ৪২ হাজার নিয়োগ হয়েছে বলে জানিয়েছিল পর্ষদ। কিন্তু তার প্রমাণ কোথায়? কোনও মেধা তালিকাই তো প্রকাশিত হয়নি। যাঁরা চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের নিয়োগপত্র কোথা থেকে কবে দেওয়া হবে, তা নাকি এসএমএসে জানানো হয়েছে। কিন্তু এমন কেন? কেন তালিকা পর্ষদের ওয়েবসাইটে দেওয়া থাকবে না সমস্ত তথ্য?’

সঙ্গীতাদের দাবি, প্রথম দফায় প্রাথমিকে ২৮ হাজারের মতো নিয়োগ হয়। পরে কোভিডের সময়ে ২০২০ সালে বন্ধ ছিল স্কুল। সেই সুযোগে টাকার বিনিময়ে বহু নিয়োগ হয়ে গিয়েছে। কয়েক জন চাকরিপ্রার্থী জানান, তাঁরা কোভিডের সময়ে জানতে পারেন যে, পাশের গ্রামে প্রাথমিক স্কুলে নিয়োগ চলছে।

অপর এক চাকরিপ্রার্থী অর্ণব ঘোষ বলেন, ‘৪২ হাজার সত্যিই নিয়োগ হয়েছে কি না সন্দেহ ছিল। দ্বিতীয় দফার ১৬,৫০০ নিয়োগ হয়। এটা দেখেই আমরা আরটিআই করেছিলাম। তাতে জানতে পারি, সাড়ে ৯ হাজারের মতো নিয়োগ হয়েছে!’ তাঁদের প্রশ্ন, ‘তা হলে কী করে বিশ্বাস করব যে, প্রথম দফায় ৪২ হাজার নিয়োগ হয়েছিল? এই প্রশ্নের উত্তর মানিকবাবুর কাছে জানতে চেয়েছিলাম। তিনি কোনও উত্তর আমাদের দেননি।’

আরও কয়েক জন চাকরিপ্রার্থীর প্রশ্ন তোলেন, ‘ওএমআর শিট কেন পুড়িয়ে নষ্ট করে ফেলা হল? পর্ষদ যে ভুল প্রশ্নের জন্য প্রার্থীদের নম্বর বাড়াল, তারা তা কোন ওএমআর শিটের ভিত্তিতে করেছে?’ অবশ্য এই বিষয়ে পর্ষদের দাবি, ডিজিটাল ওএমআর-শিট তাদের কাছে আছে। সেই ভিত্তিতেই বাড়ানো হয়েছে নম্বর। ১৬,৫০০ জন নিয়োগের সময়ে প্রশ্ন ভুলের জন্য মামলা হয়েছিল। মামলা করেছিলেন ৭৩৮ জন। আর এক চাকরিপ্রার্থী অর্ণব বলেন, ‘এই মামলা করা ৭৩৮ জনের সকলের কিন্তু চাকরি হয়নি। যাঁরা মামলা করেছিলেন, তাঁদের কয়েক জন ধর্না মঞ্চে রয়েছেন। তা হলে কাদের নিয়োগ করা হল? এই উত্তরও দেন নি মানিক ভট্টাচার্য।’

চাকরিপ্রার্থীরা দাবি করেন, আদালতে নিয়োগে অনিয়ম প্রমাণ হয়ে ২৭৩ জনের চাকরি চলে গিয়েছে। এটা কিছুই নয়। হিমশৈলের চূড়া মাত্র। ২০১২ এবং ২০১৪ সালের সঠিক মেধা তালিকা প্রকাশ হলে এই সংখ্যা কয়েক হাজারে গিয়ে ঠেকবে।


Avatar
Sudipto

সম্পর্কিত খবর