বাংলাহান্ট ডেস্ক: ভারতের মাওবাদী (Maoists) আন্দোলনের ইতিহাসে বড় মোড় নিল মঙ্গলবার। নিহত মাওবাদী নেতা কিষেনজির ভাই মাল্লোজুলা বেণুগোপাল রাও, যিনি ‘ভূপতি’ বা ‘সোনু দাদা’ নামেই পরিচিত, আত্মসমর্পণ করলেন মহারাষ্ট্রে। তাঁর সঙ্গে আত্মসমর্পণ করেছে আরও ৬০ জন সক্রিয় মাওবাদী কমরেড। বাণিজ্যে স্নাতক এই ৬৯ বছরের মাও নেতা গত চার দশক ধরে মাওবাদী কার্যকলাপে যুক্ত ছিলেন। সরকারের দেওয়া পুরস্কার তালিকায় তাঁর মাথার দাম ছিল ৬ কোটি টাকা, যা এক মাওবাদী নেতার জন্য সর্বোচ্চ পুরস্কারগুলির মধ্যে একটি।
আত্মসমর্পণ মাওবাদী (Maoists) নেতা ভূপতির!
এ বছরের শুরুতেই মাওবাদী (Maoists) নেতা কিষেনজির স্ত্রী তারাক্কা, যিনি দণ্ডকারণ্য স্পেশাল জোনাল কমিটির সদস্য ছিলেন, আত্মসমর্পণ করেছিলেন। এবার ভূপতিও পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন, যা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার মতে মাওবাদী সংগঠনের জন্য এক বড় ধাক্কা। পুলিশের দাবি, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র এবং ছত্তিশগড় জুড়ে যে সব ভয়াবহ মাওবাদী হামলা ঘটেছিল, তার পেছনে মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই ভূপতিই।
তবে সূত্রের দাবি, গত কয়েক মাস ধরে ভূপতি সংগঠনের মধ্যে সুর নরম করতে শুরু করেছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, ভারতে মাওবাদী (Maoists) আন্দোলনের প্রভাব ক্রমশ কমে আসছে। লাগাতার নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান, প্রযুক্তিগত নজরদারি এবং সাধারণ মানুষের মাওবাদীদের প্রতি বিরূপ মনোভাব—সব মিলিয়ে সংগঠন কার্যত অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেই তিনি আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেন।
প্রসঙ্গত, ঠিক এক মাস আগেই তেলেঙ্গানায় আত্মসমর্পণ করেছিলেন কিষেনজির স্ত্রী সুজাতা। ১৯৮৪ সালে বিপ্লবী মাওবাদী (Maoists) নেতা মালোজুলা কোটেশ্বর রাও (কিষেনজি)-কে বিয়ে করেছিলেন তিনি। ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুরে এক এনকাউন্টারে নিহত হন কিষেনজি। তারপর থেকেই সুজাতা সক্রিয়ভাবে সংগঠনের নেতৃত্বে যুক্ত ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা ও ছত্তিশগড়ে মোট ১০৬টি মামলা দায়ের ছিল। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, তিনি সব সময় একে-৪৭ রাইফেল বহন করতেন।

আরও পড়ুন :আদানি-গুগল যৌথ উদ্যোগে বিশাখাপত্তনমে ঐতিহাসিক লগ্নি, ভারত পাচ্ছে বিশ্বের অন্যতম আধুনিক তথ্যকেন্দ্র
অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন যে ২০২৬ সালের মার্চ মাসের মধ্যে ভারতকে সম্পূর্ণ মাওবাদমুক্ত করা হবে। সেই লক্ষ্যে বিগত কয়েক মাস ধরে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান তীব্র হয়েছে। বিশেষ করে ছত্তিশগড়, অন্ধ্রপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড ও মহারাষ্ট্রের মাওবাদী অধ্যুষিত অঞ্চলে চলেছে ধারাবাহিক অপারেশন। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ছত্তিশগড়-তেলেঙ্গানা সীমান্তবর্তী কারেগুট্টা পাহাড়ি অঞ্চল মাওবাদীদের (Maoists) শেষ শক্ত ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত।
ভূপতির আত্মসমর্পণ নিঃসন্দেহে এই চলমান অভিযানে এক বড় সাফল্য এনে দিল। কারণ, তিনি ছিলেন মাওবাদী (Maoists) সংগঠনের কৌশল নির্ধারক ও পরিকল্পনাকারীদের অন্যতম। দীর্ঘ ৪০ বছরের লড়াইয়ের পর অবশেষে অস্ত্র নামিয়ে দেওয়ায় একদিকে যেমন প্রশাসনের স্বস্তি, অন্যদিকে দেশের মাওবাদ-বিরোধী অভিযানে এটি এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে।