বাংলাহান্ট ডেস্ক : মুরগির মাংস খাচ্ছেন অথচ মুরগিকে মারাই হলো না, এমনটা কি কখনো হওয়া সম্ভব? আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন একথা একেবারেই অবাস্তব। অবিশ্বাস্য লাগলেও একথা সত্যি! প্রাণী হত্যা না করেই তার মাংস খাওয়া সম্ভব। বর্তমানে উন্নততর বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সাহায্যে মুরগি হত্যা ছাড়াই তার মাংস খাওয়া সম্ভব অথবা নদী বা সমুদ্র থেকে কোনও মাছ ধরে তা না কেটেও রান্না করা যেতে পারে।
কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো, কিভাবে এরকম অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটতে পারে পৃথিবীর বুকে। জানা গিয়েছে, আমেরিকা, ইজরায়েল, সিঙ্গাপুরের মতো দেশে বহু মানুষ ‘ভেগান’ হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সেদেশে এমন খাবার অনবরত তৈরি করা হচ্ছে। কখনও বিভিন্ন গাছ থেকে, কখনও মুরগি বা মাছের দেহের কোষ থেকে, কখনও বা থ্রিডি প্রিন্ট করে এই আমিষ খাবারগুলি তৈরী করা হয়। অথচ নয়া পদ্ধতিতে তৈরী হলেও খাবারের গুণগত মানের ক্ষেত্রে কোনরকমও পরিবর্তন হয় না।
জানা গিয়েছে, ইজরায়েলের একটি সংস্থা ‘রিডিফাইন মিট’ মুরগি, গরু, ভেড়া প্রভৃতির মাংস-সহ বিভিন্ন ধরনের স্টিকও বানায়। কিন্তু অবাক করার বিষয় এই যে, থ্রিডি প্রিন্ট করে বানানো হয় এই মাংসগুলি। এই সংস্থার সিইও এসচার বেন শিট্রিটের কথায়, ‘‘এই মাংস খেয়ে কেউ বুঝতেই পারেন না যে, এগুলি আসল মাংস নয়। এর স্বাদ অবিকল আসল মাংসের মতোই। এমনকি, এর পুষ্টিগত উপাদানও একই। বরং এই মাংসগুলি কোলেস্টেরলমুক্ত যা স্বাস্থ্যের পক্ষেও উপযোগী।’’
ইজরায়েলের পাশাপাশি আমেরিকার ‘ইট জাস্ট’ নামের একটি সংস্থাও ডিম এবং মাংস জাতীয় খাবার উদ্ভিজ্জ প্রোটিন থেকেই তৈরি করে। মাংসের পাশাপাশি, গাছের প্রোটিন নিয়ে ল্যাবরেটরিতে ‘সেল কালচার’-এর মাধ্যমে স্যামন মাছের ফিলে তৈরি করা হয়। এই পদ্ধতিতে মাছ তৈরি করা হয় ইজরায়েলের ‘প্ল্যান্টিশ’ নামক সংস্থায়। এই সংস্থার সিইও ওফেক রনের মতে, তাঁদের এই প্রচেষ্টার ফলে সমুদ্র থেকে মাছ ধরার পরিমাণ কমার সম্ভাবনা বেশি। উপাদানগত বৈশিষ্ট্য ও স্বাদের দিক দিয়ে সাদৃশ্য থাকায় খেতেও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। শিয়ক মিটস’ নামে সিঙ্গাপুরে একটি সংস্থায় কুচো চিংড়ি, গলদা চিংড়ি, কাঁকড়া প্রভৃতির দেহ থেকে কোষ সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরির মধ্যেই আস্ত চিংড়ি বা কাঁকড়ার উৎপাদন হয়।
১৮৮০’-ই পৃথিবীর প্রথম কোনও রেস্তরাঁ, যেখানে কাঁচা মাংস থেকে নয়, বরং গবেষণাগারে বানানো মাংস খাওয়ানো হয়। রেস্তরাঁর কর্মীরা জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত খাবার নিয়ে কোনও অভিযোগ করেননি রেস্তরাঁয় খেতে আসা কোন ব্যক্তিই। ফলে, নিরামিষাশীরাও যে এবার বিজ্ঞানের হাত ধরে আমিষ পদ খেতে পারবেন তা বলাই বাহুল্য।