বাংলা হান্ট ডেস্কঃ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে এসেছে বিজেপি। কিন্তু রাজ্যের এই প্রধান বিরোধী দলকে নিয়েই এখন নানান জল্পনা উঠছে। মুকুল রায় দল ছেড়ে যাওয়ার পর থেকেই বিজেপির অন্দরে অস্বস্তির সৃষ্টি হয়েছে। একের পর এক নেতা-বিধায়করা বেসুরো গাইছেন। আর এই কারণে দলে ভাঙন ঠেকাতে তৎপর হয়েছে গেরুয়া শিবির। দিলীপ ঘোষ বঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতি হলেও, এখন সবদিক থেকে মোর্চা সামলাচ্ছেন নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। আর এবার তিনি দলত্যাগ বিরোধী আইন ও ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগ নিয়ে সোমবার রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
সোমবার বিধানসভা থেকে পায়ে হেঁটে রাজভবনের উদ্দেশ্যে রওনা দেন শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বাধীন বিজেপির বিধায়করা। বিজেপি একুশের নির্বাচনে ৭৭টি আসন পেয়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হয়েছে বাংলায়। কিন্তু বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা কমে গিয়েছে। কারণ হল, বিজেপির দুই বিধায়ক পদত্যাগ করেছেন আর একজন বিধায়ক তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। আর এরপর বর্তমানে বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৪। কিন্তু সোমবার শুভেন্দু অধিকারীর রাজভবন অভিযানে মাত্র ৫০ জন বিধায়কই হাজির ছিলেন। ২৪ জন বিধায়কের অনুপস্থিতি কি বিজেপিকে আবারও অস্বস্তিতে ফেলতে চলেছে?
একদিকে তৃণমূল যখন দাবি করছে যে, তাঁদের সঙ্গে বিজেপির অনেক বিধায়ক যোগাযোগ রাখছে, তখন ২৪ জন বিধায়কের অনুপস্থিতি বিজেপির অস্বস্তি বাড়ানোরই কথা। কিন্তু বিজেপি সূত্রের খবর অনুযায়ী, এতে চিন্তা বা জল্পনার কিছুই নেই। উত্তরবঙ্গ সহ রাজ্যের দূর দূরান্তে থাকা বিধায়করা এদিন কলকাতায় আসতে পারেন নি বলে দাবি সূত্রের। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, শুভেন্দু অধিকারীর এই কর্মসূচির আগেভাগে ঘোষণা হলেই, দূর-দূরান্তের থেকে আসা বিধায়কদের জন্য একটু কষ্টকর ছিল। করোনার জন্য কড়া বিধিনিষেধের কারণেই তাঁরা আর কলকাতায় আসেন নি। এই কারণেই সোমবার ২৪ জন বিধায়ক অনুপস্থিত ছিল বলে দাবি সূত্রের।
উল্লেখ্য, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সোমবার রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ে সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা জানিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। কথামতো সোমবার বিকেলে চারটে নাগাদ বিধানসভা থেকে পায়ে হেঁটে রাজ ভবনে যায় বিজেপির প্রতিনিধি মণ্ডল। সেখানে গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে চা-চক্রে যোগ দেন তাঁরা। বর্তমানে রাজ্যে আইন শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে এবং বিরোধীদলের কর্মী-সমর্থকদের উপর অমানবিয় অত্যাচার হচ্ছে, সেই কথা আবারও রাজ্যপালের কানে তুলে ধরেন শুভেন্দুরা।
বিজেপির প্রতিনিধি মণ্ডলের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তাঁদের নিয়েই সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। আর সেখান থেকেই তিনি আবারও রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেন। রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় সাংবাদিকদের সামনে বলেন, রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসায় যেসব জায়গায় অত্যাচার চলেছে, মুখ্যমন্ত্রী সেখানে কেন যাননি? তিনি রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করে বলেন, ‘রাজ্যে গণতন্ত্র নিঃশ্বাস নিতে পারছে না।” রাজ্যে দলত্যাগ বিরোধী আইন কার্যকর করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন রাজ্যপাল
জগদীপ ধনখড় আবারও রাজ্যের পুলিশ প্রশাসনের দিকে আঙুল তুলে বলেন, ‘উর্দিধারীদের নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করছেন না। তাঁরা শাসক দলের অত্যাচারকে আড়াল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।” উল্লেখ্য, রাজ্যপাল আর রাজ্য সরকারের মধুর সম্পর্ক ধনখড়ের আমলে দেখা যায়নি। বিভিন্ন ইস্যুতে রাজ্যপাল যেমন সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন, তেমনই শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসও রাজ্যপালকে বিজেপির ‘দালাল” বলে আখ্যা দিয়ে ওনার অপসারণ চেয়েছেন।