বাংলাহান্ট ডেস্ক: ভারত সফরে এলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বৃহস্পতিবার সন্ধেয় দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে তাঁর বিমান নামতেই সেখানে হাজির ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। রাষ্ট্রনেতাদের অভ্যর্থনার প্রচলিত নিয়ম ভেঙে ব্যক্তিগতভাবে পুতিনকে স্বাগত জানান মোদি। শুধু তাই নয়, প্রোটোকল অমান্য করে নিজের গাড়িতেই রুশ প্রেসিডেন্টকে নিয়ে ৭ লোককল্যাণ মার্গের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। কূটনৈতিক মহল মনে করছে, এই ‘গাড়ি-কূটনীতি’ শুধু সৌজন্যবোধ নয়, ভারত-রাশিয়ার বিশেষ সম্পর্কের একটি তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা বহন করে।
পুতিনের ভারত (India) সফরে শুরুতেই সারপ্রাইজ দিলেন মোদি
সাধারণত কোনও বিদেশি রাষ্ট্রনেতা ভারতে (India) এলে বিমানবন্দরে তাঁদের স্বাগত জানানোর দায়িত্ব থাকে বিদেশ মন্ত্রকের কোনও উচ্চপদস্থ আধিকারিকের উপর। কিন্তু পুতিনের ক্ষেত্রে দেখা গেল ব্যতিক্রম। ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব এবং কৌশলগত সহযোগিতার গুরুত্ব বোঝাতে নিজেই বিমানবন্দরে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী মোদি। শুধু তাই নয়, কনভয়ে থাকা আলাদা গাড়িতে না উঠে একই গাড়িতে দু’জনের যাত্রা নজর কেড়েছে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলের। দুই শীর্ষ নেতার এই নির্দ্বিধা ঘনিষ্ঠতা আগামী বৈঠকের বার্তাকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে।
আরও পড়ুন: ৪৯,০০০-এরও বেশি ট্র্যাক! মস্কো থেকে দিল্লি সফরে পুতিনের বিমানের দিকে নজর গোটা বিশ্বের
ভারতে (India) পুতিনের এই দৃশ্য দেখেই অনেকেরই মনে পড়ে গেল গত সেপ্টেম্বরের ঘটনা। তিয়ানজিনে এসসিও সামিটের সময়ও মোদি ও পুতিনকে এক গাড়িতে দেখা গিয়েছিল। সেই সময় রাষ্ট্রনেতাদের বৈঠকের বাইরে প্রায় ৪৫ মিনিট রুশ প্রেসিডেন্টের গাড়িতে মোদি সময় কাটিয়েছিলেন। শোনা যায়, এই সিদ্ধান্ত কোনও পূর্বনির্ধারিত সূচির অংশ ছিল না। শেষ মুহূর্তে পরিস্থিতির চাপে ওই ব্যবস্থা করা হয়। পরে বিভিন্ন মহল থেকে এমন জল্পনাও উঠেছিল যে, মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ-র তরফে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে কোনও ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল, এবং পুতিনের গাড়িতে ওঠা হয়তো সেই সম্ভাব্য বিপদকে এড়াতেই জরুরি ছিল।
Delighted to welcome my friend, President Putin to India. Looking forward to our interactions later this evening and tomorrow. India-Russia friendship is a time tested one that has greatly benefitted our people.@KremlinRussia_E pic.twitter.com/L7IORzRfV9
— Narendra Modi (@narendramodi) December 4, 2025
এদিন দিল্লিতে মোদি ও পুতিনের একসঙ্গে গাড়ি যাত্রা তাই শুধু সৌহার্দ্য নয়, নিরাপত্তা ও কৌশলগত পারস্পরিক বিশ্বাসের প্রতীক বলেই ব্যাখ্যা করছেন বিশেষজ্ঞরা। দুই নেতা নিজেদের মধ্যে আলোচনার সুযোগও পান এই সময়। সূত্রের দাবি, রাশিয়া-ভারত প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, আন্তর্জাতিক প্রকল্প, জ্বালানি নিরাপত্তা এবং ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি—সবকিছু নিয়েই অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয় গাড়ি যাত্রার সময়। দুই দেশের সম্পর্ক যে অতীতের মতোই দৃঢ়, তা বৃহস্পতিবারের দৃশ্য স্পষ্ট করে দিয়েছে।

আরও পড়ুন:নৌবাহিনীর জন্য অত্যাধুনিক হেলিকপ্টার! আমেরিকার সঙ্গে ৭,৭৯৫ কোটির প্রতিরক্ষা চুক্তি ভারতের
শুক্রবার আনুষ্ঠানিক বৈঠকে পুতিন ও মোদি বিভিন্ন প্রতিরক্ষা প্রকল্প, কৌশলগত উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহলে ভারত (India)-রাশিয়া সম্পর্ক ঘিরে যে নানা জল্পনা চলছে, তা সত্ত্বেও দিল্লির রাস্তায় একই গাড়িতে মোদি–পুতিনের দৃশ্য যেন বলছে—দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ক আগের মতোই গুরুত্বপূর্ণ এবং দৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে।












