বাংলাহান্ট ডেস্ক:- রাশিয়ার থেকে বেশি পরিমাণে তেল কেনার অভিযোগে ভারতের (India) ওপর রক্তচক্ষু মার্কিন প্রেসিডেন্টের। মার্কিন বাজারে প্রবেশকারী ভারতীয় জিনিসপত্রের ওপর ট্রাম্পের লাগু করা ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে। যার জেরে দ্বিগুণ শুল্ক আরোপ হওয়ায় ভারতীয় রপ্তানিকারকদের ওপর খরচের চাপ বহু গুণ বেড়ে যাবে। এই আবহেই কীভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা যায় সেই নিয়ে মঙ্গলবার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের ডাক দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) দফতরে মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে এই অধিবেশনের আগোয়জন করা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
ভারতের পণ্যে শুল্ক আরোপ (India)
আগামী বুধবার থেকে কার্যকর হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কনীতি (Us Tariff)। এর ফলে ভারত থেকে আমেরিকায় (America) রপ্তানি হওয়া পণ্যের উপর এক ধাক্কায় ৫০ শতাংশ শুল্ক বসবে। এতদিন এই হার ছিল ২৫ শতাংশ। হঠাৎ করেই দ্বিগুণ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তে উদ্বিগ্ন ভারতীয় রপ্তানিকারীরা। জানা যাচ্ছে, এতদিন ২৫ শতাংশ শুল্ক বহন করতে গিয়েই লাভের অঙ্ক অনেকটাই কমে যাচ্ছিল। ফলে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার বাজারে তাঁরা পিছিয়ে পড়ছিলেন। এবার নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে চাপ আরও বহু গুণে বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর দফতরে জরুরি বৈঠক এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আগামীকাল, মঙ্গলবার ২৬ অগস্ট, বড়সড় বৈঠকের ডাক দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর। সূত্রের খবর, বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রীর প্রধান সচিব। বৈঠকে বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রক, অর্থ মন্ত্রক এবং রপ্তানিকারীদের শীর্ষ সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। মূল লক্ষ্য হবে, কোন কোন খাতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়তে পারে তা চিহ্নিত করা এবং স্বল্পমেয়াদি সহায়তা ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নির্ধারণ করা। বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, বিশেষত বস্ত্র, চামড়া, ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য এবং হস্তশিল্প রফতানিকারীরা জানিয়েছেন, শুল্ক বৃদ্ধির ফলে তাঁদের পণ্যের দাম মার্কিন বাজারে ১৫-২০ শতাংশ বাড়তে পারে। এতেই ক্রেতারা বিকল্প বাজার বা অন্য দেশের পণ্যের দিকে ঝুঁকতে পারেন। রপ্তানিকারীদের আশঙ্কা, রপ্তানির অর্ডার বাতিল হওয়া শুরু হলে শিল্পক্ষেত্রে কর্ম সংস্থানও বড় ধাক্কা খেতে পারে। ইতিমধ্যেই বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রক বিভিন্ন রপ্তানিকারী সংগঠন এবং রপ্তানি উন্নয়ন পরিষদের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা করেছে। সূত্রের খবর, সরকার মনে করছে সমগ্র অর্থনীতির জন্য বড় আকারে সহায়তা দেওয়ার চেয়ে খাতভিত্তিক সহায়তাই বেশি কার্যকর হবে। বিশেষত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত, বস্ত্রশিল্প এবং ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য লক্ষ্য করে বিশেষ নীতি আনার সম্ভাবনা রয়েছে।বিকল্প বাজার খোঁজার তাগিদ
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারতীয় রফতানিকারীদের এখন বিকল্প বাজার খোঁজার দিকে মনোযোগী হওয়া উচিত। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারে রফতানি বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ বাজার শক্তিশালী করার দিকেও গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, রপ্তানিকারীদের আস্থায় রেখে স্বল্পমেয়াদি সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে বাজার বৈচিত্র্যকরণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন:- “সেখান থেকেই তেল কেনা হবে, যেখানে ভালো ডিল মিলবে”, মার্কিন রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বার্তা ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের
অর্থনীতিতে প্রভাব নিয়ে আশঙ্কা রপ্তানি ভারতের মোট দেশজ উৎপাদনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফলে আমেরিকার এই দ্বিগুণ শুল্কনীতি কার্যকর হলে ভারতের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও চাপ তৈরি হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, রফতানি আয় হ্রাস পেলে রুপির উপর চাপ বাড়বে, কর্মসংস্থানে ঘাটতি দেখা দেবে এবং ক্ষুদ্র শিল্পের টিকে থাকার লড়াই কঠিন হয়ে উঠবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক বৃদ্ধিকে অনেকেই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখছেন। তবে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক আলোচনার পাশাপাশি রপ্তানিকারীদের আর্থিক সহায়তা ও নীতি ছাড় দেওয়ার পথেই সমাধান খোঁজা হতে পারে। মঙ্গলবারের বৈঠকে ভারত সরকারের প্রতিক্রিয়ার খসড়া চূড়ান্ত করা হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। আগামীকালের এই বৈঠকে কী সিদ্ধান্ত হয়,তা নিয়েই এখন নজর গোটা ভারতের।