বাংলাহান্ট ডেস্ক: ভারত-রাশিয়া বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে দু’দিনের সফরে ভারতে (India) এসে বিশেষ অভ্যর্থনা পেলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বৃহস্পতিবার রাতে প্রোটোকল ভেঙে নিজেই বিমানবন্দরে হাজির হয়ে পুতিনকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দুই দেশের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতার প্রতীক হিসেবে এই দৃশ্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। পরের দিন সাক্ষাৎ ও আলোচনার সময় পুতিনের হাতে একগুচ্ছ সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যের প্রতীকী উপহার তুলে দেন মোদী। ভারতীয় ঐতিহ্য, কারুশিল্প ও আঞ্চলিক পরিচয়ের মিলিত ছাপ ছিল এই উপহারগুলির প্রতিটিতে।
ভারত (India) সফরে বন্ধু পুতিনকে মোদির অনন্য উপহার:
প্রধানমন্ত্রী মোদী পুতিনকে মোট ছ’টি বিশেষ উপহার দিয়েছেন, যার মধ্যে অন্যতম ছিল রাশিয়ান ভাষায় প্রকাশিত ভগবদ্গীতার একটি সংস্করণ। অর্জুন ও কৃষ্ণের মধ্যে মহাভারতের যুদ্ধের আগে হওয়া কথোপকথন নিয়ে রচিত এই গ্রন্থকে মোদী নিজেই ‘দার্শনিক সম্পদ’ বলে উল্লেখ করেছেন। পুতিনের কাছে গীতা তুলে দেওয়ার মুহূর্তের ছবি তিনি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ারও করেন। গীতার পাশাপাশি উপহার তালিকায় ছিল অসমের জগৎবিখ্যাত চা এবং কাশ্মীরের সেরা মানের জাফরান, যা ভারতীয় (India) বৈচিত্র্যের গর্বকে সামনে তুলে ধরে।
আরও পড়ুন: ভারত-পাক সীমান্তের কাছে মিলল রহস্যময় পাকিস্তানি বেলুন! জারি হাই অ্যালার্ট
উপহারের ঝুলিতে বিশেষ নজর কাড়ে ভারতের (India) অন্যতম সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সম্পন্ন রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধিত্বকারী একটি মূল্যবান রুপোর টি-সেট। মুর্শিদাবাদের ঐতিহ্যবাহী রুপোর কারুকাজে তৈরি এই সেটে ছিল কেটলি, চায়ের পেয়ালা ও পরিবেশনের পাত্র। শিল্প, কারুশিল্প ও রাজ্যের ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে অত্যন্ত যত্ন নিয়ে বাছাই করা হয়েছে এই সামগ্রী। অনেকেই মনে করছেন, ২০২৬ সালের মার্চ-এপ্রিলে নির্ধারিত অসম ও পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিতে এই উপহারের অন্তর্নিহিত প্রতীকী গুরুত্বও থাকতে পারে।
এছাড়াও পুতিনকে উপহার দেওয়া হয়েছে মহারাষ্ট্রে তৈরি একটি রুপোর ঘোড়া এবং আগরার মার্বেল পাথরে তৈরি একটি দাবার সেট। ভারতের (India) বিভিন্ন প্রান্তের কারুশিল্পীদের দক্ষতার পরিচয়বাহী এই উপহারগুলি দুই দেশের বন্ধুত্বের সেতুকে আরও দৃঢ় করেছে। দুই রাষ্ট্রনেতার আলোচনায় উঠে এসেছে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা ও জ্বালানি সহযোগিতার প্রসঙ্গ। রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২০৩০ সাল পর্যন্ত অর্থনৈতিক সমন্বয় আরও জোরদার করার বিষয়ে দুই দেশই সম্মত হয়েছে।

আরও পড়ুন: রিলিজের পরেই মন খারাপ করা রাসেলকে কীভাবে KKR-এ ফেরালেন শাহরুখ? জানলে অবাক হবেন
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে, বিশেষ করে জ্বালানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দুই দেশের অবস্থান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার কাছ থেকে খনিজ তেল কেনার কারণে ভারতের (India) পণ্যে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করলেও ভারত নিজের অবস্থান থেকে সরে আসেনি। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পুতিনও—যদি আমেরিকা নিজেই রাশিয়ার তেল কিনতে পারে, তবে ভারতের বিরুদ্ধে আপত্তি কোথায়? এই সফর দুই দেশের কূটনৈতিক বার্তা, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানের ক্ষেত্রে নতুন অধ্যায় সূচনা করল বলেই মনে করা হচ্ছে।












