বাংলা হান্ট ডেস্ক: সিনেমায় (Cinema) আমরা প্রায়শই পুলিশের হাত থেকে বাঁচার জন্য অপরাধীদের বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করার দৃশ্য দেখতে পাই। এমনকি, অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের খুঁজে পেতে রীতিমতো কালঘাম ছুটে যায় প্রশাসনের। ঠিক সেই রেশ বজায় রেখেই এবার বাস্তবের মাটিতেও ফুটে উঠল হুবহু সিলভার স্ক্রিনের সেই দৃশ্য। যদিও, তারপরেই উঠে আসে চমকপ্রদ তথ্যও। জানা গিয়েছে ৩০ বছর ধরে হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকা “মোস্ট ওয়ান্টেড” অপরাধী ওম প্রকাশ ওরফে পাশা শুধু নিজের পরিচয় পরিবর্তন করে গাজিয়াবাদে বসবাসই করছিলেন না, পাশাপাশি, তিনি অনেক ছোট বাজেটের হিন্দি ছবিতেও অভিনয় করেছেন।
আর এই ঘটনা জানতে পেরেই হুঁশ উড়েছে সবার। এমনকি ওম প্রকাশ নিজেই জানিয়েছেন যে, তিনি একাধিক স্বল্প বাজেটের স্থানীয় ছবিতে অভিনয় করতেন। পাশাপাশি, ওম প্রকাশ অভিনীত ছবি “টাকরাও” ইতিমধ্যেই ইউটিউবে ৭ মিলিয়নেরও বেশি ভিউ পেয়েছে। মূলত, ৩০ বছর ধরে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়েছিলেন ওম প্রকাশ ওরফে পাশা। কিন্তু তিনি একটা ভুলও করে ফেলেছিলেন। ওম প্রকাশ তাঁর নতুন পরিচয় আরও নিশ্চিত করতে আধার কার্ড তৈরি করেছিলেন। আর এটাই তাঁর সবচেয়ে বড় ভুল প্রমাণিত হয়েছিল। কারণ তাঁর নতুন এবং পুরোনো সমস্ত নথিতে বাবার নাম একই ছিল। এমতাবস্থায়, হরিয়ানা পুলিশ খবর পেয়েছিল যে “মোস্ট ওয়ান্টেড” অপরাধী উত্তরপ্রদেশের পড়শি রাজ্য হরিয়াণার গাজিয়াবাদে লুকিয়ে রয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ওম প্রকাশ একসময় সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন।
ওম প্রকাশের বয়স এখন ৬৫ বছর, কাজ করেছেন ২৮ টি ছবিতে: এই প্রসঙ্গে “বিবিসি”-র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, গত সপ্তাহে গাজিয়াবাদের একটি বস্তি থেকে ওম প্রকাশকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জানা গেছে, তিনি শুধু নিজের পরিচয়ই বদলান নি, পাশাপাশি সেখানে স্থানীয় এক মহিলাকে বিয়েও করেছিলেন। ওম প্রকাশের মোট তিন জন সন্তান রয়েছে। এছাড়াও, তাঁর বর্তমান বয়স হল ৬৫ বছর। ওম প্রকাশ জানান, তিনি পুলিশের চোখ এড়াতে ট্রাক চালানোর উদ্দেশ্য নিয়ে নিজের নাম-পরিচয় বদলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভজন গাইতেন এবং ২৮ টি স্বল্প বাজেটের স্থানীয় ছবিতে অভিনয়ও করেছেন।
ওম প্রকাশ সেনাবাহিনীর সিগন্যাল কোরে ছিলেন, তাঁকে বরখাস্ত করা হয়: ওম প্রকাশ ওরফে পাশা হরিয়াণার পানিপথ জেলার বাসিন্দা। তিনি একসময় ভারতীয় সেনাবাহিনীর সিগন্যাল কোরে কর্মরত ছিলেন। সেখানে তিনি ১২ বছর ধরে ট্রাক চালাতেন। কিন্তু তারপর তিনি ১৯৮৮ সালে চার বছর ধরে ডিউটি থেকে নিখোঁজ হওয়ার কারণে বরখাস্ত হন। এই প্রসঙ্গে সাব-ইন্সপেক্টর বিবেক কুমার জানান, “ওম প্রকাশের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। ১৯৮৬ সালে একটি গাড়ি চুরির অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও, তাঁর বিরুদ্ধে মোটরসাইকেল, সেলাই মেশিন ও স্কুটার চুরির অভিযোগও ওঠে। বিভিন্ন জেলায় এসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। তখন ওম প্রকাশ ধরাও পড়েন, পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।”
পাশাপাশি তিনি আরও জানান, ১৯৯২ সালে ওম প্রকাশ অন্য একজনের সাথে একটি দল তৈরি করে ছিনতাই করার সময়ে একজন বাইক আরোহীকে ছুরিকাঘাত করেন। এই ঘটনার পর ওম প্রকাশের সহযোগী ধরা পড়েন এবং তাঁকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে ওম প্রকাশ পলাতক ছিলেন। দীর্ঘ তদন্তের পরও তিনি ধরা না পড়ায় পুলিশ তাঁকে পলাতক ঘোষণা করে।
ওম প্রকাশ তামিলনাড়ুতে পালিয়ে গিয়েছিলেন: গ্রেফতারের পর ওম প্রকাশ পুলিশকে জানিয়েছেন যে, ১৯৯২ সালে পলাতক হওয়ার পর, তিনি এক বছর যাবৎ তামিলনাড়ু এবং অন্ধ্র প্রদেশের মন্দিরে লুকিয়ে ছিলেন। তারপর তিনি ফিরে এলেও বাড়ি না গিয়ে গাজিয়াবাদে স্থায়ী হন। সেখানে ট্রাক চালানো শুরু করেন এবং ১৯৯৭ সালে রাজকুমারীকে বিয়ে করেন। আশেপাশের লোকজন তাঁকে বজরংবলী বা বজরঙ্গী নামেই চিনত। সেই সময়ে তিনি ভিসিআর ক্যাসেট বিক্রির একটি দোকানও খুলেছিলেন। সামরিক চাকরির কারণে অনেকে তাঁকে “ফৌজি তাউ” বলেও ডাকতেন। এমতাবস্থায়, ২০০৭ সালে, ওম প্রকাশ স্বল্প বাজেটের স্থানীয় হিন্দি ছবিতে কাজ শুরু করেন।
“মোস্ট ওয়ান্টেড” ওম প্রকাশের উপর ২৫ হাজার টাকার পুরস্কার ঘোষণা করে পুলিশ: ২০২০ সালে, হরিয়াণায় সংগঠিত অপরাধ, মাদকদ্রব্য উদ্ধার এবং সন্ত্রাস সম্পর্কিত মামলাগুলির তদন্তের জন্য একটি বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছিল। সেইসময়ে স্পেশাল টাস্ক ফোর্স তাঁকে “মোস্ট ওয়ান্টেড” ক্যাটাগরিতে রাখে এবং তাঁর উপর ২৫ হাজার টাকার পুরস্কারও ঘোষণা করে। জানা গিয়েছে, বর্তমানে ওম প্রকাশ পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। আদালতে দোষী সাব্যস্ত হলে জেলবন্দি হবেন ওম প্রকাশ ওরফে পাশা।