কঠোর জীবনসংগ্রাম করেও ভিক্ষা করে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছেন ‘পাগলি’ মা

বাংলাহান্ট ডেস্ক: সন্তানকে সবথেকে বেশি ভাল কে বাসে, মা না বাবা?  এই নিয়ে দ্বিমত রয়েছে প্রচুর। কিন্তু একটা বিষয়ে সকলেই একমত হবেন, বাবা-মায়ের থেকে বেশি ভালবাসা, যত্ন আর কেউই দিতে পারবে না সন্তানকে। সন্তানের ছোটখাট খুশি, সুখের জন্য বড় বড় আত্মত্যাগ করতে রাজি থাকেন বাবা-মায়েরা। নিজেরা পড়তে না পারলেও চান সন্তান পড়ুক, মানুষের মতো মানুষ হোক। তার জন্য নিজে হাজার দুঃখ সইতেও রাজি বাবা-মা।

ধনী হোক বা দরিদ্র, মা তো মাই হন। সন্তানের জন্য তিনি পারেন না এমন কাজ নেই। তার জন্য অপমানই যদি সহ্য করতে হয় তাই সই। এই গল্প, বেনজির, এই গল্প এক মায়ের, নাম সবিতা। তবে নাম হয়তো তাঁর জানেন গুটিকয়েক মানুষ। কপালে জুটেছে ‘পাগলি’ তকমা। তবে সেই কথায় খুব একটা পাত্তা দেন না তিনি। মেয়ের চিন্তায় নিজের দিকে নজর দেওয়ার সময় কোথায় তাঁর? মেয়ের পড়াশোনা ও হোস্টেলের খরচ জোগানোর জন্য নৈহাটি স্টেশনের এ মাথা থেকে ও মাথা ঘুরে বেড়ান তিনি, ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে। হ্যাঁ, ভিক্ষা করেই মেয়ে সুনীতার(নাম পরিবর্তিত) পড়াশোনা ও হোস্টেলের খরচ জোগান মা।

মেয়ে পড়ে স্কুলে। হাওড়ার এক হোস্টেলে রেখে তাকে পড়াশোনা করাচ্ছেন সবিতা। মেয়ের প্রসঙ্গ উঠতেই তাঁর চোখে খেলে স্বপ্নের ঢেউ। কখনও মাসে একবার, কখনও বা দুমাসে দুমাসে একবার মেয়ের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। উজাড় করে দেন নিজের ভিক্ষার ঝুলি। ওই মেয়ে ছাড়া ট্রেনে যাতায়াত করা নিত্যযাত্রীদের নিয়েই সবিতার সংসার। তারাই সাহায্য করেন তাঁকে।

0c27f1e8 8275 4d4e 9904 9112ff8ab3bb

কিন্তু এই অবস্থা হল কীকরে সবিতার? জানা গিয়েছে, হালিশহরে বাড়ি ছিল তাঁর। বাবা, মা ও তিন ভাইকে নিয়ে থাকতেন। মাত্র ১৩ বছর বয়সেই জোর করে সবিতার বিয়ে দিয়ে দেন সব্জি বিক্রেতা বাবা। অযোধ্যায় বিয়ে হয় সবিতার। স্বামীর নামও এখন আর মনে নেই তাঁর। শুধু মনে আছে অত্যাচারের কথা। সবিতার কথায়, “শুধু স্বামী নয়, শ্বশুরও জন্তুর মতো অত্যাচার চালাত। শাশুড়ি ছিল না। দিনের পর দিন চলত ওদের অত্যাচার।” দুজনের অত্যাচারে বারবার গর্ভবতী হয়ে পড়েন সবিতা। এক ছেলে, দুই মেয়ের জন্মও দেন। কিন্তু বাঁচেনি তারা। শেষে সুনীতা যখন তাঁর গর্ভে সেই অবস্থায় পালিয়ে হালিশহর চলে আসেন সবিতা। কিন্তু এসে দেখেন ততদিনে মৃত্যু হয়েছে বাবা, মা দুজনেরই। বোনের ওই অবস্থাতেও আশ্রয় দেননি দুই দাদা। বাধ্য হয়ে স্টেশনেই জীবনযাপন শুরু করেন সবিতা। কিন্তু সুনীতাপ জন্ম কীভাবে দিলেন সেই বিষয়ে বলতে চাননি তিনি। শুধু মেয়ের জন্য জমাচ্ছেন টাকা। সেই জমানো কয়েক হাজার টাকাও ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছিল নেশাখোরের দল। কপালে জুটেছে অত্যাচারও। কিন্তু হার মানেনি সবিতা।

এই গল্পের উৎস রাজ্যের WBCS অফিসারদের একটি ওয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ। একদিন WBCS অফিসার সামসুর রহমান নৈহাটি স্টেশনে দেখেছিলেন সবিতাকে। তাঁর জীবনকাহিনির কথা শুনে শেয়ারও করেছিলেন ওয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে। WBCS অফিসারদের সংগঠনের সাধারন সম্পাদক সৌরভ চাকীর জানিয়েছেন, ব্যারাকপুর মহকুমা শাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে যত শীঘ্র সম্ভব সবিতাকে কোনও হোমে পাঠানোর বন্দোবস্ত করতে। পাশপাশি তাঁর মেয়ের পড়াশোনার দিকটাও বিবেচনা করা উচিত। নৈহাটি স্টেশন এর আগেও সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছে, রানু মণ্ডলের জন্য। প্রতিভার যোগ্য সম্মানও পেয়েছেন তিনি। এবার নৈহাটির আরেক মা-ও পান যোগ্য বিচার, সেটাই চাওয়া নেটিজেনদের।


Niranjana Nag

সম্পর্কিত খবর