বাংলা হান্ট ডেস্ক: ছোটবেলা থেকেই যে সব সন্তান বিরাট দারিদ্র্যের মধ্যে নিজের শৈশব অতিবাহিত করে তারা সকলেই চায় বড় হয়ে এমন কিছু করতে যাতে তাঁদের পরিবারের নাম উজ্জ্বল হওয়ার পাশাপাশি দারিদ্র্যের ভ্রূকুটিও যাতে দূরে চলে যায়। যে কারণে তাদের মধ্যে অনেকেই জীবনযুদ্ধের কাঠিন্যের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে শুরু করে প্রস্তুতি।
বর্তমান প্রতিবেদনেও আমরা এমন একজনের প্রসঙ্গ উপস্থাপিত করব যিনি শত বাধা সত্ত্বেও আজ জীবনে বিরাট ভাবে সফলতা অর্জন করেছেন। পাশাপাশি, তিনি ফের প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে, ইচ্ছে থাকলেই সমস্ত কিছু করা সম্ভব।
পুণের জুন্নার তালুকের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম হল রাজুরি। ওই গ্রামের বলবন্তরাও আউটির পরিবারটি ছিল একটি অত্যন্ত দরিদ্র কৃষক পরিবার। বলবন্তরাও কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। মাথা গোঁজার ঠাঁই বলতে ছিল একটি ছোট্ট কুঁড়েঘর। এছাড়া, তাঁর একটি ছেলে ছিল।
বলবন্তরাও সিদ্ধান্ত নেন যে, তাঁর ছেলেকে পড়িয়ে ভালো ভাবে মানুষ করবেন তিনি। কিন্তু সেই সময়েই ঘটে অঘটন। একটি বড় দুর্ঘটনায় দু’টি পা’ই হারিয়ে ফেলেন তিনি। যার ফলে কারোর সাহায্য ছাড়া তিনি হাঁটতেও পারতেন না। এদিকে, ধীরে ধীরে তাঁর চোখেও সংক্রমণ শুরু হয়।
যার ফলে কার্যত অন্ধ ও পঙ্গু বলওয়ান্তরাও ভিতর থেকে ভেঙে পড়েছিলেন। কিন্তু তাঁর স্ত্রী হাল ছাড়েননি। রীতিমত মাঠে অক্লান্ত পরিশ্রম করে ছোট্ট সন্তান এবং বলবন্তরাওয়ের দেখাশোনা করতেন তাঁর স্ত্রী। ধীরে ধীরে তিনি তাঁর সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে শুরু করেন। খালি পায়ে, টিফিন না নিয়ে পুরোনো বইয়ের সাথেই স্কুল যেতে থাকে ছোট্ট ছেলেটি। সমস্ত বাধা-বিপত্তিকে দূরে সরিয়ে রেখে পড়াশোনা চালাতে থাকে সে। প্রথমে জেলা পরিষদ স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা এবং পরে বিদ্যা হাইস্কুলে ভর্তি করা হয় তাকে।
এদিকে, স্কুলের গন্ডী পেরিয়ে ৬-৭ কিলোমিটার কলেজে যেতে সমস্যা দেখা দেয় প্রথমে। এমতাবস্থায়, ছেলেটি গ্রামে মহিষের দুধ বিতরণ করে সাইকেল চালিয়ে কলেজে যেতে শুরু করে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই ছেলেই বড় হয়ে দেশের অন্যতম বিজনেস কোচ দিলীপ আউটি নামে পরিচিতি পান।
তাঁর প্রথম জীবনের লড়াইতে তাঁকে জীবনধারণের জন্য এমন কিছু কাজও করতে হয়েছে যা শুনে অবাক হয়েছেন সকলে। পাশাপাশি, বাচ্চাদের টিউশন পড়িয়েও একটা সময়ে সামান্য রোজগার করতেন তিনি। ধীরে ধীরে বই বিক্রির কাজও শুরু করেন দিলীপ। সেখান থেকে বেশ ভালো রকমের উপার্জনও করেছিলেন তিনি। এরপর ব্যবসার দিকে পা বাড়িয়েছিলেন দিলীপ। কিন্তু, সেই সময়েই দেখা যায় যে, তাঁর বাবা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। এমতাবস্থায়, নাসিকের একটি ভাল হাসপাতালে বাবার চিকিৎসা করান তিনি।
এরপর একটা ফুড কোম্পানির ফ্র্যাঞ্চাইজি নিতে গিয়েও অনেক খরচ করে ফেলেছিলেন দিলীপ। চড়চড় করে বাড়তে থাকে ঋণের বোঝাও। সমস্ত বিপদ যেন গ্রাস করতে থাকে তাঁকে। এদিকে, চিকিৎসার কিছু দিন পরেই তাঁর বাবা মারা যান। এমনকি, তাঁর মাও হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। যদিও, এই সময়ে তাঁর ভাই খুব সাহায্য করেন দিলীপকে। এমতাবস্থায়, স্ত্রীর গয়না বন্ধক রেখে আবার লেখাপড়া শুরু করেন তিনি।
এরপর ছোট ছোট কর্মসূচি নিতে শুরু করেন দিলীপ। এছাড়াও, মানুষকে মোটিভেশন দিতে থাকেন তিনি। ভাইয়ের সহযোগিতায় দিলীপ বিদেশে গিয়ে চাকরি করতে সক্ষম হন। এমনকি, ভারতীয় ইন্টলিজেন্স ডিপার্টমেন্টে পাঠ নেওয়ার সুযোগও পান তিনি। অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সান্নিধ্যের পাশাপাশি, বড় বড় প্রতিষ্ঠানে পড়ানোর সুযোগ পান দিলীপ। উন্নতির গ্রাফ ক্রমশ বাড়তে থাকে তাঁর। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি তাঁর মাকে একটি দামী গাড়ি উপহার দিয়েছেন। দিলীপ আউটি এমন একজন সন্তান যিনি তাঁর মায়ের পরিশ্রমকেও সফল করেছেন।