বাংলা হান্ট ডেস্কঃ ২০১৭ সালে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। রাজনৈতিক কারবারিদের মতে, তারপর থেকেই ধীরে ধীরে এই রাজ্যে আরও বড় উত্থান শুরু হয় বিজেপির। এমনকি ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে ১৮ টি আসন জয়ের পিছনে একদিকে যেমন বড় ভূমিকা ছিল দিলীপ ঘোষের তেমনি অন্যদিকে বড় ভূমিকা ছিল মুকুল রায়েরও, এমনকি কেন্দ্রীয় নেতারাও এ কথা স্বীকার করে নেন। কিন্তু এরপর থেকেই ধীরে ধীরে বিজেপির সঙ্গে সম্পর্কে চিড় ধরতে শুরু করে মুকুলের। এমনকি ২০২০ সালে দল ছাড়ার কথা একপ্রকার মনস্থও করে ফেলেছিলেন তিনি। সেবার অবশ্য কথা বলে নিরস্ত করেন কেন্দ্রীয় নেতারাই।
কিন্তু ফাটল তাতে জোড়া লাগেনি বলেই অভিমত রাজনৈতিক কারবারীদের। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে সেভাবে ময়দানে নামতে চাননি মুকুল। এর আগে মাত্র একবারই বিধানসভা নির্বাচনে লড়েছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় নেতাদের কথায় ফের এবার কৃষ্ণনগর বিধানসভা থেকে ভোটে দাঁড়ান মুকুল। নিজের বিধানসভা আসন থেকে জয়লাভ করলেও প্রচারে তার অনীহা ছিল স্পষ্ট। শুধু তাই নয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও সেভাবে আক্রমন করতে দেখা যায়নি তাকে। এরপর নির্বাচনের ফল প্রকাশ হতেই স্বপ্নভঙ্গ হয় বিজেপির। ফের একবার শুরু হয় দলবদলের জল্পনা। কেন্দ্রীয় নেতারা ফোন করে সেবার নিরস্ত করলেও মুকুলের স্ত্রী অসুস্থ হবার পর থেকেই সম্পর্কে চিড় আরও অনেক বেশী স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
এরই মাঝে অসুস্থ মুকুল-পত্নীকে দেখতে আসেন তৃণমূলের বর্তমান সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। হাসপাতালে দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ কথা হয় অভিষেক এবং শুভ্রাংশুর। মুকুল পুত্রের সঙ্গে কথোপকথনের পর থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে ফুল বদলের জল্পনা প্রায় প্রকাশ্যে এসে পড়ে। এরপর দিলীপ ঘোষের ডাকা বৈঠকেও অনুপস্থিত ছিলেন মুকুল রায় এবং নিজের ঘনিষ্ঠ মহলের সঙ্গে সল্টলেকের বাড়িতে বৈঠকও করেন তিনি। যার ফলে মোটামুটি পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল এ যাত্রায় আর ফাটল জোড়া লাগানো প্রায় অসম্ভব বিজেপির পক্ষে।
অবশেষে আজ চার বছর পর ফের একবার তৃণমূল ভবনে দেখা গেল মুকুল রায়কে। সঙ্গী বীজপুরের প্রাক্তন বিধায়ক তথা মুকুল পুত্র শুভ্রাংশু রায়। এদিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ তৃণমূল ভবনে পৌঁছান মুকুল। একইসঙ্গে পৌঁছান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তারপর একে একে আসেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুব্রত বক্সি সহ দলের অন্যান্য শীর্ষ নেতৃত্ব। আপাতত মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক চলছে মুকুলের। সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই বৈঠক শেষেই তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন মুকুল রায়। কারণ ইতিমধ্যেই তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠকের ডাক দিয়েছেন মমতা। তাই এই বৈঠক যে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ তা আর নতুন করে বলে দিতে হয় না।
অন্যদিকে ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর, তৃণমূলে যোগ দিলে নিজের বিধায়ক পদ ছেড়ে দিতে পারেন মুকুল রায়। তার বদলে তাকে রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে পাঠানোর কথাও শোনা যাচ্ছে ইতিউতি। এখন মুকুল রায় একাই ঘরে ফেরেন নাকি এই ‘ঘর ওয়াপাসির’ তালিকাটা অনেকখানি লম্বা সে দিকেই নজর থাকবে সকলের।