বাংলা হান্ট নিউজ ডেস্ক: ভারতের তারকা পেসার মুনাফ প্যাটেলের (Munaf Patel) কথা সকলেই জানেন। এই তারকা মিডিয়াম পেসার ভারতের ২০১১ সালের বিশ্বকাপজয়ী (ODI World Cup 2011) ভারতীয় দলের (Team India) গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির (MS Dhoni) হাতে সেরার শিরোপা তুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে তার অবদান ছিল অত্যন্ত বেশি। সেই বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে (India vs Bangladesh) অসাধারণ বোলিং করে ভারতকে বড় ব্যবধানে জিতে টুর্নামেন্টে যাত্রা শুরু করতে সাহায্য করেছিলেন তিনি।
ভারতের জার্সিতে তিনি ক্রিকেটের ইতিহাসে অমর হয়ে গিয়েছেন। যদিও ২০১১ বিশ্বকাপের পর খুব একটা দীর্ঘায়িত হয়নি তার কেরিয়ার। ধীরে ধীরে ভারতীয় ক্রিকেটের মূলস্রোত থেকে হারিয়ে গিয়েছিলেন এই তারকা মিডিয়াম পেসার। কিন্তু তার মত একজন মানুষের পক্ষে এই পর্যায়ে সাফল্য পাওয়াটা যেন এক রূপকথার গল্প সত্যি হওয়ার মতন ছিল। গুজরাটের ইকহারের এক দরিদ্র দিনমজুরের বাড়িতে জন্ম নিয়েছিলেন মুনাফ। কিছুটা বড় হওয়ার পর পরিবারের দারিদ্রতার কারণে তাকে ৩৫ টাকা মাইনের বিনিময়ে একটি টাইলস ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে হয়েছে।
আটঘন্টা হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের পর সামান্য কিছু মজুরি পেতেন মুনাফ। বড় স্বপ্ন দেখার ক্ষমতা ছিল না তার পরিবারের। তার বাবাও চাইতেন ছেলে আগে থেকেই এই কাজে দক্ষ হয়ে উঠুক যাতে ভবিষ্যতে সমস্যা না হয়। ছেলের ক্রিকেট পছন্দ হলেও ক্রিকেটকে যে পেশা বানানো যায় তাদের মতন পরিবারে, এমনটা ধারণাও করাও সম্ভব ছিল না। তার বাবাও ধারণা করতে পারেননি। কিন্তু মুনাফ জুতোর অভাবে পায়ে চটি পড়েই বিভিন্ন জায়গায় খেপ খেলে বেড়াতেন।
এমন করেই ক্রিকেট আগ্রহী ইউসুফ ভাইয়ের নজরে পড়ে যান মুনাফ। মুনাফের প্রতিভা দেখে ওই ক্রিকেটপ্রেমী ব্যক্তিটি তাকে জুতো কিনে দিয়েছিলেন একজোড়া এবং ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন একটি ক্রিকেট ক্লাবের নিয়মিত খেলার। সেখান থেকেই একবার কিরণ মোরের অ্যাকাডেমিতে বোলিং করতে গিয়ে প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটারের নজরে পড়ে যান তিনি। তার দক্ষতা দেখে তাকে চেন্নাইয়ের এমআরএফ পেস ফাউন্ডেশনে ডেনিস লিলির কাছে প্রশিক্ষণ নিতে পাঠান। সেখানে তার প্রতিভার পূর্ণবিকাশ ঘটে।
এরপর আস্তে আস্তে তার নামটা ক্ষতি থাকে এবং সচিন টেন্ডুলকারের নজরে পড়ে তার উদ্যোগে মুম্বাইয়ের হয়ে রঞ্জি খেলা শুরু করেন তিনি। এরপর ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করার পুরস্কার স্বরূপ ২০০৬ সালে মুম্বাইয়ে তার টেস্ট অভিষেক ঘটে। ২০১১ বিশ্বকাপেও শুরুতে তার খেলার কথা ছিল না। কিন্তু তারকা মিডিয়াম পেসার প্রবীণ কুমার চোট পাওয়ায় তার জায়গায় দলে আসন মুনাফ। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে ভারতীয় দলের জার্সিতে মোট ম্যাচ খেলে ১২৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে তিনি ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করেন। তার উত্থানের কাহিনী নিঃসন্দেহে যে কোনও মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে।