‘না পালালে মেরে ফেলব’, অসমের গ্রামের একমাত্র হিন্দু পরিবারকে হুমকি! জ্বালিয়ে দিল বাড়িও

বাংলাহান্ট ডেস্ক : ‘সংখ্যালঘু’ হিন্দু পরিবারকে ক্রমাগত হুমকি। অবশেষে তাঁদের বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দিয়ে ‘ফতোয়া’ জারি করা হল, ‘পালিয়ে যা এখান থেকে, নাহলে প্রাণেও মেরে দেবো’। কেড়ে নেওয়া হল তাঁদের সম্পত্তিও। লজ্জাজনক এই ঘটনা ঘটেছে আসামের (Assam) মোরীগাঁও এলাকায়। এ হল সেই মোরীগাঁও, যেখানে একটি অবৈধ মাদ্রাসা ভেঙে দেওয়ার জন্য সরকারের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিল হিন্দু-মুসলিম সব ধর্মের মানুষই।

রাজু হরিদাস নামের এক ব্যক্তি তাঁর পরিবারকে নিয়ে লহরীঘাট এলাকায় বাস করতেন। মুসলিম অধ্যুষিত এই গ্রামে রাজুর পরিবারই একমাত্র হিন্দু। তাঁরা এই গ্রামে বেশ কয়েক পুরুষ ধরে বসবাস করছেন। আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে ইংরেজ আমলে রাজুর পূর্ব পুরুষ এই গ্রামে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু এখন মুসলিম উগ্রপন্থীদের ‘দয়ায়’ পূর্ব পুরুষের ভিটে-মাটি ছেড়ে, গ্রাম ছেড়ে, নিজের সম্পত্তি ছেড়ে পালিয়ে যেতে হচ্ছে রাজু হরিদাসকে।

জানা যাচ্ছে, লহরীঘাট এলাকায় আগে হিন্দু বসতি ছিল। কোনও এক সময় এক মুসলিম পরিবার এসে সেখানে বাস করতে শুরু করে। তারপর থেকে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে মুসলিম পরিবারের সংখ্যা। কিছু বছরের মধ্যেই সংখ্যা গরিষ্ঠ হয়ে যায় তারা। মুসলিম কট্টরপন্থীরা অত্যাচার শুরু করে হিন্দুদের উপর। এক এক করে গ্রাম ছেড়ে, এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় হিন্দু পরিবারগুলি। গোটা এলাকায় এখন মাত্র ১৬ টি হিন্দু পরিবার রয়েছে। তাদেরও বাস ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। আজ বাদে কাল হয়ত সব কিছু ছেড়ে চলে যেতে হবে তাঁদেরও।

রাজু রবিদাস কিন্তু গরীব নন। তাঁর নামে প্রায় এক একরেরও বেশি জমি রয়েছে। কিন্তু তাঁর প্রতিবেশি আব্দুল জলিলের দীর্ঘদিন ধরেই ওই জমির উপর নজর ছিল। আব্দুলের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ২৫ জন। সবাই মিলে মাঝেমধ্যেই হুমকি দিত রাজুকে। আব্দুলের পরিবারের লোকজন যখন তখন রাজুর পরিবারকে মারধর করত। সম্প্রতি আব্দুল রাজুকে শাসিয়ে যায় ঘর বাড়ি ছেড়ে চলে না গেলে প্রাণে মেরে ফেলবে। কয়েক বছর আগে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে সপরিবারে যান রাজু হরিদাস। ফিরে এসে দেখেন দাউদাউ করে জ্বলছে তাঁর ঘর বাড়ি। চোখের সামনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় সব কিছু।

অবশেষে এই খবর পৌঁছায় মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার কানে। তৎক্ষণাৎ পদক্ষেপ করেন তিনি। ওই পরিবারকে সুরক্ষা দিতে নির্দেশ দেন পুলিসকে। তারপরই জেলার এসপি বিরাট পুলিস বাহিনী নিয়ে হাজির হন ওই পরিবারকে সুরক্ষা দিতে। আপাতত ওই গ্রামেই বাস করছে রাজু রবিদাসের পরিবার। কিন্তু বিভিন্ন মহলে একটাই প্রশ্ন আর কত দিন?

Avatar
Sudipto

সম্পর্কিত খবর