বাংলা হান্ট ডেস্ক: পৃথিবীতে এমন অনেক রহস্য রয়েছে যেগুলির সমাধান করতে গিয়ে রীতিমতো কালঘাম ছুটে যায় বিজ্ঞানীদের (Scientists)। এমনকি, বছরের পর বছর ধরে ওইসব রহস্যের সমাধানের জন্য গবেষণা চালিয়ে যান তাঁরা। এমনকি, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার সঠিক সমাধানও পাওয়া যায় না।
তবে, এবার একটি বড়সড় তথ্য সামনে এসেছে। মূলত, ১৯৪৮ সালে ভারত মহাসাগরে খোঁজ পাওয়া একটি বিশাল গর্তের রহস্যের বিষয়টি এবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে। এই গর্তটি ডাচ জিওফিজিসিস্ট ফেলিক্স অ্যান্ড্রিস ভেনিং ম্যানেজ আবিষ্কার করেছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি ভারতীয় বিজ্ঞানীরা এই রহস্যজনক গর্তের সমাধান করেছেন।
জানিয়ে রাখি যে, এই গর্তটি “Indian Ocean Geoid Low” নামে পরিচিত। এটি ২ লক্ষ বর্গমাইল জুড়ে বিস্তৃত এবং এটি পৃথিবীর উপরের অংশ থেকে ৬০০ মাইল অর্থাৎ ৯৬০ কিলোমিটার গভীর। মনে করা হয় যে, এই অঞ্চলে খুব কম মাধ্যাকর্ষণ রয়েছে।
এমতাবস্থায়, ভারতীয় ভূ-বিজ্ঞানী দেবাঞ্জন পাল এবং আত্রেয়ী ঘোষ এই রহস্যময় গর্ত নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, এতদিন ধরে তৈরি এই গর্তের রহস্যের সমাধান এর ভেতরেই রয়েছে। তাঁদের মতে, এই জিওডটি প্রায় ২৯ মিলিয়ন বছর আগে যখন ভারত মহাসাগর তৈরি হচ্ছিল তখনই তৈরি হয়। তাঁরা বলেন, এটির সম্পূর্ণ তথ্যের জন্য পৃথিবীর প্লেট টেকটোনিক্সের গতি সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন।
মূলত, পৃথিবীর গঠন কতকগুলি প্লেট দ্বারা গঠিত। যাকে প্লেট টেকটোনিক্স বলা হয় এবং এই প্লেটগুলির মধ্যে একটি অবিরাম নড়াচড়া চলতে থাকে। যাকে প্লেট টেকটোনিক্স মুভমেন্ট বলে। প্রকৃতপক্ষে, যখন ভারতীয় উপমহাদেশ আফ্রিকা থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছিল তখন যেখানে ভারত, ভারত মহাসাগর এবং হিমালয় রয়েছে, সেখানে “টেথিস সাগর” ছিল।
গবেষকরা জানতে পেরেছেন যে, যখন ভারত মহাসাগর গঠিত হয়েছিল তখন পৃথিবীর ম্যান্টেলের পদার্থ এবং শিলার গলিত পদার্থ বেরিয়ে আসার কারণে ভারত মহাসাগরে এই ধরণের গর্ত তৈরি হতে শুরু করে। মূলত, এই এলাকায় মাধ্যাকর্ষণ অনেক কম ছিল। পাশাপাশি, এই গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে, যতক্ষণ পদার্থগুলি ম্যান্টেল থেকে বেরিয়ে আসতে থাকবে ততক্ষণ এই গর্ত থাকবে। মূলত, পৃথিবীর ম্যান্টেলের যে অংশ থেকে এই পদার্থগুলি আসছে তা কয়েক মিলিয়ন বছর আগে সমাহিত “টেথিস সাগর”-এর অংশ ছাড়া আর কিছুই নয়।