বাংলা হান্ট ডেস্কঃ আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের এক বছর পেরিয়ে গেলেও ন্যায়বিচার হয়নি, এই অভিযোগে ফের পথে নামলেন জুনিয়র ডাক্তার ও নাগরিক সমাজ। শনিবার নবান্ন অভিযানের (Nabanna Abhijan) ডাক ঘিরে শহরজুড়ে কড়া পুলিশি নজরদারি ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু হয়েছে। নির্যাতিতার মা-বাবাও থাকবেন এই কর্মসূচিতে, যার আগেই শ্যামবাজারে রাতভর মশাল মিছিল ও প্রতিবাদে সরব হয়েছে আন্দোলনকারীরা।
পতাকাবিহীন এই অভিযানকে (Nabanna Abhijan) ভয় পাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী?
শুক্রবার রাতে শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়ে মশাল হাতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। মঞ্চে উঠে নির্যাতিতার মা বলেন, “আজও প্রতি রাতে মেয়ের কান্না শুনি। যতই ব্যারিকেড থাক, আগামীকাল নবান্ন অভিযান (Nabanna Abhijan) হবেই।” বাবার অভিযোগ, এক বছর পেরোলেও সিবিআই কোনও স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেনি, আর প্রশাসনও সহযোগিতা করেনি। তাঁর দাবি, পতাকাবিহীন এই অভিযানকে ভয় পাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী, তাই পুলিশি বাধা তৈরি হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৮ অগস্ট রাতে কলেজের সেমিনার হল থেকে উদ্ধার হয়েছিল রক্তাক্ত দেহ। ময়নাতদন্তে উঠে আসে, ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছিল অভয়াকে। আন্দোলনকারীদের দাবি, মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায় ছাড়া বাকিরা এখনও অধরা। এ বার শনিবার রাতে কলেজ স্কোয়ার থেকে মশাল মিছিলের ডাক দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট, স্লোগানে গর্জে উঠছে, “তিলোত্তমার বিচার চাই”, “নিরাপত্তাহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মানি না, মানব না”।
রাজ্যের শাসক দলের দাবি এই আন্দোলনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। এই অভিযোগ উড়িয়ে নির্যাতিতার মা পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, মেয়ের বিভাগের সহপাঠীরা আন্দোলনে নেই কেন। বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর হুঁশিয়ারি, “নবান্ন অভিযানে (Nabanna Abhijan) পুলিশ হাত তুললে গোটা রাজ্য ৭২ ঘণ্টা স্তব্ধ হবে”। অন্যদিকে বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এটি বিজেপি পরিচালিত কর্মসূচি।
শনিবার শহর জুড়ে নিয়ন্ত্রিত হবে ট্রাফিক চলাচল (Traffic Control)
পুলিশ জানিয়েছে, নবান্ন অভিযানের (Nabanna Abhijan) জন্য কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি। তবুও কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও একাধিক ব্যারিকেড বসানো হয়েছে নবান্নের আশপাশে। শনিবার ভোর ৪টে থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিদ্যাসাগর সেতু, রেড রোড, মেয়ো রোড, এজেসি বোস রোড, হাওড়া সেতুসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় জরুরি পরিষেবার গাড়ি ছাড়া সমস্ত ধরনের পণ্যবাহী গাড়ির চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে।
আরও পড়ুনঃ ৭৬৬ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলায় টাটার জয়, রাজ্যের আবেদন ফেরালো সুপ্রিম কোর্ট
পূর্ব অভিজ্ঞতা বলছে, নবান্ন অভিযানকে (Nabanna Abhijan) কেন্দ্র করে উত্তেজনা তৈরি হতে পারে। তাই বিদ্যাসাগর সেতুতে মিছিল আটকাতে কন্টেনার, স্টিল ব্যারিকেড, জলকামান, গার্ডওয়াল, সবই প্রস্তুত রেখেছে পুলিশ। কলকাতা হাইকোর্ট অবশ্য জানিয়েছে, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সবার মৌলিক অধিকার, আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করাই পুলিশের দায়িত্ব। এক বছর পরও ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় থাকা অভয়ার পরিবার ও আন্দোলনকারীদের নজর এবার নবান্ন অভিযানের পর পরিস্থিতি কোন পথে মোড় নেয়।