বাংলা হান্ট ডেস্কঃ প্রথা অনুযায়ী, রাজ্যে যেসমস্ত কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্প চালু রয়েছে সেগুলির জন্য অর্ধেক পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করে থাকে কেন্দ্রীয় সরকার। আর বাকি আর্থিক ভার বহন করে রাজ্য সরকার। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এমন একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্প চালু রয়েছে যেখানে এখনও পর্যন্ত নিজেদের বরাদ্দের টাকা দেয়নি কেন্দ্রীয় সরকার। আবাস যোজনা,গ্রামীণ সড়ক যোজনা, ১০০ দিনের কাজ সহ এই তালিকায় রয়েছে কেন্দ্রের ‘জল জীবন মিশন’ (Jal Jeevan Mission)। রাজ্যে যার নাম জল স্বপ্ন। গত বছর থেকেই এই প্রকল্পের ভাগের টাকা পায়নি পশ্চিমবঙ্গ। যা নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে নবান্নে (Nabanna)। এই পরিস্থিতিতে বিপুল আর্থিক চাপ সত্ত্বেও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের বাজেটের বরাদ্দ এবার দ্বিগুণের বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার।
জল প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়াল নবান্ন (Nabanna)
সরকারি আধিকারিকদের একাংশ এপ্রসঙ্গে জানিয়েছেন নতুন অর্থবর্ষে এই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়েছে কেন্দ্র সরকার। তাই এক্ষেত্রে যাতে কেন্দ্রের বরাদ্দ অবাধ থাকে, তার জন্য এই প্রকল্পে রাজ্যের (Nabanna) ভাগের প্রায় পুরো টাকা দেওয়ার আগাম ঘোষণা করা হয়েছে। একই সাথে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রত্যেকটি গ্রামীণ পরিবারে পরিশ্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ শেষ করতেও মরিয়া রাজ্য সরকার। অর্থ বরাদ্দের পাশাপাশি কাজের বিষয়ে সদিচ্ছার কথা জানিয়েও বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারকে।
প্রসঙ্গত ২০১৯ সাল থেকে শুরু হয়েছিল এই ‘জল জীবন মিশন’। যা ২০২৪ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সহ দেশের একাধিক রাজ্যে এই প্রকল্পের কাজ বাকি রয়েছে এখনও। তাই ওই রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনার পর কেন্দ্র ঠিক করেছে এই প্রকল্পের সময়সীমা বাড়িয়ে ২০২৮ সাল করা হবে। আগামী পয়লা ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করে এই প্রকল্পের জন্য প্রায় ৬৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করার কথা ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন।
রাজ্য (Nabanna) আশাবাদী, নতুন অর্থবর্ষে অন্যান্য রাজ্যের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের জন্যও বরাদ্দের ঝুলি উপুড় করবে কেন্দ্র। তাই রাজ্য বাজেটে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জন্য প্রায় ১১ হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত আগে এই দফতরের জন্য বরাদ্দের পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা।
প্রশাসনের এক কর্তা জনিয়েছেন, প্রথা অনুযায়ী এই প্রকল্পের জন্য অর্ধেক খরচ কেন্দ্র দিলেও, বাকি অর্ধেক দেয় রাজ্য (Nabanna)। তাই, কেন্দ্র তাদের একটি দফার টাকা দিলে সমপরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করতে হয় রাজ্যকে। রাজ্য বাজেটে ওই দফতরের জন্য বিপুল অর্থ বরাদ্দ করে নিজেদের ভাগের প্রায় পুরো অর্থের সংস্থান করে রাখা হয়েছে। তাই এই প্রকল্পের প্রতি যে রাজ্যের সদিচ্ছা রয়েছে তা নিয়ে কেন্দ্রের কোনো দ্বিধা থাকার কথা নয়।
আরও পড়ুন: দুর্নীতির অভিযোগ খারিজ? রাজ্যকে দারুণ মার্কস দিয়ে নতুন তকমা দিল কেন্দ্র
কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে একাধিকবার সরব হয়েছে রাজ্য। তাই আবাস যোজনা থেকে শুরু করে গ্রামীণ সড়ক যোজনা কিংবা কিংবা ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রের বরাদ্দ বন্ধ থাকায় নিজস্ব কোষাগার থেকে টাকা দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বান্দ্যোপাধ্যায়। তবে এতদিন ব্যতিক্রম ছিল তবে জল জীবন মিশন। গত বছরের অগস্টে মাসেও কেন্দ্র এবং রাজ্যের সমপরিমাণ বরাদ্দে প্রায় ২৫০০ কোটি টাকা ব্যবহার করা হয়েছিল এই প্রকল্পে। কিন্তু তাল কাটে গত নভেম্বরে। ওই সময় এই প্রকল্পের জন্য রাজ্য অগ্রিম প্রায় ১২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করলেও সমপরিমাণ অর্থ দেয়নি কেন্দ্র। তারপর থেকেই এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়েও উদ্বেগ বাড়তে শুরু করে প্রশাসনের অন্দরে।
রাজ্যের (Nabanna) শীর্ষকর্তাদের একাংশের মতে নতুন করে এই প্রকল্পের সময়বৃদ্ধি করায় এবং কেন্দ্রীয় বাজেটে এই প্রকল্পের জন্য নতুন করে বরাদ্দ করায় নতুন অর্থবর্ষ থেকে আবার টাকা পাওয়ার আশা আছে। কেন্দ্রের তথ্য বলছে, ১১টি রাজ্যে এই প্রকল্প একশো শতাংশ কার্যকর হয়ে গিয়েছে। এছাড়াও মোট ১৭টি রাজ্যে প্রকল্পের অগ্রগতির হার ৭৬.৪৩% থেকে ৯৭.২৭%-র মধ্যে রয়েছে। তবে পশ্চিমবঙ্গে এই প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে ৫৪.৬৪%।