বাংলা হান্ট ডেস্ক: একসময় করেছিলেন নিজের বিয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। নাবালিকার সাহস দেখে পুরস্কৃত করেছিলেন রাজ্য সরকারও। কিন্তু সেই নাবালিকাই এবার ডুবালো স্কুলের নাম, পরিবারের নাম। নাবালিকাকে নিয়ে ছিঃ ছিৎকার গোটা সমাজে। বর্তমানে আমরা উন্নতির সর্বোচ্চ পর্যায় পৌঁছে গিয়েছি তবে খাতায়-কলমে উন্নতি করলেও মানসিক চিন্তাধারাটা এখনো সেই সেকেলে থেকে গেছে। তাইতো নদীয়ার (Nadia) বিথীকার বাবা-মা ঠিক করেছিলেন ১৭ বছরেই মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেবেন।
নদীয়ার (Nadia) বিথীকার ১৬ বছরে বিয়ে:
নদীয়ার (Nadia) ভীমপুরের শিমুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী বিথীকা। পড়াশোনাতে খুব যে মেধাবী তা নয়, ওই কোনরকমে চলে যায়। বাড়ি তার নদীয়ার ভীমপুরে আমঝুপি এলাকায়। বর্তমানে তার বয়স এখন ১৭। কিন্তু তার বাবা মা চেয়েছিলেন ১৬ বছর বয়সেই তাকে সাংসারিক জীবনে ঠেলে দিতে। যদিও তখন বীথিকা বুঝতেন না সাংসারিক জীবন কি? তখন তার কাছে জগৎ বলতে বাড়ির চার দেওয়াল। এই চার দেয়ালের মধ্যেই তিনি বিভিন্ন রকমের স্বপ্ন বুনছেন। ক্লাসের শিক্ষক শিক্ষিকাদের কাছে শুনেছেন অল্প বয়সে বিয়ে করে নিলে জীবন ঠিক কিভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই বাড়িতে তার বিয়ের কথা শুনতেই তার মনে আতঙ্ক গ্রাস করে।
যদিও প্রথম দিকে বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে তিনি কোন কথা বলেছিলেন না। কিন্তু স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের কাছ থেকে জীবনের সংজ্ঞা বুঝতে পেরে হয়ে ওঠেন প্রতিবাদী। তবে বিয়ে আটকানোর জন্য তিনি কি করবেন না করবেন সে কথা ভেবে পাননি। সেপ্টেম্বরেই তার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। তাই সাহস করে তিনি এ কথা নিজের বান্ধবীদের সাথে খুলে বলেন। এরপর বীথিকা এবং তার বান্ধবীরা মিলে স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের একথা জানান। নিজের ছাত্রীর মুখে এমন কথা শুনে তার পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। এরপর স্কুলের শিক্ষিকারা দলবদ্ধ হয়ে বিথীকার বাড়িতে গিয়ে অনুরোধ জানান তার বিয়ে বন্ধ করার। শিক্ষক শিক্ষিকাদের পরামর্শে বিথীকার বাবা-মা পিছিয়ে আসেন সেই সিদ্ধান্ত থেকে।
নদীয়ার (Nadia) বিথীকার এমন প্রতিবাদ দেখে স্কুলের সকল শিক্ষক শিক্ষিকা কুর্নিশ জানায়। এমনকি নাবালিকার এমন বীরাঙ্গনার রূপ দেখে, রাজ্য সরকারের তরফ থেকেও সম্মান জানানো হয়। জানা গিয়েছে কলকাতার রবীন্দ্র ভবনে ১৪ই আগস্ট ২০২৪-এ একাদ তম কন্যাশ্রী দিবস উপলক্ষে বিথীকার হাতে তুলে দেওয়া হয় “উজ্জল কন্যাশ্রী” সম্মান। আর এই সম্মান তুলে দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। সেই সাথে তাকে আগামী দিনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য ৫০০০ টাকা উপহারস্বরূপ দেওয়া হয়।
পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন বিথীকা:
নিজের স্কুলের ছাত্রীর এমন কীর্তি দেখে উচ্ছ্বসিত ছিলেন নদীয়ার শিমুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জ্যোতির্ময় ঘোষ। সেই সাথে গর্বে বুক ভরে যায় শিক্ষকের। কিন্তু এই আনন্দ, উচ্ছ্বাস নিমেষের মধ্যে চূর্ণ করে দেয় এই বিথীকাই। দিন কয়েক আগে যে নাবালিকা বীরাঙ্গনা রূপে নিজের বিয়ে নিয়ে প্রতিবাদ করেন, সেই নাবালিকাই বাড়ির অমতে পালিয়ে বিয়ে করে নেন। আর তার এমন কাজে রীতিমত লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে স্কুলের। এমনকি প্রধান শিক্ষকের চোখে এসেছে জল।
আরও পড়ুনঃ কয়লা পাচার মামলায় বড় খবর! লালা সহ ৪৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন! কাদের নাম তালিকায়?
এই বিষয় বিথীকার বাবা রাজু প্রামানিক বলেছেন, মেয়ে আমার এবছর টেস্ট পরীক্ষা দেয়নি। বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছে। লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে, এমনকি স্কুলেও তিনি মুখ দেখাতে পারছেন না। পাশাপাশি তিনি আরো বলেন, যে নাবালিকা নিজের বিয়ে রুখে মন্ত্রীর হাত থেকে সম্মান নিয়েছে, এই নাবালিকাই আবার পালিয়ে বিয়ে করেছে! তিনি একজন বাবা হিসেবে এমন অন্যায় মেনে নিতে পারছেন না। তিনি বলেছেন, তার মেয়ের যেন শাস্তি হোক এবং সরকারের তরফ থেকে এই পুরস্কারও ফিরিয়ে নেওয়া হোক।
আরও পড়ুনঃ শীতে প্রতিদিন খান খেজুর গুড়! পালাবে বড় বড় রোগ, ওষুধের টেনশন থেকে মিলবে মুক্তি
যদিও এমন ঘটনা ঘটার পর স্কুলের তরফ থেকে তড়িঘড়ি ম্যানেজিং কমিটির তরফ থেকে বৈঠক ডাকা হয়। যে নাবালিকা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে তার বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানা যায়। পরবর্তীতে অন্যান্য কোন ছাত্র-ছাত্রীরা এমন কাজ যাতে করতে না পারে তার জন্যই স্কুলের তরফ থেকে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া। এই ঘটনাটির পর নদীয়ার (Nadia) শিমুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মুন্নি মন্ডল বলেছেন, তার ভাবতে বেশ অবাক লাগছে একদিন যে মেয়ের কথা শুনে পরিবারের সাথে কথা বলে বিয়ে আটকে ছিলেন, সেই মেয়েই স্কুলের মুখে চুনকালি লাগালো। আরেক শিক্ষিকা বলেছেন, ও যে কাজ করেছে তাতে তার উপযুক্ত শাস্তি পাওয়া উচিত, নইলে পরবর্তীতে এই একই ঘটনা ঘটানোর সাহস পেয়ে যাবে অন্যেরা। তবে বিথীকা যে এমন ঘটনা ঘটাবে একথা কেউই ভাবতে পারেনি।