বাংলা হান্ট ডেস্কঃ বঙ্গ রাজনীতির রং যেভাবে ঘন্টায় ঘন্টায় বদলাচ্ছে এমন কোন চিত্রনাট্যের লিখতে হয় তো রীতিমতো হিমশিম খাবেন দক্ষ চিত্রনাট্যকাররাও। গতকাল নারদা মামলাকে কেন্দ্র করে ফের একবার উত্তেজনার পারদ চরেছিল বাংলায়। এতদিন ঢিমে তালে তদন্ত চললেও সোমবার সকালেই রাজ্যের দুই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, বিধায়ক মদন মিত্র এবং কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে সিবিআই। কেন্দ্র বাহিনীর সাহায্যে বাড়ি ঘেরাও করে এদিন গ্রেপ্তার করা হয় এই চার হেভিওয়েট নেতাকে। নিজাম প্যালেসে ভার্চুয়াল শুনানিতে অংশগ্রহণ করার পর জামিন পান এই চার অভিযুক্ত। কিন্তু রাতে আবার নাটকীয় মোড় নেয় ঘটনা। জামিনের স্থগিতাদেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। এরপরে নিজাম প্যালেস থেকে সরাসরি প্রেসিডেন্সি জেলে নিয়ে আসা হয় শোভন, ফিরহাদ, মদন এবং সুব্রতকে।
রাতেই অসুস্থ বোধ করেন মদন মিত্র এবং শোভন চট্টোপাধ্যায়ঃ
প্রেসিডেন্সি জেলে আনার পর থেকেই অসুস্থতা বোধ করেন বর্তমান কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্র এবং প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। প্রাক্তন মেয়রের বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, সিওপিডির সমস্যা রয়েছে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের। ভোররাতে অসুস্থতা বোধ করায় এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। গতকাল সারা দিন নিজাম প্যালেসে থাকায় প্রয়োজনীয় ইনসুলিন নিতে পারেননি শোভন চট্টোপাধ্যায়। সেখান থেকেই সমস্যার শুরু। আপাতত এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ব্লকের ১০৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন তিনি। বৈশাখী জানান, গতকাল রাতে কেবলমাত্র চা-বিস্কুট খেয়েছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। আজ সকালে প্রাতরাশও করেননি তিনি। অন্যদিকে, জেলে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কারণে উডবার্ন ব্লকের ১০৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন মদন মিত্রও। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য নির্বাচন শেষ হওয়ার পরেও অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। এবারও তার শারীরিক সমস্যা ছিল যথেষ্ট জটিল।
এসএসকেএমের চেকআপের জন্য আনা হয় সুব্রত মুখোপাধ্যায়কেওঃ
গতকাল একইভাবে প্রেসিডেন্সি জেলে অসুস্থতা বোধ করেন পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও। রাতেই তৎপরতার সঙ্গে এসএসকেএম-এ আনা হয় তাকে। যদিও শারীরিক পরীক্ষার পর আবারো জেলে ফিরেছেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। জানা গিয়েছে আপাতত জেলের চিকিৎসকরাই চিকিৎসা করবেন তার। তবে আজ সকালে আরো একবার অসুস্থ হয়ে পড়ায় শারীরিক পরীক্ষার জন্য এসএসকেএম-এ নিয়ে আসা হয় সুব্রতকে।
অসুস্থ পরিবহন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমওঃ
তার গ্রেপ্তার অনৈতিক বলে গতকালই দাবি করেছিলেন ফিরহাদ হাকিমের কন্যা প্রিয়দর্শিনী হাকিম। তিনি জানান, সন্ধ্যেবেলা বেল অর্ডার হঠাৎ করেই স্থগিত করে দেওয়া হয়। আমাদের আইনজীবী এসে পৌঁছানোর আগেই জানা যায় যে কলকাতা হাইকোর্ট জামিন স্থগিত করেছে। এভাবে কাউকে গ্রেপ্তার করা অনৈতিক। তিনি পরিষ্কার দাবি করেন কেন্দ্রের চাপেই এই কাজ করছে সিবিআই। এরপর রাতে প্রেসিডেন্সি জেলে নিয়ে যাওয়ার সময় ফের একবার কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবহন মন্ত্রী। রাতে জেলের মধ্যে অসুস্থ বোধ করেন তিনিও। তবে তার পরীক্ষা করছেন জেলের চিকিৎসকরাই। যদিও জানা গিয়েছে, শারীরিক পরীক্ষার জন্য বেলার দিকে এসএসকেএম নিয়ে আসা হতে পারে ফিরহাদকেও। আপাতত এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে আগামী বুধবার। সে ক্ষেত্রে রাজ্য রাজনীতিতে এই মামলা নতুন কি রং বদলায় সে দিকেই নজর থাকবে সকলের।