বাংলা হান্ট ডেস্কঃ একদিকে যখন নীরজ চোপড়া, বজরংদের নিয়ে উৎসবে মেতেছে গোটা দেশ। টোকিওতে নতুন সূর্যোদয়ের ঘরে এনে দেওয়া এই সব খেলোয়াড়দের নিয়ে উচ্ছ্বসিত রাজনৈতিক কর্মকর্তা থেকে সাধারণ মানুষ সকলেই, তখনই অন্যদিকে শেষ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক ভাবি সম্ভাবনা। কয়েকদিন আগেই দেশের হয়ে বিশ্বকাপের দলে প্রতিনিধিত্ব করা ক্রিকেটারকে পেট চালানোর জন্য দিনমজুরের কাজ করতে দেখেছিল ভারত, ফের একবার উঠে এলো এমনই এক নিদর্শন।
দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জ ব্লকের অশোকগ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব বিষ্ণুপুরের বছর ছাব্বিশের যুবক রিঙ্কু বর্মন। সালটা ২০০৯, হরিয়ানায় ন্যাশনাল ইন্টার জ়োনাল জুনিয়র অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপের অনূর্ধ্ব ১৬ বিভাগে ১ হাজার মিটার রিলে রেস ২ মিনিট ১.৪৯ সেকেন্ডে শেষ করে নতুন রেকর্ড করেছিলেন তিনি। ঝুলিতে রয়েছে একাধিক পদক, তার মধ্যে চারটি সোনা। অথচ এই রিঙ্কুকেই এখন দিন কাটাতে হচ্ছে হতাশার অন্ধকারে। খেলা ছাড়তে হয়েছে কয়েক বছর আগেই। মরচে পড়া ট্রাংকের ভিতর গুছিয়ে রাখা সোনার পদক গুলো এখন শুধু এক সোনালী অতীতের সাক্ষী।
যে অতীত থেকে এখন বহুদূরে চলে এসেছেন রিঙ্কু। ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলায় পারদর্শী ছিলেন তিনি। শিলিগুড়িতে স্পোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়াতেও সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু কয়েক বছর আগে হঠাৎই বাবা মারা যাওয়ায় সংসারের পাশে দাঁড়াতে চলে আসতে হয় রিঙ্কুকে। আর তারপর থেকেই নিত্যসঙ্গী অভাব-অনটন। বেশ কয়েকটা জাতীয় সাফল্য রয়েছে যার ঝুলিতে সেই খেলোয়াড়কেই এখন করতে হয় পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ। স্বামী মারা যাবার পর যেটুকু জমি ছিল তাও বিক্রি করে দিতে হয়েছে রিঙ্কুর মা আরতী দেবীকে। এখন গুজরাটে ৩০০ টাকা দৈনিক মজুরিতে এমব্রয়ডারির কাজ করে দিন চালাচ্ছেন এই খেলোয়াড়।
হতাশার সঙ্গী রিঙ্কু বলেন, সোনার মূল্য কে দেবে বলুন? তার কথায়, ‘‘কয়েকটি জায়গায় আবেদন করেছিলাম। চাকরি পাইনি। গাঁয়ের লোকজন যখন বলে, খেলে তোর কোনও লাভ হল না রিঙ্কু, হতাশায় বুক ফেটে যায়। একটা ছোট চাকরি তো অন্তত পেতে পারতাম।’’ ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক অমিতাভ ঘোষ অবশ্য পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন একটাই, একের পর এক সম্ভাবনা যদি এভাবেই শেষ হয়ে যায় তাহলে অলিম্পিকের মতো বিশ্বমঞ্চে আরও বেশি পদক জয়ের স্বপ্ন কিভাবে দেখবে ভারত?