বাংলা হান্ট ডেস্ক: বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কাছে “ঋণের ফাঁদে” পরিণত হওয়া চিনের (China) বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (Belt and Road Initiative) এখনও পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে ভারতের (Indian) একটি প্রতিবেশী দেশ। মূলত, নেপাল (Nepal) এখনও পর্যন্ত চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের এই স্বপ্নের প্রকল্পকে প্রত্যাখ্যান করেছে। ইতিমধ্যেই, চিন ও নেপালের মধ্যে BRI প্রকল্প স্বাক্ষরের পর ৭ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এক্ষেত্রে একটিও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যদিও, চিন দাবি করেছে যে, নেপালে চলমান প্রকল্পগুলি BRI-এর অধীনে নির্মিত হচ্ছে। কিন্তু, কাঠমান্ডু এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। বরং, নেপাল স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তাদের দেশে কোনো BRI প্রকল্প শুরু হয়নি। মূলত, নেপাল ও চিনের মধ্যে বিরোধের সবচেয়ে বড় কারণ হল চিনের ঋণ। নেপাল চায় চিন তাকে অনুদান দিক কিন্তু বেজিং ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনড় রয়েছে।
এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি যে, চিনের ঋণের ফাঁদের প্রসঙ্গে নেপালকে সতর্ক করেছে ভারত ও আমেরিকাও। এই কারণে নেপাল এখনও BRI থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছে। ২০১৭ সালের ১২ মে নেপাল ও চিনের মধ্যে BRI সংক্রান্ত স্বাক্ষর হয়। কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নেপালে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি কিভাবে এই BRI প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। নেপালের প্ল্যানিং কমিশনে এই সংক্রান্ত প্রক্রিয়া এখনও চলছে। গত বছর, নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহল প্রচণ্ডের চিন সফরের সময়ে BRI কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায় সেই বিষয়ে আলোচনা অনেকটা এগোলেও এখনও পর্যন্ত এক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
ভারতের নির্বাচনের কারণে স্তব্ধ হয়েছে চুক্তি: নেপালের ডেপুটি পিএম নারায়ণ কাজী শ্রেষ্ঠ জানিয়েছেন যে, BRI বাস্তবায়নের খসড়া এখনও প্রস্তুত নয়। এর প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। তিনি বলেন, এই বিষয়ে চিনা পক্ষের সঙ্গে কথা বলা হলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি। নেপালের একজন ঊর্ধ্বতন আধিকারিক জানিয়েছেন যে, ভারতে লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যার কারণে চিনে এই প্রকল্পটি এগিয়ে যেতে পারেনি। প্রচণ্ডের অফিসে কর্মরত একজন আধিকারিক জানিয়েছেন যে, ভারত ও চিনের নির্বাচনের সময়ে এমন কোনো সংবেদনশীল সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না, যাতে দুই প্রতিবেশী দেশের সাথে সম্পর্কের কোনো ক্ষতি হয়।
নেপালের ডেপুটি পিএম বলেন, স্বাক্ষরের পরই BRI-এর অধীনে প্রকল্প নির্বাচন করা হবে। ২০২০ সালে চিনা প্রেসিডেন্টের নেপাল সফরের সময়ে কৃষি, শিক্ষা, সংযোগ, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পর্যটন, সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক সহযোগিতার মতো ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়টি সামনে আসে। শের বাহাদুর দেউবা নেপালের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই নেপাল সফর করেন। সেই সময়ে দেউবা তাঁকে স্পষ্ট জানিয়েছিলেন যে, নেপাল চিন থেকে ঋণ নিতে পারবে না। নেপালের প্রধানমন্ত্রী জানান, চিন তাঁদের ঋণ দেওয়ার পরিবর্তে অনুদান দিক। এদিকে, এখন প্রচণ্ড সরকারের আমলেও নেপালের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আমরা চিন সহ কোনো দেশ থেকে ঋণ নেওয়ার মতো অবস্থায় নেই। এতে নেপালের অর্থনীতির ওপর চাপ পড়বে।
আরও পড়ুন: পছন্দ বিলাসবহুল গাড়ি! দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেই ২৫,০০০ কোটির কোম্পানি খাড়া করলেন দীনেশ
ভয় পাচ্ছে নেপাল: নেপালের ঋণ প্রত্যাখ্যানের পর, চিন এখন ছোট প্রকল্পগুলিতে মনোনিবেশ করেছে। যাতে হিমালয়ের এই দেশে তার প্রভাব বাড়ানো যায়। চিন যার নাম দিয়েছে “সিল্করোড রোডস্টার”। নেপালের বিরোধী দল নেপালি কংগ্রেস BRI-এর মতো প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে জাতীয় পর্যায়ে ঐক্যমত তৈরির দাবি জানিয়েছে। ঋণ ছাড়াও BRI নিয়ে নেপালের নিরাপত্তার উদ্বেগ রয়েছে। BRI-এর খসড়ায় বলা হয়েছে, নেপালকে চিনের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়াতে হবে। এজন্য যৌথ মহড়া, তথ্যের আদান-প্রদান এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজন হবে। চিন BRI-কে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয় এবং প্রতিটি বৈঠকে এর প্রসঙ্গ তুলে ধরে।
আরও পড়ুন: ২০২৫ সালের মধ্যেই হবে বিরাট নজির! জাপানকে হারিয়ে বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে ভারত
নেপালের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী ও চিনের রাষ্ট্রদূত মহেন্দ্র বাহাদুর পান্ডে জানিয়েছেন যে,, উচ্চ সুদই চিনা ঋণের একমাত্র কারণ নয়। তিনি বলেন, “যদি আমরা সময়মতো প্রকল্প শেষ করতে না পারি অথবা আমরা তা সম্পন্ন করলেও সহজে চিনের ঋণ ও সুদ পরিশোধ করতে পারতাম না। আমাদের নেতারাও আশঙ্কা করছেন যে, চিনের কাছ থেকে কোনো ধরণের সাহায্য নিলে তা অন্য দেশগুলিকে ক্ষুব্ধ করতে পারে। আর্থিক সহায়তা নিতে গিয়ে আমাদের ভেতরে ভয় কাজ করে। নেপালিদের আশঙ্কা, ভারত, চিন বা আমেরিকা থেকে কোনো সাহায্য নিলে অন্য দেশ রেগে যেতে পারে। প্রতিবেশী ও বৃহৎ শক্তির ভরসা নিয়েই আমাদের যেকোনো বৈদেশিক সাহায্য গ্রহণ করা উচিত।” উল্লেখ্য যে, ভারত ও আমেরিকা উভয়েই BRI-এর বিপদ সম্পর্কে নেপালকে সতর্ক করেছে।