বেড়াতে যাওয়ার মরশুমে উত্তপ্ত নেপাল! পুজোর আগেই বুকিং বাতিলের হিড়িক, ক্ষতির মুখে পর্যটন

Published on:

Published on:

Nepal tourism faces loss due to unrest situation.

বাংলাহান্ট ডেস্ক: নেপালে (Nepal) পর্যটনের মরশুমে অশান্তির কালো ছায়া নেমে এসেছে। সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর সময়টা প্রতিবছরই পর্যটকদের ভিড়ে জমজমাট থাকে দেশটি। কাঠমান্ডু (Kathmandu), পোখরা (Pokhara), নাগরকোট (Nagarkot), লুম্বিনি (Lumbini) কিংবা এভারেস্ট বেস ক্যাম্প (Everest Base camp)—সবই নতুন করে সেজে ওঠে ভ্রমণপিপাসুদের আগমনে। কিন্তু চলতি বছরে তার ব্যতিক্রম। বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে নেপাল। আর সেই আঁচ গিয়ে পড়েছে পর্যটনের ব্যবসায়। পশ্চিমবঙ্গ তো বটেই, গোটা দেশ থেকেই বহু মানুষ প্রতি বছর প্যাকেজ টুরে নেপাল ভ্রমণ করেন। রবিবার পর্যন্ত বুকিং চললেও, সোমবারের রাতের ঘটনার পর মঙ্গলবার সকাল থেকে একের পর এক বুকিং বাতিল হতে শুরু করেছে।

নেপালের পর্যটনশিল্পে ব্যাঘাত (Nepal)

নেপাল (Nepal) টুরিজম বোর্ডের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে এক মাসেই ভারত থেকে ৩৫ হাজার ৫০৫ জন পর্যটক নেপাল ভ্রমণ করেছিলেন। আগের বছরের তুলনায় এই সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি। অর্থনীতির বড় ভিত্তি পর্যটন, তাই স্বাভাবিকভাবেই এ ঘটনায় বিপাকে পড়ছে দেশটি। পুজোর মরশুমে এভারেস্টের দেশে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল বহু মানুষের। কিন্তু এখন আতঙ্কে বাতিল হচ্ছে যাত্রা।

আরও পড়ুন:- সিএএ-তে আবেদন, হাতে নাগরিকত্বের শংসাপত্র পেলেন বাংলাদেশের প্রমথ রঞ্জন বিশ্বাস

পরিস্থিতির গুরুতরতা বুঝে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক নেপাল (Nepal) ভ্রমণে আপাতত নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। যাঁরা ইতিমধ্যেই নেপালে রয়েছেন, তাঁদের বাইরে না বেরোনোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জরুরি যোগাযোগের জন্য প্রকাশ করা হয়েছে হেল্পলাইন নম্বরও। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা বেড়ে চলেছে। ইতিমধ্যেই শিলিগুড়ি-কাঠমান্ডু এনবিএসটিসি বাস পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ট্যুর অপারেটররা জানাচ্ছেন, গত কয়েক বছরে ক্রসবর্ডার টুরিজমের চাহিদা দ্রুত বেড়েছিল। নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে একটি জনপ্রিয় ভ্রমণ সার্কিট তৈরি হয়েছিল। কিন্তু প্রথমে শ্রীলঙ্কার অশান্তি, পরে বাংলাদেশের অস্থিরতা, আর এবার নেপালের (Nepal) বিক্ষোভে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ছে পর্যটন শিল্প। পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই।

বিশ্বের প্রকৃতিপ্রেমী ও দুঃসাহসী অভিযাত্রীদের কাছে  হিমালয়ের কোলে অবস্থিত এই নেপাল (Nepal) অন্যতম প্রিয় গন্তব্য। ভক্তপুরের ঐতিহ্য, চিতওয়ানের বন্যপ্রাণী, সাগরমাথার মহিমা কিংবা অন্নপূর্ণার রূপ—সবই ভ্রমণকারীদের কাছে আকর্ষণীয়। কিন্তু বিক্ষোভের কারণে সেই সৌন্দর্য দেখার সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে বহু মানুষের। বিশেষত বাঙালিদের কাছে পুজোর ছুটিতে নেপাল ঘোরার পরিকল্পনা যেন রীতিমতো প্রথায় পরিণত হয়েছিল। এবার সেই ধারায় বড়সড় ধাক্কা।

Nepal tourism faces loss due to unrest situation.

আরও পড়ুন:- পুজো ধামাকা! রেলের নতুন ট্যুর প্যাকেজে মাত্র ২৪ হাজার টাকায় ঘোরা যাবে ৭ জ্যোতির্লিঙ্গ

হিমালয়ান হসপিট্যালিটি অ্যান্ড টুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল জানিয়েছেন, গত দু’বছর ধরে ভারতীয়, বিশেষ করে বাঙালি পর্যটকদের যাতায়াত উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছিল। নেপালের (Nepal) অর্থনীতি পর্যটনের উপর নির্ভরশীল, তাই এ ঘটনায় তাদের বড় ক্ষতি হবে। ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ ট্যুর অপারেটরস-এর বেঙ্গল চেয়ারম্যান দেবজিৎ দত্তের মতে, “নেপালের এই অস্থিরতা পর্যটন শিল্পের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত। এই অবস্থায় তারা আর নেপালে যেতে চাইবেন না।”

পর্যটনের ভরা মরশুমেই অশান্তির আগুনে বিপর্যস্ত নেপাল (Nepal)। আর তার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে ভারতীয় পর্যটন শিল্পেও। পুজোর আগে মুখ থুবড়ে পড়ল এভারেস্টের দেশের স্বপ্নযাত্রা।