বাংলা হান্ট ডেস্কঃ এই মুহূর্তে রীতিমত ভয়ানক হয়ে উঠছে করোনা। একদিকে যখন কাতারে কাতারে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ অন্যদিকে চলেছে মৃত্যুর মিছিল। বব ডিলানের সেই অমোঘ লাইনই যেন সত্যি হয়ে উঠছে রোজ, বড্ড বেশি মানুষ গেছে করোনাতে ভেসে। ফলতো এমতাবস্থায় যে রীতিমতো আতঙ্কিত মানুষ তা বলাই বাহুল্য। তবে এরই মধ্যে বেশ কয়েক দিন ধরে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস খেলার সুযোগ করে দিল গত কয়েকদিনের করোনা সংক্রমনের সংখ্যা। বিশেষত গত ২৪ ঘন্টায় এই প্রথমবার সংখ্যাটা নেমে এসেছে তিন লাখের নিচে।
শুক্রবার আক্রান্ত হয়েছিলেন প্রায় ৩ লক্ষ ২৩ হাজার ১২৩ জন মানুষ। শনিবার সংখ্যাটা ছিল ৩ লক্ষ ১১ হাজার মত। এই প্রথমবার বেশ কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস, খেলার সুযোগ করে দিল গত ২৪ ঘন্টার রিপোর্ট। নতুন করে করোনা সংক্রামিত হয়েছেন ২ লক্ষ ৮১ হাজার ৩৮৬ জন। ইউনিয়ন হেলথ মিনিস্ট্রির মতে গত ২৪ ঘন্টায় সুস্থতার হার বেশ আশাপ্রদ। গতদিনে করোনার এই করাল গ্রাস থেকে মুক্তি পেয়েছেন ৩ লক্ষ ৭৮ হাজার ৭৪১ জন মানুষ। এছাড়া গত দিনের করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৪০১৬ জন মানুষের। শনিবার এই সংখ্যাটা ছিল ৪০৭৭। তাই সেখানেও বেশ কিছুটা কমতি দেখা গিয়েছে যা যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক।
যদিও অনেকেই দাবি করছেন উত্তরপ্রদেশ মহারাষ্ট্র প্রভৃতি রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে মৃত্যুর সংখ্যাটা আসলে অনেক বেশি। সে ক্ষেত্রে মৃত্যুর সংখ্যা কম করার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। অনেকে বলছেন সারা দেশ জুড়ে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা হতে পারে প্রায় ২৫ হাজারও। একথা ঠিক যে অনেক মৃতদেহই ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে গঙ্গা এবং যমুনায়। নদী তীরবর্তী এলাকাতেও পুঁতে দেওয়া হচ্ছে অনেক মৃতদেহ। তাদের অনেকেরই করোনা উপসর্গ রয়েছে। তবে কোন ক্ষেত্রে সঠিকভাবে রিপোর্ট না করানোয় আবার কোন কোন ক্ষেত্রে রিপোর্ট পরে আসায় মৃত্যুর সংখ্যা সঠিক ভাবে অডিট করা হচ্ছে না প্রশাসনের তরফে। তবে এর কোনো পোক্ত প্রমাণ নেই। সে ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের রিপোর্ট অনুযায়ী ছবিটাতে অনেকটাই আশাব্যঞ্জক তা বলাই চলে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে ইতিমধ্যেই করোনার ভ্যাকসিন পেয়েছেন প্রায় ১৮ কোটি ২৯ লক্ষ ২৬ হাজার ৪৬০ জন। এই মুহূর্তে ভারতবর্ষে মোট করোণা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২ কোটি ৪৯ লাখ ৬৫ হাজার ৪৬৩ জন। আশার কথা হলো করোনাকে হারিয়ে বাড়ি ফিরেছেন মোট ২ কোটি ১১ লক্ষ ৭৪ হাজার ৭৬ জন মানুষ। যার ফলে এই মুহূর্তে দেশে অ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যা মাত্র ৩৬ লাখের কিছু বেশি। ভ্যাকসিনের প্রয়োগ এবং কিছু রাজ্যে কড়াকড়ি লকডাউন সংক্রমণের শৃংখল ভাঙতে অনেকটাই সমর্থ হয়েছে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। গাণিতিক মডেলের সাহায্যে অনেকে এও বলছেন যে এভাবে চলতে থাকলে জুন মাসের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে করোনার সংক্রমণ।
ছবিটা অনেকটা আশাব্যঞ্জক আমাদের রাজ্য গত কয়েকদিন ধরে প্রায় প্রতিদিনই কুড়ি হাজার মানুষ আক্রান্ত হবার পর শনিবার আক্রান্ত হয়েছিলেন সাড়ে ঊনিশ হাজারের কাছাকাছি মানুষ। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে সংক্রমিত হয়েছে ১৯ হাজার ১১৭ জন। লড়াইয়ে পরাজিত হয়ে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েছেন ১৪৭ জন। সংক্রমণের ক্ষেত্রে যথেষ্ট ভয়ানক পরিস্থিতিতে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। করোনা আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে এই মুহূর্তে প্রথম স্থানে রয়েছে তারা। গত ২৪ ঘন্টায় উত্তর ২৪ পরগনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ১১৬ , মৃত্যু হয়েছে ৩৯ জনের। চিন্তা বাড়িয়ে এখনো দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কলকাতাই। শেষ ২৪ ঘন্টায় কলকাতায় নতুন করে ৩ হাজার ৪৫১ জন আক্রান্ত হয়েছেন । মৃত্যু হয়েছে ৩৩ জনের। তবে লকডাউন যে কিছুটা প্রভাব ফেলেছে তা অনেকটাই স্পষ্ট এই পরিসংখ্যানে। এরইমধ্যে করোনা মুক্তির জন্য ২-ডিজি ওষুধও আবিষ্কার করে ফেলেছে ডিআরডিও। এখনো বাজারে না আসলেও শুরু হয়ে গেছে তার উৎপাদনের কাজ। সেক্ষেত্রে এই ওষুধ বাজারে আসলে অনেকটাই স্বস্তি পাবেন নাগরিকরা।