বাংলাহান্ট ডেস্ক: কেরলের তরুণ ইঞ্জিনিয়ার কার্তিক সুরেশের সফলতার গল্প (Success Story) আজ অনেকেরই অনুপ্রেরণা। কার্তিক এখন ভারতের কৃষি উদ্যোগের নতুন মুখ বলা চলে। ত্রিসুর জেলার ইরিঞ্জালাকুডার বাসিন্দা এই তরুণ ২০২১ সালে শুরু করেন নিজের স্টার্টআপ ‘ফ্রেশ এন গুড’, যার লক্ষ্য শুধু ফল বিক্রি নয়, বরং এমন এক কৃষককেন্দ্রিক ইকোসিস্টেম তৈরি করা যা চাষিদের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করে এবং ভারতের এক্সোটিক ফলের সম্ভাবনাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছে দেয়। কার্তিকের এই উদ্যোগ এখন দেশের কৃষি-উদ্যোক্তা ক্ষেত্রে এক উদাহরণ হয়ে উঠেছে।
কেরলের কার্তিকের অনন্য সফলতার কাহিনি (Success Story)
কার্তিক সুরেশ প্রথমে কেরল ও হিমাচল প্রদেশ থেকে ম্যাংগোস্টিন, রামবুতান, অ্যাভোকাডো ও প্যাশন ফ্রুটের মতো এক্সোটিক ফল সংগ্রহ করা শুরু করেন। তিনি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের এককালীন অফার বা লাম্পসাম প্রথা বাতিল করে চালু করেন ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (MSP) ভিত্তিক মূল্য নির্ধারণ ব্যবস্থা। এর ফলে কৃষকরা আগেই জানতেন তাঁদের ফসলের দাম কত পাবেন। উদাহরণস্বরূপ, রামবুতানের জন্য প্রতি কিলোগ্রামে ১২৫ টাকা গ্যারান্টি দেন তিনি, বাজারদর ওঠানামা করলেও কৃষকদের আয় নির্দিষ্ট থাকে। এই স্বচ্ছ ব্যবসা নীতির ফলে বর্তমানে ২০০-র বেশি কৃষক যুক্ত হয়েছেন তাঁর সঙ্গে (Success Story)।
আরও পড়ুন: কয়েক হাজার কোটির আর্থিক জালিয়াতি! আম্বানির ঘনিষ্ঠ সঙ্গীকে গ্রেফতার করল ED
২০২৩ সালে কার্তিক বুঝতে পারেন শহুরে মানুষ কাঁঠাল কিনতে অনীহা দেখায় মূলত ছাঁটার ঝামেলা ও গন্ধের কারণে। তাই ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি বাজারে আনেন ‘রেডি টু ইট কাঁঠাল পোডস’— সম্পূর্ণ পরিষ্কার, প্যাকেটজাত কাঁঠাল, যা খাওয়ার জন্য প্রস্তুত। ২০০ গ্রামের একটি প্যাকেট ১০০ টাকায় বিক্রি হয় এবং মুহূর্তের মধ্যেই জনপ্রিয়তা পায়। কয়েক মাসের মধ্যে মাসিক বিক্রি ১,০০০ প্যাকেট থেকে বেড়ে ৩,০০০-তে পৌঁছে যায়। এর ফলে কাঁঠাল চাষিরাও লাভবান হন— যেখানে একসময় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ২০ কেজি কাঁঠালের জন্য ১২ টাকা দিতেন, সেখানে কার্তিক দিচ্ছেন প্রায় ৮০০ টাকা পর্যন্ত (Success Story)।
কার্তিকের কোম্পানি বর্তমানে কেরলের তিনটি জেলায় সক্রিয়, যেখানে রয়েছে সংগ্রহ কেন্দ্র ও গুণমান যাচাইয়ের দল। প্রতিটি ফল সংগ্রহের আগে দলটি গন্ধ, স্পর্শ ও শব্দ শুনে তার মান নির্ধারণ করে। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো রামবুতানের মতো নরম ফল সংরক্ষণ করা, যেগুলি তুলেই পরের দিন বিক্রি করতে হয়। এজন্য প্রি-বুকিং, রেল ও বিমান মালবাহী পরিষেবা এবং ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ডেলিভারির ব্যবস্থা করেছে কোম্পানি। এছাড়া কেরলে তিনটি কোল্ড স্টোরেজ ইউনিটও স্থাপন করেছে তারা (Success Story)।
আরও পড়ুন:মঙ্গলবার থেকে শুরু বাজির বাজার, কোন কোন বাজি বিক্রি হবে? জানাল প্রশাসন
‘ফ্রেশ এন গুড’-এর শুরু হয়েছিল মাত্র ১২ লক্ষ টাকার টার্নওভারে, যা বর্তমানে বেড়ে ১.৫ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। গত বছর এক্সোটিক ফলের বিক্রি ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কার্তিক এখন আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁঠাল পোড পাঠানোর পরিকল্পনা করছেন। প্রথম ধাপে তিনি দুবাই ও কানাডায় নমুনা পাঠাবেন। বর্তমানে তাঁর পণ্য লুলু গ্রুপসহ বিভিন্ন রপ্তানিকারকের মাধ্যমে আমেরিকা ও উপসাগরীয় অঞ্চলে পৌঁছচ্ছে। ভবিষ্যতে তিনি নিজস্ব রপ্তানি চ্যানেল তৈরি করতে চান, যাতে কৃষক ও ভোক্তার মধ্যে সরাসরি সংযোগ গড়ে ওঠে এবং উভয়ের জন্যই ন্যায্য মূল্য ও গুণমান নিশ্চিত হয় (Success Story)।
কার্তিক সুরেশের এই প্রচেষ্টা প্রমাণ করেছে— সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্ভাবনী চিন্তাধারা থাকলে কৃষিকেও স্টার্টআপ বিপ্লবের অংশ বানানো যায়। তাঁর ‘ফ্রেশ এন গুড’ এখন ভারতের কৃষি-বাণিজ্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত (Success Story)।