‘অর্জুনের বাড়িতে আর বোম পড়বে না’, দল বদলাতেই সুর বদল মদন মিত্রের!

বাংলাহান্ট ডেস্ক : বাংলার রাজ্য রাজনীতি এখন তোলপাড়। আর হবে নাই বা কেন? অর্জুন যে এখন অন্য ফুলে! রবিবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে দলীয় পতাকা তুলে তৃণমূলে যোগদান করেছেন ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং। যদিও তার আগে থেকেই অর্জুনের ঘরওয়াপসি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কানাঘুষোও শোনা যাচ্ছিল বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের দৌলতে। তখন থেকেই অর্জুনের প্রতি ভালোবাসা এবং সহমর্মিতা দেখাতে শোনা গিয়েছিল মদন মিত্রের কন্ঠে। সোমবার উত্তর ২৪ পরগনার অর্জুন সিংকে নিয়ে একটি মিলন বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। সেই বৈঠকেই অর্জুনকে গলায় গোলাপের মালা পরিয়ে অভ্যর্থনা জানালেন কামারহাটি তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র। আর তার সঙ্গেই বাংলার কালার ফুল বয় ঘোষনা করেন, ‘অর্জুন এখন তৃণমূলের নেতা। তাই ওর বাড়ির সামনে আর বোমও পড়বে না। আর যদি পড়ে, তাহলে প্রথম যে কয়েকজন ছুটে যাবে তার মধ্যে একজন মদন মিত্র।’

এদিন যেন একরকম চাঁদের হাট বসে গিয়েছিল। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, ব্রাত্য বসু, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, সুবোধ অধিকারী, সোমনাথ শ্যাম সহ এলাকার প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়করা। এদিন দেখা যায় টিটাগরের তৃণমূল অফিসে কমলা রঙের টি-শার্ট এবং কালো রং-এর প্যান্ট পড়ে মদন মিত্র উপস্থিত হন। তাঁকে দেখেই পুরনো দাদাকে অভ্যর্থনা জানাতে সৌজন্যতার খাতিরেই দরজার দিকে এগিয়ে যান অর্জুন। আর সঙ্গে সঙ্গেই হাত বাড়িয়ে দেন মদন মিত্র। বুকে জড়িয়ে ধরেন অর্জুনকে। সঙ্গে পাশে অবস্থিত অনুগামীদের হাত থেকে গোলাপের মালা তুলে নিয়ে পরিয়ে দেন অর্জুনের গলায়।

অসাধারণ দুই নেতার মধ্যে এই মিলনের সাক্ষী হলেন অন্যান্য তৃণমূল বিধায়করা। যদিও বরাবরই অর্জুন সিংয়ের সঙ্গে মদন মিত্রের সম্পর্ক খুব ভাল ছিল। তৃণমূলে থাকাকালীন অর্জুন – মদনকে দাদা বলে সম্বোধন করতেন। কিন্তু ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের সময় অর্জুন দল বদল করেন। যোগ দেন বিজেপিতে। ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করেন অর্জুন। সেইসময় অর্জুন সিংয়ের পুত্র পবন সিংয়ের কাছে বিপুল ভোটে পরাজিত হয়েছিলেন মদন মিত্র। তারপর থেকেই এই দুই নেতার মাঝখানে বেড়ে যায় দূরত্ব। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের লাইভ বিতর্কেও একে অপরের কুৎসা করতে দেখা যায়।

২০২১-এর জানুয়ারি মাসে একটি সংবাদমাধ্যমে দু’জনের তর্ক-বিতর্ক ভোটের আগে সাড়া বাংলা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। একদিকে গলার শির ফুলিয়ে অর্জুন চিৎকার করে মদনের উদ্দেশে বলেন ‘মাতাল, সারদার জেল খাটা আসামী’। অন্যদিকে মদনও সেসব শুনে সেই লাইভ অনুষ্ঠানেই হাতা গুটিয়ে বলেছিলেন, ‘শোন অর্জুন। তোকে যেতে হয় বিটি রোড দিয়ে। বেশি বাড়াবাড়ি করিস না। নামিয়ে দেব।’

কিন্তু বেশ কয়েকদিন ধরেই মদন মিত্রের গলায় শোনা যাচ্ছিল অর্জুনের সুগান। অর্জুনের ঘরওয়াপসি হওয়ার জল্পনা শুরু হতেই মদন মিত্র বলেছিলেন, ‘অর্জুন যদি তৃণমূল কংগ্রেসে আসতে চায় এবং আমার দল যদি তাঁকে গ্রহণ করে, তাছাড়া দলনেত্রী যদি অর্জুনকে দলে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয় আমি তার বিরুদ্ধে যাব না কারণ দলনেত্রী শরীরের রক্ত দিয়ে দলটাকে গড়েছেন। অর্জুনকে বুকে জড়িয়ে ধরতেও আমার কোনও দ্বিধা থাকবে না।’ আর তারপর থেকে বোঝাই গিয়েছিল, খুব শীঘ্রই মদন মিত্রের সঙ্গে অর্জুন সিংয়ের গলা জড়াজড়ির ছবি খুব তাড়াতাড়ি আসতে চলেছে। এদিন ঠিক হলও তাই।


Sudipto

সম্পর্কিত খবর