বাংলাহান্ট ডেস্ক: ডিজিটাল লেনদেনের যুগে ইউপিআই (Unified Payments Interface) এখন ভারতের সাধারণ মানুষের জীবনে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। বাজার করা থেকে শুরু করে শপিং, রেস্তরাঁয় খাওয়া বা ভ্রমণের সময় হোটেল ও ট্যাক্সির বিল মেটানো—প্রায় সব ক্ষেত্রেই এখন ইউপিআই-ই প্রথম পছন্দ। খুচরো টাকার ঝামেলা, ফেরত পাওয়ার চিন্তা কিংবা দোকানদারের লজেন্স দিয়ে খুচরো ফেরতের সমস্যা—সবই দূর করেছে এই প্রযুক্তি। কিন্তু প্রযুক্তির এই সহজতা ও জনপ্রিয়তার সঙ্গে বেড়েছে জালিয়াতির ঘটনাও। ফিশিং লিঙ্ক, নকল কিউআর কোড ও ভুয়ো অ্যাপের মাধ্যমে নিত্যনতুন প্রতারণার ঘটনা ঘটছে। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে ও নিরাপদ ডিজিটাল লেনদেন নিশ্চিত করতে একাধিক সতর্কবার্তা ও নিয়ম জারি করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই)।
ইউপিআই (Unified Payments Interface) জালিয়াতি রুখতে মেনে চলুন ৫ টি উপায়:
প্রথমত, সম্প্রতি ইউপিআই (Unified Payments Interface) জনিত বেশিরভাগ প্রতারণার ঘটনাতেই দেখা যাচ্ছে ক্যাশব্যাক দেওয়ার নাম করে প্রতারকরা হোয়াটসঅ্যাপ বা এসএমএসে একটি সন্দেহজনক লিঙ্ক বা কিউআর কোড পাঠায়। সেই লিঙ্কে ক্লিক করলেই বা কিউআর কোড স্ক্যান করলেই ফোনে থাকা ব্যক্তিগত তথ্য ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের ডেটা চলে যায় প্রতারকদের কাছে। আরবিআই জানিয়েছে, কোনও বৈধ ব্যাঙ্ক বা রেজিস্টার্ড সংস্থা কখনও টাকা পাঠাতে আপনাকে কিউআর কোড স্ক্যান করতে বলে না। আপনি যদি টাকা পেতে চান, তাহলে কোনও স্ক্যান বা লিঙ্ক ওপেন করার প্রয়োজন নেই।
আরও পড়ুন:পর পর নিম্নচাপ! দক্ষিণবঙ্গে এ বছর আর শীত পড়বে না? ‘খারাপ খবর’ দিল আবহাওয়া দপ্তর
দ্বিতীয়ত, ওটিপি বা ইউপিআই (Unified Payments Interface) পিন হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা এখন সবচেয়ে সাধারণ প্রতারণার কৌশল। প্রতারকরা নিজেদের ব্যাঙ্ক অফিসার, ফোনপে/গুগল পে/পেটিএম সাপোর্ট স্টাফ বা সরকারি অফিসারের পরিচয় দেয়। অ্যাকাউন্ট যাচাই বা কেওয়াইসি আপডেটের কথা বলে ব্যবহারকারীর কাছ থেকে ওটিপি বা ইউপিআই পিন বের করার চেষ্টা করা হয়। আরবিআই আবারও স্পষ্ট জানিয়েছে, কোনও ব্যাঙ্ক বা অ্যাপ কখনও ওটিপি, পাসওয়ার্ড বা পিন চায় না। ইউপিআই পিন শুধুমাত্র টাকা পাঠানোর সময় ব্যবহৃত হয়, টাকা গ্রহণের সময় নয়। অর্থাৎ কারও কথায় পিন দিলে মুহূর্তের মধ্যে অ্যাকাউন্ট খালি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
চতুর্থত, প্লে স্টোর ও বিভিন্ন ওয়েবসাইটে এখন একাধিক নকল ইউপিআই (Unified Payments Interface) অ্যাপ পাওয়া যাচ্ছে, যেগুলো ডিজাইনে আসল অ্যাপের মতো হলেও সেগুলোর লক্ষ্য ব্যক্তিগত তথ্য ও ব্যাঙ্ক ডেটা চুরি করা। তাই অফিসিয়াল সোর্স থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করা, অ্যাপ ইন্সটলে যে পারমিশন চাইছে তা খতিয়ে দেখা এবং ডেভেলপারের নাম যাচাই করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সন্দেহজনক ক্যাশব্যাক অফার বা ‘ডাবল মানি’ প্রতিশ্রুতি দেখলেই সতর্ক হওয়া উচিত।

আরও পড়ুন:একাদশীতে ভক্তদের প্রবল ভিড়! অন্ধ্রের শ্রীকাকুলামে ভেঙ্কটেশ্বর স্বামী মন্দিরে পদপিষ্ট হয়ে মৃত ৯
পঞ্চমত, হোয়াটসঅ্যাপ বা ইউপিআই (Unified Payments Interface) অ্যাপে সন্দেহজনক নাম, বানান বা পরিচয় দেখলেও সতর্ক থাকা দরকার। প্রতারকরা অনেক সময় জনপ্রিয় ব্র্যান্ড বা পরিচিত সংস্থার নামের সঙ্গে সামান্য হেরফের করে নকল পরিচয় তৈরি করে। তাই লেনদেনের আগে প্রাপকের নাম ও বানান মিলিয়ে দেখা অত্যন্ত জরুরি।
সতর্কতা বজায় রেখেও যদি কেউ প্রতারণার শিকার হন, তাহলে আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়াই একমাত্র উপায়। আরবিআইয়ের নির্দেশ অনুযায়ী, ব্যাঙ্ককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রতারণার অভিযোগ নথিভুক্ত করতে হবে। ভুক্তভোগীকে অবিলম্বে নিজের ব্যাঙ্কের হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করতে হবে। এর পাশাপাশি ১৯৩০ নম্বরে ফোন করে ন্যাশনাল সাইবার হেল্পলাইনের সাহায্য নেওয়া বা cybercrime.gov.in পোর্টালে অভিযোগ জানানো বাধ্যতামূলক। ইউপিআই (Unified Payments Interface) দ্বারা ডিজিটাল আর্থিক লেনদেন যেমন সহজ, তেমনই সতর্কতা না মানলে মুহূর্তে বড়সড় ক্ষতির সম্ভাবনা। তাই প্রযুক্তির সুবিধা নেওয়ার পাশাপাশি প্রতিটি পদক্ষেপে সচেতন থাকা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।













