বাংলা হান্ট ডেস্কঃ নয়া দিল্লির রাস্তায় সোমবার দেখা গেল বিরোধী ঐক্যের এক উত্তাল দৃশ্য (SIR Protest)। ‘ভোট চুরি’ অভিযোগে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের দপ্তরের দিকে মিছিল নিয়ে এগোতে গিয়ে দিল্লি পুলিশের হাতে আটক হলেন বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী, প্রিয়ঙ্কা গান্ধী, অখিলেশ যাদব-সহ শতাধিক সাংসদ। এদিন মিছিলে অংশ নেওয়া তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির মধ্যে অজ্ঞান হয়ে পড়েন।
রাজনৈতিক সুবিধার্থে নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করছে বিজেপি, অভিযোগ বিরোধীদের (SIR Protest)
প্রসঙ্গত, এদিন সকালে লোকসভা ও রাজ্যসভায় SIR (Summary Revision of Electoral Rolls) ইস্যুতে (SIR Protest) শুরু হয় তুমুল হট্টগোল। বেলা ২টো পর্যন্ত কার্যসূচি স্থগিত থাকার পর বিরোধী সাংসদেরা সংসদ ভবন থেকে নির্বাচন কমিশনের (Election Commission) উদ্দেশ্যে মিছিল শুরু করেন। বিরোধী সাংসদরা অভিযোগ করেন, বিহারে এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভোটার তালিকা থেকে ইতিমধ্যেই ৬৫ লক্ষ নাম মুছে ফেলা হয়েছে, যা বিজেপির রাজনৈতিক সুবিধার্থে করা হয়েছে। এই ইস্যুতেই সকাল থেকে দুই কক্ষেই তুমুল হট্টগোল হয় এবং দুপুর ২টো পর্যন্ত কার্যসূচি স্থগিত থাকে।
কার্যসূচি স্থগিত হওয়ার পর বিরোধী দলগুলি একজোট হয়ে সংসদ ভবন থেকে নির্বাচন কমিশনের দপ্তরের দিকে মিছিল (SIR Protest) শুরু করে। রাহুল গান্ধী, প্রিয়ঙ্কা গান্ধী, অখিলেশ যাদব, ডেরেক ও’ব্রায়েন-সহ প্রায় ৩০০ জন সাংসদ অংশ নেন। মিছিলে তৃণমূল, কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, ডিএমকে, এনসিপি-সহ বহু দল ছিল। এমনকি বর্তমানে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের বাইরে থাকা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টিও (আপ) বিক্ষোভে যোগ দেয়।
পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তিতে অজ্ঞান হয়ে যান মহুয়া মিত্র
তবে মিছিল শুরু হওয়ার কিছু দূর যেতেই দিল্লি পুলিশ ব্যারিকেড তুলে পথ আটকায়। বিরোধী নেতারা তখন রাস্তায় বসে স্লোগান দিতে শুরু করেন, ‘ভোট চুরি বন্ধ করো’, ‘চুপি চুপি ভোটের কারচুপি চলবে না’। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র, সাগরিকা ঘোষ-সহ মহিলা সাংসদরা ব্যারিকেডে উঠে সরাসরি প্রতিবাদ জানান। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির মধ্যেই মহুয়া মৈত্র অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং কিছু সময়ের জন্য অজ্ঞান হয়ে যান।
দিল্লি পুলিশ পরে রাহুল, প্রিয়ঙ্কা, অখিলেশ-সহ সমস্ত বিরোধী সাংসদদের দুটি বাসে তুলে থানায় নিয়ে যায়। যুগ্ম পুলিশ কমিশনার দীপক পুরোহিত জানান, এই জমায়েতের অনুমতি ছিল না। তবে আগেই তাঁদের জানানো হয়েছিল, যদি সিদ্ধান্ত নেন, নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে পুলিশি নিরাপত্তায় পৌঁছে দেওয়া হবে। কমিশন ভবনে সমস্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রস্তুত ছিল বলেও তিনি জানান। এদিকে, মিছিলে অনুপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সেদিন মুর্শিদাবাদ ও উত্তর দিনাজপুরে তৃণমূল কর্মীদের নিয়ে সাংগঠনিক বৈঠকে ছিলেন।
বিরোধীদের দাবি, শুধু বিহার নয়, পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, অসম, তামিলনাড়ুতেও বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার আগে একইভাবে ভোটার তালিকা ‘সাফ’ করার চেষ্টা চলছে (SIR Protest)। বিজেপি যাতে সুবিধা পায়, সেজন্যই নির্বাচন কমিশনকে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।
আরও পড়ুনঃ ভোটের আগে সৌজন্য নাকি রাজনৈতিক সমীকরণ? বারাসাতে মঞ্চ থেকে শুভেন্দুর প্রশংসা চিরঞ্জিতের মুখে
বিক্ষোভ শেষে নেতারা থানা থেকে মুক্তি পেলেও রাজনৈতিক বার্তা স্পষ্ট, ‘ভোট চুরি’ ইস্যুতে বিরোধী ঐক্য আরও তীব্র হচ্ছে (SIR Protest)। মহুয়া মৈত্রর অজ্ঞান হয়ে পড়া, রাহুল-প্রিয়ঙ্কার গ্রেপ্তারি, ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা, এই সবকিছুই প্রমাণ করছে যে বিরোধী শিবির এই লড়াইকে শুধু দিল্লির রাজপথেই নয়, দেশজুড়ে ছড়িয়ে দিতে চাইছে। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই ইস্যু জাতীয় রাজনীতিতে বড় আলোচ্য হয়ে উঠবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।