বাংলা হান্ট ডেস্ক: গত সপ্তাহে পাকিস্তানের (Pakistan) বিদেশমন্ত্রী ইশাক দারের (Ishaq Dar) দেওয়া একটি বিবৃতি সবাইকে অবাক করেছে। যেখানে তিনি বলেছেন যে, তার নতুন সরকার ভারতের (India) সাথে বাণিজ্যের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবে। এমতাবস্থায়, একদা ভারতকে কটাক্ষ করা পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রীর এই বক্তব্য এখন খবরের শিরোনামে রয়েছে। উল্লেখ্য যে, ভারতের সাথে বাণিজ্য শুরু করা পাকিস্তানের পক্ষে সহজ নয়। কারণ, মোদী সরকার ২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বাতিল করার পরে পাকিস্তান নিজেই অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। পাশাপাশি, পাকিস্তানি নেতারা এখনও জোর দিয়ে বলেছেন যে কাশ্মীরের পুরনো মর্যাদা পুনরুদ্ধার না করলে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করা যাবে না। এদিকে, পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ নতুন সরকার গ্রহণের পর কাশ্মীর নিয়ে খোঁচা দিয়েছেন। এমতাবস্থায়, ঠিক কি কারণে পাকিস্তান ফের ভারতের সাথে ব্যবসা শুরু করতে চায় চলুন জেনে নেওয়া যাক।
উল্লেখ্য যে, বর্তমানে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা এখন আর বিশ্বের কারোর কাছে গোপন নেই। ওই দেশ এমন আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে যে, দেশটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের বেলআউট প্যাকেজে চলছে। গত মাসেই IMF ৩ বিলিয়ন ডলারের বেলআউট প্যাকেজের তৃতীয় ও শেষ কিস্তির অনুমোদন দিয়েছে। এরপরেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে শীঘ্রই আরও ফান্ডিংয়ের প্রয়োজন হবে।
নওয়াজ শরীফের ভোটব্যাঙ্ক ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক চায়: এদিকে, ভারতের সাথে বাণিজ্য নিয়ে পাকিস্তানের অস্বস্তির একটি প্রধান কারণ নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ-এন (পিএমএলএন)। যেটি বর্তমানে পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন জোটের একটি বড় অংশ। ইশাক দার একই পিএমএলএনের নেতা। পিএমএলএন-এর ভোটারদের একটি বড় অংশ ছোট পুঁজিপতি। অন্যদিকে, এই দলের নেতারা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের মতো বড় শিল্পপতি। তাই, উভয়েরই দ্রুত উন্নয়নশীল ভারতের সাথে স্বাভাবিক বাণিজ্য সম্পর্ক বজায় রাখার সুবিধা রয়েছে এবং এই কারণে তারা বিষয়টিকে সমর্থন করছে।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার রিপোর্ট অনুসারে, ২০১৮ সালে বিশ্বব্যাঙ্ক অনুমান করেছিল যে, ভারতের সাথে বাণিজ্য সঠিকভাবে চললে পাকিস্তানের রপ্তানি ৮০ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। তখন পাকিস্তানের মোট রপ্তানি ছিল ২৫ বিলিয়ন ডলার। সঙ্কটের সাথে লড়াই করা পাকিস্তানের জন্য এটি একটি বিশাল পরিমাণ। তবে, এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার চলে যাওয়ার সামর্থ্য নেই। বিশেষ করে তাকে এখন বারবার IMF-এর কাছে এক বিলিয়ন ডলারের জন্য আবেদন করতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ১ টাকা বেতন নিয়েও ইনিই হলেন দেশের সবথেকে ধনী IAS অফিসার! মোট সম্পদের পরিমাণ জানলে ভিরমি খাবেন
পাকিস্তানের দরকার, ভারতের নয়: বিষয়টি হল পাকিস্তানের ভারতকে যতটা প্রয়োজন ভারতের সেই প্রয়োজনীয়তা নেই। ভারতীয় অর্থনীতি স্থিতিশীল এবং ভারত অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে তার বাজার খুলতে খুব বেশি আগ্রহী নয়। যারা স্থানীয় উৎপাদকদের ব্যবসা থেকে বের করে দিতে পারে। ২০১৮ সালে, ভারত পাকিস্তান থেকে প্রায় ৫৪.৫ কোটি ডলারের আমদানি করেছে।
আরও পড়ুন: হার মানবে সিনেমাও! ১২ লক্ষের লোন মেটাতে কিডনি বিক্রি করলেন যুবক
ভারতের অর্থনীতি পাকিস্তানের চেয়ে ১০ গুণ বড়: জানিয়ে রাখি যে, ১৯৭০-এর দশকে পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় ছিল ভারতের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। আজ ভারতের মাথাপিছু আয় তার থেকে ৫০ শতাংশ বেশি। তাই, ইসলামাবাদকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। পাশাপাশি, কিভাবে এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করা যাবে সেদিকেও নজর রাখতে হবে। এদিকে, পাকিস্তানকে তার দেশের সন্ত্রাসবাদীদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যারা এই আলোচনার সম্ভাব্য পথকে লাইনচ্যুত করতে পারে।