বাংলাহান্ট ডেস্ক: এখন বিয়ের মরশুম। চারদিকে বিয়ের নিমন্ত্রণপত্র, সাজগোজ আর উৎসবের আমেজ। কিন্তু এই পরিচিত ছবির মাঝেই পাকিস্তানে (Pakistan) উঠে আসছে একেবারে ভিন্ন ধারা। সেখানে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ‘ভুয়া বিয়ে’-র ট্রেন্ড। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও, এই বিয়ের আয়োজন দেখতে একেবারেই আসল বিয়ের মতো। ঝলমলে সাজসজ্জা, ফুলে মোড়া মঞ্চ, মেহেন্দি, গান-বাজনা ও নাচ—সবকিছুই থাকে। তবু কোথাও নেই আসল বিয়ের শপথ বা আজীবন একসঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি।
পাকিস্তানে (Pakistan) রমরমিয়ে চলছে ফেক ওয়েডিং:
এই ভুয়া বিয়ের সবচেয়ে চমকপ্রদ দিক হল, এখানে বর সাধারণত একজন নারী। তবে এটি কোনও সমকামী বিবাহ নয়। মূলত এটি একটি সংগঠিত সামাজিক অনুষ্ঠান, যেখানে মহিলারা একত্রিত হয়ে বিয়ের আনন্দ উপভোগ করেন, কিন্তু বিবাহের আইনি বা ধর্মীয় দায়বদ্ধতা ছাড়াই। সামাজিক চাপ, পারিবারিক প্রশ্ন বা ভবিষ্যৎ প্রতিশ্রুতি ছাড়াই বিয়ের অনুষ্ঠান উপভোগ করাই এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য (Pakistan)।
আরও পড়ুন:তাড়াহুড়োয় ট্রেন মিস, ওই টিকিটে সফর করা যাবে অন্য ট্রেনে? কী বলছে রেলের নিয়ম?
২০২৩ সাল থেকে পাকিস্তানে (Pakistan) এই ভুয়া বিয়ের প্রবণতা চোখে পড়ার মতোভাবে বেড়েছে। সেই বছর লাহোর ইউনিভার্সিটি অফ ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস (LUMS)-এ আয়োজিত একটি ভুয়া বিয়ের অনুষ্ঠান সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয় সেই ভিডিও। এরপর থেকেই শহুরে তরুণ সমাজ এবং প্রভাবশালীদের মধ্যে এই ধরনের আয়োজন দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সাজসজ্জা, গয়না, অতিথি আপ্যায়ন—সবই থাকে, শুধু থাকে না বর-কনের মধ্যে কোনও স্থায়ী সম্পর্কের অঙ্গীকার।
তবে জনপ্রিয়তার পাশাপাশি এই প্রবণতা ঘিরে বিতর্কও কম নয়। এই ধরনের অনুষ্ঠানের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর বহু শিক্ষার্থী অনলাইন ট্রোলিংয়ের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন LUMS-এর প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের সভাপতি সাইরাম এইচ. মীরান। তাঁর বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে এ ধরনের আয়োজন মূলত বিনোদন এবং সামাজিক মিলনের একটি গ্রহণযোগ্য মাধ্যম হিসেবে দেখা হচ্ছে। সমালোচকেরা একে সংস্কৃতির বিকৃতি বললেও, সমর্থকদের মতে এটি তরুণদের জন্য চাপমুক্ত আনন্দের সুযোগ।

আরও পড়ুন:২৪ ঘণ্টায় বদলে যাবে আবহাওয়া! দক্ষিণবঙ্গে নয়া টুইস্ট, আগামী সাত দিনের আবহাওয়ার আগাম খবর
বিশেষ করে মহিলাদের কাছে এই ভুয়া বিয়ের আকর্ষণ বেশি। সামাজিক নজরদারি বা বিয়ের পরবর্তী দায়বদ্ধতা ছাড়াই তাঁরা মেহেন্দি, গান আর নাচের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। হুনার ক্রিয়েটিভ মার্কেটের প্রতিষ্ঠাতা রিদা ইমরান জানিয়েছেন, শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য আয়োজিত এই ধরনের অনুষ্ঠানে তাঁরা ঐতিহ্যবাহী মেহেন্দি অনুষ্ঠানের আনন্দ ফিরিয়ে আনতে চান। উল্লেখ্য, পাকিস্তানে বিয়ে অত্যন্ত ব্যয়বহুল একটি বিষয় এবং বিয়েকে ঘিরে প্রায় ৯০০ বিলিয়ন পাকিস্তানি রুপির শিল্প গড়ে উঠেছে। সেই প্রেক্ষাপটে ভুয়া বিয়ে কেউ দেখছেন সামাজিক পরীক্ষানিরীক্ষা হিসেবে, আবার কেউ দেখছেন নতুন সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তির পথ হিসেবে।












