চরম সঙ্কটে কাঙাল পাকিস্তান! পেট চালাতে এবার যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে পড়শি দেশ… জানলে অবাক হবেন

Published on:

Published on:

Pakistan is taking this step to reduce poverty.
Follow

বাংলাহান্ট ডেস্ক: পাকিস্তানের (Pakistan) সরকারি বিমান সংস্থা পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স (PIA) এবার বেসরকারিকরণের পথে, আর সেই প্রক্রিয়ায় সংস্থাটি সেনার হাতে যেতে পারে বলে জোর জল্পনা তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার IMF–এর শর্ত পূরণ করে ঋণ পাওয়া নিশ্চিত করতে পাকিস্তান সরকার দ্রুত PIA বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বুধবার ইসলামাবাদে সম্ভাব্য ক্রেতাদের সঙ্গে বৈঠকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ঘোষণা করেন যে চলতি বছর ২৩ ডিসেম্বর PIA-র নিলাম অনুষ্ঠিত হবে এবং এই নিলাম সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। বহু দশকের পুরোনো এই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে বিক্রি করা পাকিস্তানের ইতিহাসে একটি বড় অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সরকারি এয়ারলাইন্স বেচতে চলেছে পাকিস্তান (Pakistan):

সরকারের বেসরকারিকরণ মন্ত্রী মহম্মদ আলি জানিয়েছেন, এই অর্থবছরে বেসরকারিকরণের মাধ্যমে ৯৬ কোটি টাকা আয়ের পরিকল্পনা রয়েছে। PIA-র ক্ষেত্রে সরকারের হাতে মাত্র ১৫ শতাংশ শেয়ার থাকবে, বাকিটা বেসরকারি সংস্থার কাছে তুলে দেওয়া হবে। ডন পত্রিকার রিপোর্ট বলছে, PIA বিক্রি হলে দু’দশকের মধ্যে পাকিস্তানের (Pakistan) প্রথম বড় কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের বেসরকারিকরণ সম্পন্ন হবে। নিলামে চারটি সংস্থা অংশ নিচ্ছে—লাকি সিমেন্ট কনসোর্টিয়াম, আরিফ হাবিব কর্পোরেশন কনসোর্টিয়াম, এয়ার ব্লু লিমিটেড এবং ফৌজি সার কোম্পানি লিমিটেড। এর মধ্যে ফৌজি সারকে ঘিরেই সেনার প্রভাবের কারণে চর্চা বেশি, কারণ এটি পাকিস্তানের শক্তিশালী সামরিক কর্পোরেট ফৌজি ফাউন্ডেশনের অংশ।

আরও পড়ুন: উত্তরপ্রদেশে রোহিঙ্গা-বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের রুখতে কড়া পদক্ষেপ যোগীর! শুরু বিশেষ অভিযান

ফৌজি ফাউন্ডেশন পাকিস্তানের অন্যতম প্রভাবশালী কর্পোরেট শক্তি, যার সঙ্গে দেশের সামরিক বাহিনীর গভীর যোগসূত্র রয়েছে। সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির সরাসরি ফৌজি ফাউন্ডেশনের পরিচালনা পর্ষদে না থাকলেও, সেনাবাহিনীর প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা ও নিয়োগের অধিকার ব্যবহার করে তিনি সংগঠনটির উপর পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখেন। সেনাবাহিনীর কোয়ার্টারমাস্টার জেনারেল ফৌজি ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় পরিচালনার মূল দায়িত্বে থাকেন, যা নির্দেশ করে যে PIA বেসরকারিকরণের পর সংস্থাটি পরোক্ষভাবে সামরিক প্রভাবাধীন হতে পারে। পাকিস্তানের (Pakistan) অর্থনীতি, রাজনীতি এবং কর্পোরেট কাঠামো—সব ক্ষেত্রেই সেনাবাহিনীর প্রভাব দীর্ঘদিন ধরেই প্রবল।

এই বিক্রয় প্রক্রিয়ার মূল লক্ষ্য IMF–এর ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচি পূরণের শর্তগুলিকে সহজ করা। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অনুমোদিত এই প্যাকেজের অংশ হিসেবে পাকিস্তান (Pakistan) ইতিমধ্যেই ১ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে, বাকিটা তিন বছরের মধ্যে কিস্তিতে দেওয়া হবে। IMF বারবার পাকিস্তানকে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকে পুনর্গঠন ও বেসরকারিকরণের পরামর্শ দিয়ে এসেছে। ক্রমাগত লোকসান, বিপুল ঋণের বোঝা এবং দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে PIA–কে অর্থনীতির জন্য বড় বোঝা হিসেবে দেখা হচ্ছিল, তাই সংস্থাটি বিক্রি করা ছাড়া সরকারের সামনে তেমন বিকল্প ছিল না।

Pakistan is taking this step to reduce poverty.

আরও পড়ুন: টিভি দেখে পান আইডিয়া! অভিনব পদ্ধতিতে চাষ শুরু করে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন ধীরজের

পাকিস্তানের (Pakistan) অর্থনীতি গত কয়েক বছর ধরেই ভয়াবহ সংকটে ভুগছে—মুদ্রাস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি, ঋণের চাপ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশটিকে আরও দুর্বল করে তুলেছে। ১৯৫৮ সাল থেকে আজ পর্যন্ত পাকিস্তান IMF থেকে ২০টিরও বেশি ঋণ নিয়েছে, যা দেশটির দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক সমস্যাকে বারবার তুলে ধরে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের জাতীয় বিমান সংস্থাকে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত অনেকের কাছে সাহসী হলেও, বিশেষজ্ঞদের মতে এটি পাকিস্তানের অর্থনীতি স্থিতিশীল করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। তবে সেনার পরোক্ষ প্রভাব PIA–র ভবিষ্যৎ পরিচালনায় নতুন বিতর্ক এবং রাজনৈতিক উত্তাপ সৃষ্টি করতে পারে বলেও মত বিশ্লেষকদের।