ভারতের এই বিশেষ বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার চেষ্টা পাকিস্তানের! কী পরিকল্পনা পড়শি দেশের?

Published on:

Published on:

Pakistan is trying to deepen relations with this special friend of India.
Follow

বাংলা হান্ট ডেস্ক: এবার একটি বড় আপডেট সামনে এসেছে। এই প্রসঙ্গে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, আর্মেনিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর, পাকিস্তান এবার ইয়েরেভানে তাদের দূতাবাস স্থাপনের জন্য আর্মেনিয়ার সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছে। দ্য ইকোনমিক টাইমসের একটি রিপোর্ট অনুসারে, আর্মেনিয়া এবং পাকিস্তানের কূটনীতিকরা আগামী বছর দূতাবাস খোলার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন। এদিকে, মনে করা হচ্ছে যে, পাকিস্তানের এই পরিকল্পনা সফল হলে এটি ভারতের (India) জন্য একটি সতর্কবার্তা হবে। কারণ, কাশ্মীর ইস্যুতে আর্মেনিয়া সবসময় ভারতকে সমর্থন করে এসেছে। তাছাড়া, আর্মেনিয়ার পাকিস্তান এবং তুরস্কের আরও কাছাকাছি যেতে পারে এবং সম্পর্কও গভীর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ভারতের (India) বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার চেষ্টা পাকিস্তানের!

আর্মেনিয়া ও পাকিস্তানের মধ্যে নতুন সূচনা: আর্মেনিয়ার বিদেশ মন্ত্রকের সরকারি প্রতিক্রিয়া অনুসারে, আর্মেনিয়া ও পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের একটি যৌথ ইশতেহার স্বাক্ষরিত হয়েছে। যেখানে আর্মেনিয়া এবং পাকিস্তান সরকার কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে প্রতিনিধি বিনিময় এবং একে অপরকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানে সম্মত হয়েছে। জানিয়ে রাখি যে, আর্মেনিয়া এবং পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় ৩১ অগাস্ট। সূত্রগুলি এতকে জানিয়েছে যে, ইয়েরেভানে পাকিস্তানি দূতাবাসের উপস্থিতির অর্থ এই নয় যে আর্মেনিয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাকিস্তানপন্থী নীতি গ্রহণ করবে। এদিকে, ভারত এই ঘটনা প্রবাহ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। এমনিতেই, আর্মেনিয়া সবসময় কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতকে সমর্থন করেছে এবং কয়েক বছর আগে ভারত আর্মেনিয়ায় প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রফতানিও শুরু করেছে।

Pakistan is trying to deepen relations with this special friend of India.
ভারত ও আর্মেনিয়ার জাতীয় পতাকা

ইন্টারন্যাশনাল নর্থ সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডোরের বিবেচনা: নবভারত টাইমসের একটি রিপোর্ট অনুসারে, যদি পাকিস্তান আর্মেনিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে, তাহলে ভারতেরও ইন্টারন্যাশনাল নর্থ সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডোরের কথা বিবেচনা করতে পারে। আর্মেনিয়া এবং ইরানের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার অংশ হিসেবে ভারত ইন্টারন্যাশনাল নর্থ সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডোরের দিকে নজর দিতে পারে। এটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ‘জাঙ্গেজুর করিডোর’ সম্প্রতি অনেক আলোচিত হয়েছে। এটি একটি প্রস্তাবিত পরিবহণ রুট। যা আজারবাইজানকে তার প্রত্যন্ত নাখচিভান স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করবে। এই রুটটি আর্মেনিয়ার সিউনিক প্রদেশকে বাইপাস করে এবং ভবিষ্যতে তুরস্ককে ইউরেশিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারে। আমেরিকা এই করিডোরটি কাজে লাগাবে। এই বিষয়টি ইরান এবং রাশিয়া উভয়কেই উদ্বিগ্ন করছে। উল্লেখ্য যে, আর্মেনিয়া কয়েক দশক ধরে কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের সমর্থক হলেও আজারবাইজান এবং তুরস্ক এই ইস্যুতে পাকিস্তানের পক্ষে রয়েছে।

আর্মেনিয়া আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেমের ক্রেতা: জানিয়ে রাখি যে, oc-media.org-র মতে, সাম্প্রতিক অস্ত্র বিক্রি, বিশেষ করে আকাশ-১এস ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেমের রফতানি সহ আর্মেনিয়ার সঙ্গে ভারতের ক্রমবর্ধমান সামরিক-প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ক্রমশই আলোচিত হচ্ছে। ২০২২ সালে আর্মেনিয়া ১৫ টি আকাশ সিস্টেমের জন্য প্রায় ৭২০ মিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বলে জানা গেছে। যেটির মাধ্যমে তারা এই প্ল্যাটফর্মের প্রথম বিদেশি ক্রেতা হয়ে ওঠে। ভারত ২০২৪ সালের নভেম্বরে এই সিস্টেমের প্রথম ব্যাটারি পাঠিয়েছিল এবং ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে দ্বিতীয় চালানের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: এই একটা কারণেই বিরাট পতন শেয়ার বাজারে! ৭.৫০ লক্ষ কোটির ক্ষতি বিনিয়োগকারীদের

এদিকে, রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা কমাতে ভারতের সাথে চুক্তি বিমান প্রতিরক্ষার পাশাপাশি, ভারত আর্মেনিয়াকে তার পিনাকা মাল্টি-লঞ্চ রকেট সিস্টেমও সরবরাহ করেছে। পিনাকা সিস্টেমটি দীর্ঘ পাল্লার আঘাত হানতে সক্ষমতা প্রদান করে। এদিকে, ভারতের সঙ্গে সহযোগিতায় আর্মেনিয়া তার স্থল ও কামানের আধুনিকীকরণের বৃহত্তর প্রচেষ্টা করছে।
কৌশলগতভাবে, আর্মেনিয়ায় ভারতের বর্ধিত রফতানিকে প্রতিরক্ষা কূটনীতির মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী প্রভাব বৃদ্ধির প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দেখা হয়। যদিও, আর্মেনিয়ার জন্য এটি অস্ত্র সরবরাহের উন্নত ও বৈচিত্র্যময় উৎসগুলিতে প্রবেশ এবং রাশিয়ান সরবরাহ শৃঙ্খলের ওপর নির্ভরতা হ্রাস করার দিকে একটি পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

আর্মেনিয়া ইউরেশিয়ার একট কৌশলগত অংশীদার: ভারত এবং আর্মেনিয়ার মধ্যে গভীর ঐতিহাসিক এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। যা সম্প্রতি কৌশলগত প্রতিরক্ষা সহযোগিতার মাধ্যমে আরও জোরদার হয়েছে। বিশেষ করে আর্মেনিয়া যখন পাকিস্তান এবং তুরস্ক সমর্থিত আজারবাইজানের হুমকি মোকাবেলায় ভারতীয় অস্ত্র (যেমন আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র) কিনেছিল তখন এটি স্পষ্ট হয়েছে। এই অংশীদারিত্ব প্রতিরক্ষার বাইরেও বাণিজ্য (ISTC করিডোর), প্রযুক্তি, শক্তি এবং সংস্কৃতি পর্যন্ত বিস্তৃত। যেখানে আঞ্চলিক চাপের বিরুদ্ধে অংশীদারদের বৈচিত্র্য আনার জন্য আর্মেনিয়া ভারতের সমর্থন চেয়েছে। এদিকে, ভারতও ইউরেশিয়ায় একটি কৌশলগত অংশীদার পেয়েছে।

আরও পড়ুন: বড় খবর! ১৫ ডিসেম্বর থেকে পরিবর্তিত হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম, এই সরকারি কর্মচারীরা হবেন উপকৃত

১৯৯২ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়: ভারত ও আর্মেনিয়ার মধ্যে প্রাচীনকাল থেকেই সম্পর্ক রয়েছে। যা মুঘল আমলে আরও সমৃদ্ধ হয়েছিল। আর্মেনিয়ার ব্যবসায়ীরা কলকাতা এবং চেন্নাইতে গির্জা নির্মাণ করেছিলেন। এদিকে, এই দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় ১৯৯২ সালে। ২০২২ সালে এই সম্পর্কের ৩০ তম বার্ষিকী ছিল।